রাজধানী ডেস্ক: বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এরআগে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গত রবিবার রাত থেকে গতকাল সোমবার দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। সোমবার গভীর রাতে সিত্রাং আরো বেশি শক্তিশালী হওয়ায় মঙ্গলবারও রাজধানীতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এরআগে সোমবার বৃষ্টিতে সকালে ঢাকায় রিকশা কম ছিল। কম ছিল গণপরিবহন। কোনো কোনো সড়কে পানি জমে যায়।
একে তো বৃষ্টি সারা দিন মানুষকে ভুগিয়েছে। তার ওপর দিন শেষে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে জলাবদ্ধতা। বৃষ্টি এখনও না থামায় জলাবদ্ধতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কর্মজীবী মানুষ বৃষ্টি উপেক্ষা করেই দিনভর ছোটাছুটি, অফিসসহ প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করেছে। বাড়ি ফেরার সময়ও বৃষ্টির দাপট আর রাজধানীর চিরচেনা জলাবদ্ধতা সঙ্গী হয়েছে তাদের। মাথায় ছাতা নিয়ে পানি মাড়িয়ে ঘরে ফিরছে কাজ বের হওয়া মানুষ। অন্যদিকে রাজধানীর কোনো কোনো সড়কের জলাবদ্ধতার এতটাই বেশি হয়েছে যে যানবাহন চলার সময় সড়কে ঢেউয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। আর সেই ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে পথচারীর শরীরে।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ধানমন্ডি, মিরপুর রোড, ধানমন্ডি ২৭, জিগাতলা, মিরপুর, কালশী, পল্টন, ফকিরাপুল, জিয়া সরণি, মালিবাগ, নয়াপল্টনসহ রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় কর্মস্থলের উদ্দেশে বেরিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েন। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কর্মজীবীদের যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও বাসা থেকে বেরিয়ে বৃষ্টির মধ্যে পড়ে। অনেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভিজে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। আবার কাউকে কাউকে বাসায় ফিরে যেতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যার পর খেপুপাড়া, ভোলা, বরিশাল উপকূলে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ আঘাত হেনেছে। ভোরের মধ্যেই বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। তবে মধ্যরাতের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে ভোলা জেলার পাশ দিয়ে বরিশাল ও চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করবে।
বনানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মাসুদ রানা। তিনি থাকেন নয়াবাজারে। বৃষ্টির কারণে সকালে অফিসে যেতে তাঁর প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরি হয়। ‘সকালে অফিসের জন্য বেরিয়ে গাড়ি পাচ্ছিলাম না। পরে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়ায় সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা ভাড়া করে অফিসে যাই। টাকাও গেল, অফিসেও দেরি হলো।’ সকালে বাস না পেয়ে কলেজে যেতে পারেননি শরিফুল ইসলাম। তিনি তেজগাঁও এলাকার একটি পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থী। শরিফুল বলেন, ‘সকালে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছিল। কলেজে যাওয়ার জন্য মহাখালী এলাকার বাসা থেকে রাস্তায় বের হয়েছিলাম। মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে যেতেই বৃষ্টিতে পুরো শরীর ভিজে যায়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাস না পেয়ে বাসায় ফিরতে বাধ্য হই।’
রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার জন্য দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অপেক্ষা করছিলেন বৃদ্ধা কুলসুম বেগম। তিনি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ফার্মগেট এলাকার একটি চক্ষু হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বের হন। কথা হয় কুলসুমের মেয়ে নূর বানুর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বেলা একটায় চিকিৎসক দেখানোর সময় দেওয়া আছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও অটোরিকশা পাচ্ছেন না তাঁরা।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সারাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে, গতি বেড়েছে বাতাসের। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ঢাকার ১৩টি স্থানসহ সারাদেশে ৩০টি স্থানে ঝড়ে গাছ পড়ে সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়।
সোমবার রাতে এক বার্তায় ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের উপকূলীয় এলাকার সকল ফায়ার স্টেশনকে স্ট্যান্ডবাই ডিউটি দেওয়া হয়েছে। উপ-পরিচালক (অপারেশন্স ও মেইন্টেইনেন্স) কামাল উদ্দীন ভূঁইয়া’র নেতৃত্বে কেন্দ্রীয়ভাবে খোলা হয়েছে ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মনিটরিং সেল।’
এ পর্যন্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৩টি স্থানসহ সারা দেশে প্রায় ৩০টি স্থানে ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অপসারণ করেছেন। এছাড়া বরিশাল সদর ফায়ার স্টেশন কর্তৃক ১ জন ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সাহায্যের জন্য মনিটরিং সেলের নম্বরগুলোতে যেকোনো সময় ফোন করা যাবে। হটলাইন: ১৬১৬৩, টেলিফোন: ০২-২২৩৩৫৫৫৫৫, মোবাইল: ০১৭৩০-৩৩৬৬৯৯। এছাড়া কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ সকল বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নিয়মিত ফোন নম্বরগুলোও সচল রয়েছে।