সরকারি-বেসরকারি ৪৪ ধরনের সেবা পেতে করযোগ্য আয় (বার্ষিক সাড়ে ৩ লাখ টাকা) না থাকলেও আগামী অর্থবছর থেকে ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে। অসচ্ছল, নিুবিত্ত মানুষকেও সেবা পেতে এ কর দেওয়া বাধ্যতামূলক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তে করজাল বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের দেওয়া সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদানের মাধ্যমে জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এ ধরনের অংশীদারত্বমূলক অংশগ্রহণ দেশের সক্ষম জনসাধারণের মাঝে সঞ্চারণের লক্ষ্যে করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে, অথচ সরকার থেকে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে-এমন সব করদাতার ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন তিনি।
বর্তমানে বছরে ৩ লাখ টাকার নিচে আয় থাকলে কর দিতে হয় না। রিটার্ন জমার স্লিপ প্রয়োজন হলে শূন্য রিটার্ন জমা দেওয়া যেত। প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী রিটার্ন জমার স্লিপ বা প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পেতে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। আগে টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) দিয়ে যেসব সেবা পাওয়া যেত এখন সেসব সেবা পেতে রিটার্ন স্লিপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, একজন গৃহিণীর ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র আছে। কিন্তু তার করযোগ্য আয় নেই। দুই বছর আগে ব্যাংকে শুধু টিআইএন জমা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন। চলতি অর্থবছরে টিআইএনের পরিবর্তে ব্যাংকে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক করা হয়। স্লিপ না দিলে সঞ্চয়পত্রের সুদ আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটার বিধান রয়েছে। আর স্লিপ জমা দিলে ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়। বাড়তি উৎসে কর কাটার হাত থেকে বাঁচতে চলতি অর্থবছরে ওই গৃহিণী শূন্য রিটার্ন জমা দিয়ে স্লিপ নিয়েছেন। কিন্তু আগামী অর্থবছর থেকে শূন্য রিটার্ন জমা দিলেও স্লিপ পেতে তাকে ২ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে।
যেসব সেবা পেতে রিটার্ন স্লিপ বাধ্যতামূলক: ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে, কোম্পানি পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হলে, আমদানি-রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি-ইআরসি) নিতে, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে, সমবায় সমিতি নিবন্ধন নিতে, বিমা কোম্পানির সার্ভেয়ার হতে, ১০ লাখ টাকার বেশি ক্রেডিটসম্পন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে ও সচল রাখতে, ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের জমি-ফ্ল্যাটের দলিল করতে, ক্রেডিট কার্ড নিতে, পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ নিতে, ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স ও ছাড়পত্র পেতে, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে সন্তান ভর্তি করতে, কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নিতে, অস্ত্রের লাইসেন্স নিতে, ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে, ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে, নির্বাচনে অংশ নিতে, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ১৬ হাজার টাকা হলে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ১৬ হাজার টাকার বেশি বেতন গ্রহণ করলে, পণ্য আমদানি-রপ্তানির বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক।
আগামী অর্থবছরে এর সঙ্গে আরও ৬টি সেবা যুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- দলিল লেখক হিসাবে নিবন্ধন পেতে, জমি, ভবন বা অ্যাপার্টমেন্ট লিজ রেজিস্ট্রেশনকালে, দেশের সব এলাকায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের দলিল রেজিস্ট্রিকালে, ট্রাস্ট, ফান্ড, এনজিও, ফাউন্ডেশন, ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা, সমবায় সমিতির ব্যাংক হিসাব খুলতে ও সচল রাখতে, বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় বাড়ির মালিকের এবং পণ্য ও সেবা গ্রহণের সময় সরবরাহকারীর রিটার্ন জমার স্লিপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।