রংপুর প্রতিনিধি: কাউনিয়ায় মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্পের নামে প্রায় কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে ন্যাশনাল এজেন্সি ফর গ্রিন রেভ্যুলেশন-নগর নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার বিরুদ্ধে।
খোদ কর্মকর্তারাই প্রকল্পটিকে অস্তিত্বহীন ও কাগুজে বলে স্বীকার করলেও শেষ পর্যন্ত একপ্রকার প্রকাশ্যেই ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়ে যায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর একটি মহতী প্রকল্পের টাকা।
‘এমনিতেই সব এনজিও এখানে ১০ শতাংশ করে টাকা দেয়। কিন্তু আমাদের এখানে কোনো কাগজপত্র ঠিক না থাকার কারণে ওরা আমাদের কাছে ২০ শতাংশ দাবি করেছে’। নগরের প্রকল্প পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান পিন্টুর এ অডিও ফাঁসের মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মৌলিক সাক্ষরতা কর্মসূচির নামে ৯৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এনজিওটির অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার খবর প্রকাশ হয়।
তবে ২০ লাখ টাকা কেটে রেখে অবশিষ্ট ৭৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা শিক্ষক ও সুপারভাইজারদের ৬ মাসের বেতন-ভাতা হিসেবে বিতরণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের চেষ্টা করে নগর। কিন্তু এই চেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার গ্রহণ করতে অস্বীকার করলে বাধে বিপত্তি।
রংপুর কাউনিয়ার ইউএনও তাহমিনা তারিন বলেন, এখানে ইউএনওকে তো কোনো পয়সা দেয় না। আর ওই টাকা ইউএনও কী করে অ্যাকাউন্টে নেবে। এটা তো একটা এনজিওর চেক।
কয়েক দিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বেহালচিত্র। শিক্ষক-শিক্ষার্থী-স্কুল ঘরের মালিকদের অনেকেরই অভিযোগ ফটোসেশনেই সীমাবদ্ধ ছিল প্রকল্পের কার্যক্রম।
প্রকল্পটি নামসর্বস্ব ও কাগুজে বলে স্বীকার করেন এনজিও নগরেরই দুই কর্মকর্তা। তারা নিজের মুখে বললেন, জুন ক্লোজিংয়ের আগে কীভাবে প্রায় কোটি টাকা সরকারের কোষাগার থেকে বের করে এনেছিলেন।
আরও পড়ুন: ‘জুতাপেটা’ করা শিক্ষকের থানায় অভিযোগ, বিদ্যালয়ে নেই শিক্ষার্থীরা
নগর এনজিওর প্রধান প্রকল্প পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান পিন্টু বলেন, নগর সিদ্ধান্ত নিল যে আমরা এই টাকাটা তাহলে লোনস্বরূপ হোক, যে কোনোভাবেই হোক তাদের দিয়ে আমরা চেকটা নিই। যেটাকে আমরা খোলামেলা বলি ঘুষের মতো করে এই টাকাটা উনারা ওখানে প্রদান করে চেকটা দেন।
নগর এনজিওর প্রকল্প পরিচালক সাহেদুল হক রাজু বলেন, মানার কারণ হলো এ প্রজেক্টটা আল্টিমেটলি ইমপ্লিমেন্ট হয়নি। যারা টিচার তারা কেউ একটা ক্লাস নেয়নি।
এতকিছুর পরও ১৪ হাজার ৪০০ টাকা করে প্রায় সাড়ে ৬০০ শিক্ষক ও সুপারভাইজারের বেতন-ভাতা বিতরণের দাবি করা হলেও শেষ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৪০০ টাকা করে হাতে পেয়েছেন তারা। এ ঘটনাও সময় টিভির ক্যামেরায় ধরা পড়লে ৫০০ টাকা করে ফেরত দেয়া হয়।
শর্তানুযায়ী সাড়ে ৬০০ শিক্ষক-সুপারভাইজারের ৩০ জন করে মোট ১৯ হাজার ৫০০ জন নিরক্ষরকে স্বাক্ষর জ্ঞান করে তোলার কথা ছিল।