আখতার উজ জামান
কবি, লেখক, প্রকাশক এবং পাঠকদের কাছে বইমেলা এক মিলনমেলা। গ্রন্থমেলায় জড়ো হতে থাকে দুর-দুরান্তের চেনা মুখগুলি। ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি পার হলে ভাঙে এ মিলন মেলা। বইমেলা আমাদের অন্তরে যে বন্ধন তৈরি করে তা ভাঙে না কখনই। দেশের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে। অনুপ্রেরণা জোগায়। স্মৃতিবাহী একুশের ঐতিহ্যের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনা ও তরুণ প্রজন্মকে সঠিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাঙ্গালী জাতীয়তাবোধকে আরো বেশী করে মনে রাখার জন্য আজকের এই অমর একুশের গ্রন্থমেলা।
শুধু আমাদের দেশে নয় পৃথিবীর অনেক দেশেই আজ আমাদের মাতৃভাষাকে স্মরণীয় রাখার জন্য মহান একুশে বই মেলা পালন করে থাকে। যার স্মৃতিতে আজ হয়তো সেই ভাষা সৈনিক সালাম, জব্বর, রফিক, বরকতের মতো ত্যাগী সন্তানেরা- যাদের রক্তের বিনিময় আজকের এই মায়ের ভাষায় আমরা কথা বলতে পারি। আর এই ভাষাকে ইতিহাসে স্মরণীয় করার জন্যই আজকের এই মহান একুশে বই মেলা। অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্য, আত্মকথা, আবজাব, ইতিহাস, ইসলামিক, গল্প, টিপস ও ট্রিকস, তামাশা, দৈনন্দিন, বাস্তবতার রূপ রেখাকে দালিলিকভাবে রাখার জন্য এই গ্রন্থমেলার আয়োজন।
বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের সাথে আমার একটি মত সেটি হল কেবল বই প্রকাশ নয়, ভালো বই প্রকাশের দিকে মনোযোগ দিতে হবে যাতে আজকের তরুণ প্রজন্মরা যেন ভালো শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে আরও বেশী অনুপ্রাণীত হচ্ছে একুশে বই মেলার কার্যক্রম। যার প্রেক্ষিতে আমাদের দেশের ন্যায় বিশ্বের কয়েকটি দেশেও আমাদের এই মাতৃভাষাকে মূল্যায়ন করা হয়। সত্যিই অন্যরকম স্বাধ মহান একুশের বই মেলা। বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি প্রতিবছর সৃজনশীল পাঠক ও লেখকের সুদৃঢ় বন্ধন করে থাকে একুশে বই মেলার মাধ্যমে।
নতুন প্রজন্মকে বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় বাংলা একাডেমির এ আয়োজন। শুরু হওয়ার পর থেকে অমর একুশে বইমেলা বাংলার আপামর জনতার কাছে প্রাণজোয়ার সৃষ্টিকারী এক মেলায় পরিনত হয়েছে। শহীদ তোমাদের আবার শ্রদ্ধা ভরে সালাম জানাই যে, তোমাদের ত্যাগের বিনিময় আমাদের আজকের এই বই মেলাকে আরো বেশী আলোকিত করে তুলবে। গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে উদযাপন করে আসছে বিশ্বের দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা অমর একুশে বই মেলা। আর বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এই মেধা বিকাশের প্রাণের মেলাটি উৎসর্গ করা হয় মহান ভাষা আন্দোলনের বীর শহিদদের স্মৃতিকে লালন করে।
গ্রন্থমেলার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। বাঙালী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ‘অমর একুশে বইমেলা’ আবার কবে ফিরে আসবে এই অপেক্ষায়। শিক্ষাই জাতির আলো। আর এই শিক্ষার আলোকে আরও বিকশিত করার জন্যই আজ আমাদের স্বাধীন ও স্বার্বভৌম বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি, প্রেক্ষাপট, ভাষা শহীদদের নাম সে সময়কার সংগ্রামী রাজনীতিবিদের নাম এবং গণমাধ্যমে ভূমিকা সম্পর্কে আজকের প্রজন্ম স্পষ্ট ধারণা পায়।
গ্রন্থমেলা আমাদের সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে সারা বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করে। একুশে বই মেলার নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শিশু প্রতিভার বিকাশ ও সাহিত্যবোধ সৃষ্টি হয়। বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন প্রতিরোধেও বই মেলার ভূমিকা অনস্বীকার্য। পরিচয় করিয়ে দেয় আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে এই একুশে বই মেলার কারণে। যুব সমাজের মধ্যে বাংলার রূপ, রস ও গন্ধের ছোঁয়া মেলে। দেশব্যাপী এ মেলার আয়োজন আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবে। তাই প্রতিবছর এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাঙালির শত বৎসরের সংগ্রামের ইতিহাস জাতির সামনে ভেসে উঠবে। বই মেলার শিক্ষা, সংস্কৃতি ও চেতনাবোধ বাংলাদেশের সাড়ে ষোল কোটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক। সভ্যতার বিকাশ ঘটুক। অপসংস্কৃতি ও অপরাজনীতি পথ পরিহার হোক।
বাংলাদেশে বইমেলার উদ্ভবের ইতিহাস খুবই কৌতূহলোদ্দীপক। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদদীন প্রথম বাংলা একাডেমীর প্রান্তরে বই মেলার আয়োজন করেন। ষাটের দশকের প্রথম দিকে তিনি গ্রন্থ’কেন্দ্রের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। জয়েনউদদীন যখন বাংলা একাডেমিতে ছিলেন, তখন এখানে প্রচুর বিদেশি বই সংগৃহীত হতো। এর মধ্যে একটি বই ছিল Wonderful World of Books এই বইটি পড়তে গিয়ে তিনি হঠাৎ দুটি শব্দ দেখে পুলকিত বোধ করেন। শব্দ দুটি হলো: ‘Books’ এবং ‘Fair’. কত কিছুর মেলা হয়। কিন্তু বইয়েরও যে মেলা হতে পারে এবং বইয়ের প্রচার-প্রসারের কাজে এই বইমেলা কতটা প্রয়োজনীয়, সেটি তিনি এই বই পড়েই বুঝতে পারেন।
