পলিটিক্যাল ডেস্ক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘১০ তারিখের সমাবেশ নিয়ে সরকারের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। সেদিন নাকি তারা উড়ে যাবে। জনগণের প্রতি তাদের আস্থা নেই। চোরের মন পুলিশ পুলিশ। নয়াপল্টনে এর আগে অনেক সমাবেশ করেছি, তখন তো সমস্যা হয়নি। এখন কেন এত সমস্যা?’
শনিবার বিকালে রাজশাহীর হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে (মাদ্রাসা মাঠ) বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘এত পেটাই, এত মামলা দেই, তারপরও বিএনপি উঠে আসে কোত্থেকে? বিএনপি মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে। এটাই বিএনপি। এজন্য ভয় পেয়েছে। আমরা বলেছি, ১০ তারিখে পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশটা করতে চাই। ওদের ঘুম নাই। ঘুম হারাম হয়ে গেছে। নিজের ওপর আস্থা নেই বলে ভয় পায়। এই গেল, এই গেল ভাবতে থাকে। বিএনপি এলো, বিএনপি এলো ভাবতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নয়াপল্টনে অনেক সমাবেশ করেছি। লাখ লাখ মানুষ হয়েছে। ওই দিন তো কোনো সমস্যা হয়নি। আজকে হঠাৎ আপনাদের মাথায় সমস্যা আসছে কেন? কারণ আপনারা জানেন অনেক কাজ করেছেন।’
সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, গত তিন দিন ধরে পদ্মার ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে হু হু করে লেগেছে। তারপরও আপনারা এখান থেকে একবিন্দুও সরেননি। খেয়ে না খেয়ে, কিসের ভালোবাসায়, কিসের তাগিদে আপনারা তিন দিন ধরে এখানে কাটালেন? একটি মাত্র কারণ, আপনারা মুক্তি চান। ‘ভয়াবহ দানবের’ হাত থেকে আপনারা মুক্তি চান।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছে। এর মধ্যে পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ২৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। এটাই এই সরকারের চরিত্র। এভাবে তারা বিরোধী দলকে নির্মূল করে দিতে চায়। এতে কি নির্মূল হয়েছে? রাজশাহীর মানুষ ভয় পেয়েছে? পায়নি। আরও উত্তালে জেগে ওঠেছে। এ লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতেই হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আর কোনো রাজনৈতিক দল নেই। এটা একটা লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। নিজেরা লুট করে সম্পদের পাহাড় করেছে, সাধারণ মানুষকে গরিব করছে। কয়দিন আগে ২৫ জন কৃষককে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য তাদের জেলখানায় নেওয়া হয়েছিল। আর হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে ব্যাংক খালি করে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা হয় না।’
তিনি বলেন, ‘গায়েবি কোম্পানিকে টাকা দিয়ে ব্যাংক খালি করে দেওয়া হয়েছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।’
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। ওই সময় গানপাউডার দিয়ে একটা বাসেই ১১ জনকে হত্যা করেছিল। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৫টা নির্বাচন হয়ে গেল। এরা ক্ষমতায় আসার পরে কী করল? ওই ব্যবস্থা পাল্টে দিল। কেন, তারা কিছুদিন পরে বুঝতে পারল জনগণ তাদের পছন্দ করছে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। অন্যথায় এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ওটার মানে কি? ওই যে আপনারা ফেসবুকে সব পোস্ট দেন না? ওইটাতে যদি দেখা যায়, কেউ কোনো ইঙ্গিতে প্রধানমন্ত্রী কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছে- তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। জামিন নাই। কোন দেশ? দাবি করেন গণতান্ত্রিক দেশ, অথচ প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সমালোচনা করা যাবে না। খারাপ কাজ করলে বলা যাবে না। এ দেশের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। যুদ্ধ করেছিলাম সবার অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠিত করব। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা চায় না। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য একটাই, যেমন করে পারে বন্দুক পিস্তল নিয়ে ক্ষমতায় বসে থাক। এই দেশ কি তাদের? এ দেশ আমাদের, এ দেশ জনগণের।’
ফখরুল বলেন, ‘একটা গল্প তৈরি করছে- জঙ্গি তৈরি করে বিএনপিকে ধরার জন্য। নিজেরা নিজেরা বাস পোড়ায়, আর বলে বিএনপি করছে। গুরুদাসপুরে একটা দোকান, ওই দোকানের মধ্যে নাকি ককটেল পেয়েছে। ওরা নিজেরা রাখে, তারপর বলে এটা বিএনপির লোকজন করেছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।’
বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা ইতিহাসে নেই। এমন দল করেন, ছাত্রলীগের সম্মেলন চলে আপনাদের বক্তৃতাই দিতে দেয় না। বের করে দেয়। পত্রিকায় দেখলাম। এই আওয়ামী লীগ দেশের কিছু করতে পারবে না। দেশ আজ তলানিতে চলে গেছে। এমন অবস্থা তৈরি করেছে, এখন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার মতো ডলারও আমাদের হাতে নাই। থাকবে কোত্থেকে? সব পাচার হয়ে গেছে। বিদ্যুতের নাম করে যে লুট করেছে, প্রতি বছর ৭৮ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়।’
ফখরুল বলেন, ‘তারা বলেন উন্নয়ন হচ্ছে। মেগা উন্নয়ন। রাজশাহীতে কয়টা উন্নয়ন হয়েছে? কৃষক ভাইয়েরা- সারের দাম কত? সার পাওয়া যায়? ঘরে ঘরে চাকরি দেবে বলেছিল, চাকরি পায় আমার ছেলেরা? কৃষক ভাই ধানের নায্যমূল্য পায় না। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে চলে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়। খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য নয়। তারেক রহমানের জন্য নয়। আমাদের মন্ত্রী হওয়ার জন্য নয়। এই আন্দোলন অঙ্গীকারকে ফিরে পাওয়ার আন্দোলন। দুবার ভোট দিতে পারলাম না। আমরা ভোটের অধিকার ফিরে পেতে আন্দোলন করছি।’
ফখরুল এ সময় আরও বলেন, ‘এই ময়দানে (রাজশাহী সমাবেশস্থল) নেত্রীকে (খালেদা জিয়া) নিয়ে অনেক প্রোগ্রাম করেছি। আমাদের কি দায়িত্ব নেই তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার? তাই জেগে ওঠতে হবে। তরুণ-যুবকদের প্রতি আহ্বান রাখতে চাই, আপনারা জেগে উঠুন। দুর্বার গতিতে আসুন। এই ভয়াবহ সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’