সৌদি আরবের যুবরাজ (কার্যত শাসক) মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের ঐতিহাসিক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়ার অগ্রগতি হচ্ছে। মার্কিন গণমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরাইলের এ সংক্রান্ত আলোচনা স্থগিত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন তিনি। সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো নেতা বলেন, প্রতিনিয়তই সৌদি আরব ও ইসরায়েল পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের এমন মন্তব্য ফের মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে দুটি অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের ভবিষ্যত সম্পর্ক কেমন হতে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে নতুন এই মেরুকরণ এই অঞ্চলের আরেক শক্তিধর দেশ ইরানের কূটনীতিতে কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে মোড়ল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বিগত কয়েক মাস ধরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আলোচনা চালাচ্ছে রিয়াদ ও তেল আবিব। ওয়াশিংটন এরই মধ্যে পরিষ্কার করে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব ও ইসরায়েল তাদের দুই প্রধান মিত্র এবং তাদের মধ্যকার মৈত্রী ওয়াশিংটনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। আরেক ধাপ এগিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থেই’ এ দুই দেশের মৈত্রী তাদের কাছে ভীষণ জরুরি। আল জাজিরার বিশ্লেষণ।
দেশদুটি সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়টি এমন সময়ে সামনে এসেছে, যার মাত্র কয়েক মাস আগেই রিয়াদ দীর্ঘ সময়ের বৈরী ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রচারমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, ‘আমরা কোন পথে যাচ্ছি তা বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে আমরা আশা করি এটি আমাদের এমন একটি জায়গায় পৌঁছে দেবে, যা ফিলিস্তিনিদের জীবনকে সহজ করবে এবং ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তি হিসেবে স্বীকার করে নেবে।’
তেল আবিবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে রিয়াদ স্পষ্ট কিছু বিষয় অর্জন করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তি করার পাশাপাশি সৌদি আরব দেশটি থেকে অবাধে অস্ত্র আমদানি করার সুযোগ চায়। পাশাপাশি বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারের উদ্দেশ্যে মার্কিন প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা চায় দেশটি।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়টি নিয়ে সৌদি আরব উদ্বিগ্নও। কারণ ইরানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে ইরান সব সময়ই এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে ইরানের প্রসঙ্গ টেনে সৌদি যুবরাজ যুক্তরাষ্ট্রে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র পায়, তবে সৌদি আরবের হাতেও অস্ত্র থাকা উচিত।’ এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে সম্ভবত ইরানের প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করবে।
রিয়াদ আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সৃষ্টি। তবে ইসরায়েল সরকার বিষয়টিকে কীভাবে নেবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ, দেশটির ইতিহাসে যত সরকার এসেছে, তারা সবাই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়টিকে ধর্মীয় জায়গা থেকে বিবেচনা করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন আশা প্রকাশ করে বলেছেন, খুব শিগগিরই সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। তিনি বলেছেন, ‘দুই দেশের মধ্যে এখনো যে ব্যবধান রয়েছে তা পূরণ করা যাবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি মনে করি, অবশ্যই এই সম্ভাবনা আছে যে—২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে বা চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই আমরা এমন একটি পর্যায়ে যেতে সক্ষম হব যেখানে একটি চুক্তির বিষয়বস্তু চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।’
এদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সম্মতি আদায়ে সৌদি আরব তাদের আর্থিক সহায়তা পুনরায় চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে। ২০২১ সালের সেই সাহায্য পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল রিয়াদ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আগস্টে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিনিধি দল রিয়াদে গিয়েছিল নিজস্ব শর্তগুলো আলোচনা করতে।