আমার দৃষ্টিতে যা বুঝলাম, এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম বইমেলা। এটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬৫ সালে। ১৯৭২ সালে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানে কোনো বইমেলা হয়নি। তবে বাংলা একাডেমির দেয়ালের বাইরে স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্স রুহুল আমিন নিজামী তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রগতি প্রকাশনীর কিছু বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন। তাঁর দেখাদেখি মুক্তধারা প্রকাশনীর চিত্তরঞ্জন সাহা এবং বর্ণমিছিলের তাজুল ইসলামও একইভাবেই তাঁদের বই নিয়ে বসে যান। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একটি বিশাল জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
যা-ই হোক আজকের এতো সুন্দর সাজানো, গোছানো যে বইগুলো দেখতে পাই তার পরবর্তী মূলে যিনি রয়েছেন জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এই বই মেলা যেটি আজকের অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করেন। সে উপলক্ষে নিজামী, চিত্তবাবু এবং বর্ণমিছিলসহ সাত-আটজন প্রকাশক একাডেমির ভেতরে পূর্ব দিকের দেয়ালঘেঁষে বই সাজিয়ে বসে যান। সে বছরই প্রথম বাংলা একাডেমির বইয়েরও বিক্রয়কেন্দ্রের বাইরে একটি স্টলে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। এভাবেই বিচ্ছিন্ন বই বিক্রির উদ্যোগের ফলে ধীরে ধীরে বাংলা একাডেমিতে একটি বইমেলা আয়োজনের জন্য গ্রন্থ’মনস্ক মানুষের চাপ বাড়তে থাকে।
১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা সাহেব যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, তখন তিনি বাংলা একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন সম্পন্ন করেন। সে সময় এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে দুজন ছাত্র নিহত হয়। ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর সেই বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়। এরপর প্রতিবছর বইমেলা বিশাল থেকে বিশালতর আকার ধারণ করে। মেলা উপলক্ষে বিপুল বই প্রকাশিত হয়। বলা চলে এই মেলা উপলক্ষ করেই বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গেছে। আজকের এই মেলায় মানুষের আগ্রহ এতই বেশি যে শুধু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকেও গ্রন্থপ্রেমী বাঙালিরা এতে অংশ নেন। কিন্তু বাংলা একাডেমির ভেতরে অনেক নতুন ভবন এবং অবকাঠামো তৈরি হওয়ার ফলে এখানে জায়গা সংকুলন হচ্ছে না। তাই বইমেলার পরিসর বাড়িয়ে এর একটি বড় অংশকে গত বছর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেয়া হয়। এর ফলে অমর একুশের স্মৃতিবাহী এই মেলাটির ঐতিহ্যের বিস্তার ঘটে। যে মেলা একুশের মহান ঐতিহ্যকে ধারণ করে এত বিশাল আকার ধারণ করেছে, তা এখন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলস্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও সম্প্রসারিত হচ্ছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং একাডেমি সম্মুখস্থ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দুই প্রান্তেই বইমেলা থাকবে। তবে উন্নয়ন সংস্থা, গণমাধ্যমসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার স্টল থাকবে বাংলা একাডেমিতে। এছাড়া প্রকাশনা স্টল রয়েছে উদ্যানে।
দীর্ঘ ১১ মাসের প্রতীক্ষা শেষে কাল শুরু হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন মাসব্যাপী এ বইমেলা। ইতিমধ্যেই মেলাকে সামনে রেখে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে সব প্রস্তুুতি। মেলার ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ পরিসরে বসবে এবারের বইমেলা। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় পাঁচ লাখ বর্গফুট জায়গায় এবারের বই মেলার আয়োজন। মেলায় কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না দর্শনার্থীরা। এ ছাড়া এবার যেকোনো নতুন বই মেলায় এলে বাংলা একাডেমি তা যাচাই-বাছাই করে দেখবে। এবার মেলা চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। সেই সঙ্গে মেলার পাশাপাশি ২২ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ আটটি দেশের ১৫ জন কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবী অংশ নেবেন। সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ফ্রান্স, স্পেন, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ আটটি দেশের ১৫ জন কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবী অংশ নেবেন।
এছাড়া ২ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। এবারের মেলার বাংলা একাডেমি চত্বর উৎসর্গ করা হয়েছে মরহুম কথাসাহিত্যিক শওকত আলীকে। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১২টি চত্বরের মধ্যে থাকবে শহীদ আলতাফ মাহমুদ চত্বর, সব্যসাচী লৈখক সৈয়দ শামসুল হক চত্বর, অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ চত্বর, শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেন চত্বর, শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহ চত্বর, শহীদ নূর হোসেন চত্বর, শহীদ মুনীর চৌধুরী চত্বর, শহীদ আসাদ চত্বর, শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা চত্বর, লোকশিল্পী রমেশ শীল চত্বর, ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক আবদুল হাই চত্বর।
