একই ব্যাপার হাসান আলী ও সামিয়ার ক্ষেত্রেও। পাকিস্তানি পেসার হাসানের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন ভারতীয় সামিয়া।সামিয়া পেশায় একজন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সামিয়ার সঙ্গে হাসানের পরিচয় তার এক বান্ধবীর মাধ্যমে।
২০১৯ সালে দুবাইয়ে দুজনের বিয়ে হয়। এর পর থেকে পাকিস্তানেই আছেন সামিয়া। ২০২১ সালে সামিয়ার প্রথম সন্তানের আগমন সামনে রেখে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন তার মা। কিন্তু বিয়ের পর বাবা লিয়াকত খানের এখনো মেয়ের সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়নি, নাতনিকেও কোলে তুলে বাহুডোরে জড়াতে পারেননি।
এই অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে আগামী ১৪ অক্টোবর।
আহমেদাবাদে ভারত-পাকিস্তান মহারণের দিন। তাও কী কাকতালীভাবেই না দেখা হচ্ছে! পাকিস্তানের বিশ্বকাপের দলে ছিলেন না হাসান। শেষ মুহূর্তে নাসিম শাহর চোট এই পেসারের বিশ্বকাপ দরজা খুলে দিয়েছে। শুধু কি বিশ্বকাপ দরজা? একটি পরিবারের একত্র হওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণেরও যে সুযোগ হয়ে গেল তাতে। তা লিয়াকত কিভাবে মেনে নিলেন মেয়ের এই চাওয়া? যেখানে সীমানার এপার-ওপারের দুই দেশের মুখ দেখাদেখি বন্ধ বহুদিন ধরে। গল্পটা ৬৩ বছর বয়সী লিয়াকতের মুখেই শোনা যাক, ‘আমার পুরো জীবন রুমির (কবি জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি) একটি কথায় খুব প্রভাবিত। আমি আমার কলেজজীবনে তার এই কথাটা পড়েছিলাম, বাইরের চিৎকার নয়, আপনার মনের কথা শুনুন। আমার মেয়ে যখন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছিল তখন একদিন আমাকে হাসানের সম্পর্কে বলে। আমি আমার মেয়ের সিদ্ধান্তে কোনো সন্দেহ রাখিনি।’
লিয়াকতের উল্টো জিজ্ঞাসা, ‘তাহলে পড়ালেখার মূল্য কী? যদি আরেকজনের ওপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে হয়। সে শিক্ষিত, স্বাধীন। আশপাশের মানুষজন কী ভাবছে, সেটা নিয়ে ভেবে কী হবে? আমি আমার মেয়েকে বলেছি, কাকে বিয়ে করছ এটা গুরুত্বপূর্ণ না, যদি তুমি সুখী থাকো।’ লিয়াকতের পরিবারের আরো মানুষজন পাকিস্তানে আছেন। যারা দেশভাগের সময় সেখানে থেকে গিয়েছিলেন। তবে এই মুহূর্তে এসব না ভেবে তার একটাই অপেক্ষা, কখন মেয়ে, নাতনি আর জামাতার সঙ্গে দেখা হবে। এ নিয়ে অপেক্ষার তর সইছে না লিয়াকতের।
মেয়ে-নাতনির জন্য অধীর অপেক্ষার মাঝে বিরাট কোহলির জন্য নিজের ভালোবাসা লুকিয়ে রাখতে পারেননি লিয়াকত। সুনীল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকারের খেলার চেয়ে লিয়াকতের কাছে সর্বকালের সেরা ভারতীয় ক্রিকেটার কোহলি, ‘আমার মনে হয় না এই যুগে বিরাট কোহলির চেয়ে কেউ এগিয়ে আছে। হ্যাঁ, মাঝে তার সময় খারাপ গেছে। কিন্তু সে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যদিও এখনো তার সেরা সময়ে আসেনি; কিন্তু বাকিদের চেয়ে সে অনেকটা এগিয়ে।’ লিয়াকতের মন বলছে, সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে বিশ্বকাপ শেষ করবেন কোহলি। আরেকটি চাওয়ার কথাও গোপন রাখেননি তিনি। ১৪ অক্টোবর আহমেদাবাদে ভারত-পাকিস্তান ‘যুদ্ধে’ জামাতা হাসানকে একাদশে চাওয়া লিয়াকতের। তার দুটো আশা পূরণ হওয়া দেখতে অবশ্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।