পলিটিক্যাল ডেস্ক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে প্রথম বক্তব্যেই কয়রা-পাইকগাছার অসহায়, বঞ্চিত, নিপিড়ীত মানুষের কথা বলেছেন খুলনা-৬ আসনের এমপি মো. রশীদুজ্জামান । লবণ পানির কথা বলেছেন, জনগণের অধিকার ও তাদের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ ও ভুক্তভোগী মানুষের কথা বলেছেন। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য মহান সংসদ অধিবেশনে ১১ মিনিট ২৯ সেকেন্ড বক্তব্যে তিনি বলেছেন, আমি এ মহান সংসদে আল্লাহ পাকের নাম স্মরণে শতাব্দীর মহানায়ক জাতীর জনক বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিবর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিবসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায়। নিরাপত্তা প্রকোষ্ঠের মধ্যে যে জাতীয় চার নেতাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল আমি তাদের শ্রদ্ধা জানায়। এ দেশের স্বাধীনতা ও স্বাধীকার আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদেরকে শ্রদ্ধা জানায়। শ্রদ্ধা জানায়, এ দেশের দুই লক্ষ সম্ভ্রম হারানো মা বোনদের প্রতি। গত ৩০ জানুয়ারী এ মহান সংসদে রাষ্ট্রপতি কৃর্তক ১৪৩ পৃষ্ঠা যুগান্তকারী তথ্য সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক সমউপযোগী দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্যের উপর তাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য যে প্রস্তাব আনা হয়েছে সেটিকে অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে মহান সংসদে দাঁড়িয়ে দুটি কথা বলার জন্য মহান সৃষ্টার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। দ্বাদশ এ মহান সংসদে আপনি স্পীকার নির্বাচিত হওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় ১৭কোটি মানুষের মানবতার মা আমার নেত্রী, যিনি স্ব-মহিমায় দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ব নেতৃত্বে পরিণত হয়েছেন, সেই মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানায়। আমি ছিলাম রাজনীতিতে হারিয়ে যাওয়া একজন মানুষ। জননেত্রী কিভাবে আমাকে খুঁজে পেয়েছেন সেটা আমার কাছে এক গভীর বিস্ময়। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার মধ্যে দিয়ে একটি বিষয় প্রমাণ করেছেন। দেশের কোন কিছু নেত্রীর অগচরে নাই। তৃণমৃলের যে সকল ত্যাগী নেতারা ভীড়ের চাপে হারিয়ে যেতে বসেছে, আমার মাধ্যমে তাদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। তারাই হয়তোবা একদিন নেত্রীর সিন্ধান্তে মনোনীত হবেন। আমি ধন্যবাদ ও কৃতঞ্জতা জানাচ্ছি, আমার নির্বাচনী এলাকা বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জনপদ খুলনা-৬, কয়রা পাইকগাছা আসনের সকল জনগণের প্রতি। যারা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আমাকে সাদরে গ্রহণ করে গত ৭ জানুয়ারী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করেছেন। এই নির্বাচনে আমাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সহযোগীতা করেছেন জাতীর জনকের ভ্রাতুষপুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপি ও শেখ সোহেল উদ্দিন। আমি তাদের কৃতঞ্জতার ঋণ স্বীকার করি। আমার নির্বাচনী এলাকা কয়রা-পাইকগাছা এ দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের শেষ জনপদ। কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশীর পর আর কোন গ্রাম নেই। আছে সুন্দরবন, আছে বঙ্গোপসাগর। এটি অফসলিও এলাকা ছিল। এখানে ২৪ ঘন্টায় ২ বার জোয়ার ও ২ বার ভাটা হয়। এই অফসলিও এলাকাকে ফসলিও এলাকা করবার জন্য জাতীর জনক শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রথম পাইকগাছাতে পর্দাপণ করেছিলেন। সেদিন ওখানকার এমএলএ ছিলেন শহীদ এম এ গফুর। তিনি এ বাঁধ নির্মাণ কাজ দেখে ফিরবার সময় আতাতায়ের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। আমি প্রয়াত এ নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিবর রহমান এ জোয়ার ভাটা এলাকার অগোছালো ভূমি ফসলি জমিতে পরিণত করবার জন্য সেদিন বাঁধ নির্মাণের উদ্বোধন করেছিলেন। সেদিনটি আজও আমাদের কাছে ঐতিহাসিক দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। কিন্তু অতি দুঃখের সাথে মহান সংসদের মাধ্যমে জানাতে বাধ্য