এবারের মেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় পাঁচ লাখ বর্গফুট জায়গায় গড়ে উঠবে বই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। বৃষ্টিসহ অন্যান্য প্রতিকূল পরিবেশ মাথায় রেখে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই পরিসরটা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। প্রায় এক লাখ বর্গফুট এলাকায় ইট ও বালু দিয়ে অস্থায়ী রাস্তা/উন্মুক্ত প্রান্তর করা হয়েছে।
পাঁচ ভাষা শহীদের নামে তৈরি করা হচ্ছে চত্বর। মাসব্যাপী মেলায় এবার অংশ নেবে সাড়ে পাঁচশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি মেলার নান্দনিকতার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেলেন চারজন। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে কবিতায় কাজী রোজী, কথাসাহিত্যে মোহিত কামাল, প্রবন্ধ ও গবেষণায় সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে আফসান চৌধুরী এ পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে প্রবর্তিত বাংলা একাডেমি পুরস্কার দশটি বিষয়ে প্রদান করা হয়। এ বছর অনুবাদ, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ, নাটক এবং শিশুসাহিত্যে কাউকে এ পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হয়নি।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ও লেখকদের হাতে দুই লাখ টাকা, সনদপত্র ও স্মারক তুলে দেয়া হবে। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৪ লক্ষ বর্গফুট জায়গায় মেলার পরিধি। এখানে ১৫টি প্যাভিলিয়ন ও ৪০৯টি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানভেদে বই এর উপর ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়া হবে। মূল মেলা প্রাঙ্গণে ১ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। ওই সম্মেলনে দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট লেখক-বুদ্ধিজীবীকে ‘আর্ন্তজাতিক সাহিত্য সম্মেলন লেখক সম্মাননা ২০১৯’ প্রদান করবে বাংলা একাডেমি।
এতে দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও বুদ্ধিজীবী অংশগ্রহণ করবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে মেলা প্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। এবারই প্রথম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নতুন বিন্যাসে অধিকাংশ স্টল পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে আনা হয়েছে। প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার জন্য টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের মূল প্রবেশ পথে এলইডি মনিটর থাকবে। শিশুকর্নারে শিশুদের খাবারের জন্য ‘মাতৃদুগ্ধ সেবাকেন্দ্র’ চালু করা হবে।
সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্তৃপক্ষ গ্রন্থমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্যন্দ্রের সর্বশেষ খবরা খবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করবে। ওয়াইফাই সুবিধা থাকবে মেলার উভয় অংশে।এই স্থান থেকেই ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বাঙালির মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন। এখানেই রয়েছে স্বাধীনতাস্তম্ভ এবং শিখা চিরন্তন। আরও আছে মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল ও স্বাধীনতা-জাদুঘর। তাই বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যা, তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা এই মহান অমর একুশে বই মেলার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে উধিত হলো বাঙ্গালী জাতির মমত্ববোধ আর জাতিসত্তার আরেকটি অধ্যায়।
মাসব্যাপী অমর একুশে বই মেলার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের সাহসী কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চোখে ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রেরণা দেয়, প্রতিবাদের ভাষা শেখায় এই মাস আর বিজয়ের পথ দেখায় এই ফেব্রুয়ারী মাস বিশ্ববাসীর কাছে বাংলা ভাষাকে পৌঁছে দিতে অনুবাদ সাহিত্যের উপরও জোর দিতে বলে প্রধানমন্ত্রী আরও আহবান জানিয়েছেন শিশু সাহিত্য প্রকাশে লেখক ও প্রকাশকদের প্রতি। ১৯৫২’র ভাষা লড়াইয়ের কালজয়ী স্বাক্ষী হচ্ছে আজকের সাড়ে ষোল কোটি বাঙ্গালী জাতির জন্য অমর একুশে বই মেলা। খ্যাতমান লেখক-লেখিকার পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের কিংবা উদীয়মান কবি, লেখক, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিকদেরকে বেশী করে উৎসাহ উদ্দীপনা যোগাতে প্রতিবারের ন্যায় এবারও এই একুশের বই মেলার আয়োজন।
লেখক : সাংবাদিক, কবি ও গবেষক।