বিনোদন ডেস্ক, এইউজেডনিউজ২৪: পৃথিবীতে না ফেরার এক বছর হয়ে গেলো বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের। ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৬৩ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে সময় বিনোদন। সুরের পাখি খ্যাত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল একুশে পদক, রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। শুধু গিটারে সীমাবদ্ধ না থেকে গান লেখা, সুর করা এবং সঙ্গীত পরিচালনায় যুক্ত হন তিনি। পরিচিতি পান একজন সুরকার, গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ স্মৃতি-বিস্মৃতি নিয়ে বহু জনপ্রিয় গান লিখেছেন ও সুর করেছেন।
১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম ওয়াফিজ আহমেদ ও মায়ের নাম ইফাদ আরা নাজিমুন নেসা। ঢাকার আজিমপুরের ওয়েস্টটেন্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন এবং শিক্ষাজীবনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭০’এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে দেশাত্মবোধক গান দিয়ে সুরকার হিসেবে যাত্রা শুরু করেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তিনি ১৯৭৬ সাল থেকে নিয়মিত গান করেন। ১৯৭৮ সালে ‘মেঘ বিজলি বাদল’ ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৮৪ সালে বেলাল আহমেদের পরিচালিত ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেন বুলবুল। সেই চলচ্চিত্রের তার লেখা ‘আমার সারাদেহ খেয়োগো মাটি’, ‘আমার বাবার মুখে’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমি তোমার দুটি চোখের দুটি তারা হয়ে থাকব’ গানগুলো জনপ্রিয়তা পায়।
মাত্র সাড়ে ১৩ বছর বয়সে প্রথম গান লেখেন ‘ও মন ময়না, আয় ফিরে আয় না। অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা হয়ে পাকিস্তানিদের সঙ্গে লড়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে আবারও সুরের জগতে ডুবে যান। উপহার দেন ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’,‘ও মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না’, ‘আমার সারা দেহ খেয়গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যখানে’, ‘সেই রেললাইনের ধারে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’, ‘আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি’, ‘একাত্তরের মা জননী কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল’-এর মতো কালজয়ী সব গান।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের লেখা গানে শিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী, এন্ড্রু কিশোর, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সামিনা চৌধুরীসহ কয়েক প্রজন্মের শিল্পীরা কণ্ঠ দিয়েছেন। তার লেখা ও সুর করা উল্লেখযোগ্য আরও গানের মধ্যে- একতারা লাগে না আমার দোতারাও লাগে না, আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে, আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি, পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে যেন পেয়েছি, তোমায় দেখলে মনে হয়, বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম, এই বুকে বইছে যমুনা, কত মানুষ ভবের বাজারে, অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকেসহ আরও অনেক গান।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল তিন শতাধিক চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করে দু’বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০১ সালে ‘প্রেমের তাজমহল’ চলচ্চিত্রের জন্য ২৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে প্রথমবার ও ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হাজার বছর ধরে’ চলচ্চিত্রের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ২০১০ সালে সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক প্রদান করা হয়। সূত্র : সময় টিভি