হচ্ছি। বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিবর রহমান সেদিন যে ফসলি এলাকার সূত্রপাত করে গিয়েছিলেন। আমরা সেখান থেকে সোনার ফসল পেয়েছিলাম। ফসলে ফসলে ভরপুর হয়েছিল। খাদ্যশস্য স্বয়ংসম্পর্ণ হয়েছিল। কিন্তু অতি দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিবর রহমান যে বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন ৮০ দশকে এসে তা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। ৮০ দশকে এ দেশে ক্ষমতায় ছিল সামরিক বাহিনী। তাদেরকে আশ্রয় করে ঐ এলাকায় চলেগিয়েছিল হুন্ডাগুন্ডা বাহিনী। পুলিশ বাহিনী তাদের অনুগত। তারা যেয়ে ঐ ফসলি এলাকার অবদার বাঁধ কেটে লবণ পানি পোল্ডারের ভিতরে ঢুকিয়ে ছিল। অধিক মুনাফা লাভের আশায়। উপকূলীয় সকল এলাকার চিত্র প্রায় একই রকম। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণ পানিতে চিংড়ি চাষ ঐ জনপদের মানুষের গলার ফাঁস হয়ে আছে। লবণ পানির হাত থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত কৃষক বাঁচতে চাই। আর এ বাঁচার করুন আর্তি নিয়ে আমাকে সংসদে পাঠিয়েছেন। নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন অকুন্টু ভাবে। তারা মনের আনন্দে আমাকে ভোট দিয়েছেন। কয়রা উপজেলায় বাংলাদেশ স্বাধীন পরবর্তী অদ্যাবধি কখন নৌকা প্রতীক জেতে নাই। এবার আঁচল ভরে মহিলারা ভোট দিয়েছে। সেখানে নির্বাচনী প্রচারণায় যখন গিয়েছিলাম। তখন মা বয়সি এক মহিলা এসে আমাকে বলেছে, বাবা তুমি পাশ করবে, সংসদেও যাবে, আমি আর্শীবাদ করছি। তবে আমার একটি বার্তা তোমাকে জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তুমি বলবে, সতীনের সাথে ঘর করা যায়, কিন্তু লবণ পানির সাথে সংসার করা যায়না। আজ সেই কথাটি আমি এই মহান সংসদে দাঁড়িয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিতে পেরে আমি ঋণ মুক্ত হয়েছি। প্রিয়নেত্রী মাননীয় স্পীকারের মাধ্যমে আপনার দৃষ্টি আর্কষণ করছি। কয়রা উপজেলায় আপনি দুইবার সফর করেছেন। সেখানকার মানুষ আপনাকে দেবতার মত জানে। তারা মনে করে শেখ হাসিনা যতদিন আছে ততদিন কয়রার মানুষের দুঃখ দুর্দশায় কথা নতুন করে বলতে হবে না। যখন বঙ্গোপসাগরে গভীর নিন্মচাপ শুরু হয়। সংকটের পারদ যখন একটার পর একটা উঠতে থাকে। তখন ঐ এলাকার মহিলারা বুকের বাচ্চাটাকে বুকের মধ্যে আগলে আল্লাহ নাম নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় খাকেনা। তাদের মাত্র দুটি মূর্খ দাবী, একটি টেকসই ভেড়ীবাঁধ, আর একটি সুপেয় পানি চাই তারা। আমি মাননীয় নেত্রীর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখেই তাদের কথা দিয়েছি। তাদের কথাটি আমার রাখা দরকার। সংক্ষিপ্ত পরিসরে আমার বক্তব্যে এই, আমরা মাছ চাষের বিরুদ্ধে নই, আমরা লবণ পানিতে চিংড়ি চাষের বিরুদ্ধে। জাতীয় পার্টির আমল থেকে ঐ বাঁধের ভিতরে হাজার হাজার পাইপ ঢোকানো আছে। আর এ পাইপ দিয়ে যদি পোল্ডার অভ্যান্তরে অনাবরত পানি আসা যাওয়া করে তাহলে সেটি টেকসই ভেঁড়িবাঁধ হয় কিভাবে। আপনি একনেকে প্রায় ১১শত কোটি টাকা পাশ করে দিয়েছেন। যারমধ্যে ১৬৫ কোটি টাকা টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু কাজের গতি অত্যান্ত মন্থার। যেকোন সময় আবারো দূর্যোগ আঘাত হানতে পারে। ঐ তৃনমূলের মানুষ যে সংসার টুকু পেতেছে। তা আবার ঝড় ও জলচ্ছ্বাসে ভেসে যাবে। লবণ পানির বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট আইন তৈরী হোক। আমার বক্তব্যে এই ফসলি ও বসতি এলাকায় লবণ পানি না রেখে। লবণ পানি সাগরে থাকুক, লবণ পানি নদীতে থাকুক। ফসলি ও বসতি এলাকায় যেন লবণ পানি না ঢুকতে পারে। তার উপর একটি আইন করে দিন। তাহলে বাঁচবে প্রান্তিক চাষী, বাঁচবে কৃষক। বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চল হবে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ। উপরোক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কয়রা-পাইকগাছা মানুষের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। আওয়ামী নেতাকর্মীরা আজ উজ্জীবিত ও উচ্ছ্বসিত হয়েছে। তৎপরবর্তী সময়ে এ অবহেলিত জনপদের মানুষের কথা কেহ এমন ভাবে সংসদে উপস্থাপন করতে পারেনি। আজ তারই পরিব্যাপ্তি ঘটেছে। এজন্য কয়রা-পাইকগাছার মানুষ এমপি রশীদুজ্জামানকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।