ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
পাকিস্তানের ভোটের ফলাফল ও এরপর নানা জটিল সমীকরণ মিলিয়ে অবশেষে জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলীম লীগ (পিএমএল-এন) ও বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। পিএমএল-এন বলছে, দলীয় প্রধান নওয়াজ শরিফ নয়, এই সরকারের প্রধান হিসেবে থাকবে তার ভাই শাহবাজ শরিফ।
পাকিস্তানের নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর সরকার গঠনে তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে ছোট ছোট আরও কয়েকটি দল। ইমরানবিরোধী দুই দল ভোটে খুব বেশি সুবিধা করতে না পারলেও তারা নিজেদের স্বার্থে সরকার গঠনে এক হয়েছেন ভোটের পর। নানা নাটকীয়তার পর মঙ্গলবার অবশেষে সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে দল দুটি। সরকার গঠনে পুরোপুরি সহযোগিতা করলেও সরকারের কোনো মন্ত্রিত্ব পদে থাকতে রাজি নয় পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো।
ভোটের ফলাফলের পর তাদের সঙ্গে জোটভুক্ত বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপি বলেছে, তাদের এই চুক্তি নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এনকে সরকার গঠনে সহযোগিতা করবে। তবে, তারা কোনো মন্ত্রিত্ব পদ নেবে না।
মঙ্গলবার রাতে ইসলামাবাদে দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি নতুন জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। ওই সময় শাহবাজ শরিফও একই কথা বলেন।
এই দলগুলোই দুই বছর আগে ২০২২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠন করেছিল।
দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশে প্রথমবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন একজন নারী। তিনি পিএমএল-এন প্রধান নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ। দলটির সাবেক মন্ত্রী রানা তানবির হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ ছাড়া নওয়াজ শরিফ দলটির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে শাহবাজ শরিফকে মনোনয়ন দিয়েছেন। শাহবাজ বর্তমানে দলটির প্রেসিডেন্ট ও নওয়াজ শরিফের ভাই। এর আগের জোট সরকারে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
রায় চুরির অভিযোগ
এদিকে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) অভিযোগ করেছে, দেশের জনগণ তাদের নেতা ইমরান খানের পক্ষে রায় দিলেও সেই ‘জনরায় (ম্যান্ডেট) রাতের আঁধারে চুরি করা হয়েছে’। ইমরান খান বলেছেন, জনরায় উপেক্ষা করে ভোটচোরদের নিয়ে সরকার গঠন করা হলে দেশ আরও অস্থিতিশীলতার দিকে যাবে।
চার দলের জোট গঠনের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় পিটিআইয়ের মুখপাত্র রউফ হাসান বুধবার তার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘পাকিস্তানকে আরও অস্থিতিশীলতার পথে ঠেলে দেওয়া হলো। জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, এমন একদল অপরাধী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, দেশ এখন মারাত্মক সংকটের মধ্যে আছে।’
রউফ হাসান বলেন, ‘পাকিস্তানকে এই গভীর সংকট থেকে বের করে আনার ক্ষমতা আছে একমাত্র ইমরান খানের। তার প্রতিই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আস্থা রেখেছেন। কিন্তু তার পক্ষে দেওয়া এই জনরায় (ম্যান্ডেট) রাতের আঁধারে চুরি করা হয়েছে। এটা গণতান্ত্রিক নীতি ও মূলবোধের ওপর চরম আঘাত। অন্ধকারের শক্তিকে অবশ্যই থামাতে হবে এবং জনগণ যাদের নেতা হিসেবে নির্বাচিত করেছে, তাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’
পিটিআইয়ের সঙ্গে জোট করবে না জামায়াত-ই-ইসলামি: জামায়াত-ই-ইসলামির (জেআই) সঙ্গে জোট করে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়ার প্রাদেশিক পরিষদে সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল পিটিআই। তাদের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে জামায়াত-ই-ইসলামি।
খাইবার পাখতুনখাওয়ায় জেআইয়ের আমির মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান গত মঙ্গলবার জানান, পিটিআইয়ের সঙ্গে জোট করবে না তার দল। আর পিটিআই তাদের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করার যে কথা বলছে, তার কোনো ভিত্তি নেই।
জেআইয়ের সঙ্গে জোট করে খাইবার পাখতুনখাওয়ায় পিটিআই সরকার গঠন করছে, এমন সংবাদ মূলধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়ে দলের এ অবস্থান জানান মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান।
তিনি বলেন, ‘যেকোনো দলের সঙ্গে (জোট করে) সরকার গঠন করার অধিকার পিটিআইয়ের আছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে জামায়াতের নাম ব্যবহার করার কোনো ন্যায্যতা নেই। পিটিআইয়ের সঙ্গে কোনো ধরনের জোট করার সিদ্ধান্ত নেয়নি জেআই।’
জেআইয়ের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠনের বিষয়ে পিটিআই যে বিবৃতি দিয়েছে, তা একেবারে অযৌক্তিক ও অনৈতিক।
গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হন ইমরান খানের পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ভোট হয় ২৬৫ আসনে। একটি আসনে ফল স্থগিত হওয়ায় ২৬৪ আসনের ফল ঘোষিত হয়েছে। স্বতন্ত্র হিসেবে বিজয়ী ১০১ প্রার্থীর মধ্যে ৯২ জন পিটিআই-সমর্থিত। এ ছাড়া পিএমএল-এন ৭৫ আসনে ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৫৪ আসনে জয়ী হয়েছে। পিএমএল-এন ও পিপিপি ছাড়া আরও চারটি দল জোট করে সরকার গঠন করার ঘোষণা দিয়েছে।