ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: শ্রীলঙ্কায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাইরে বুধবার সরকারবিরোধী বিক্ষোভে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। রাজধানী কলম্বোয় মারা যাওয়া আন্দোলনকারী ওই তরুণের বয়স ২৬ বছর। খবর হিন্দুস্থান টাইমসের। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাইরে বুধবার বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে ওই যুবকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে সামরিক বিমানে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে পালিয়ে যান শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। পরদিন বুধবার দেশটির স্পিকার শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের নাম ঘোষণা করেন। এই ঘোষণায় রাজধানী কলম্বোসহ দেশজুড়ে বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। এ ছাড়া সারা দেশে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়।
ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হানা দেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশের নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেঙে তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের দমানো সম্ভব হয়নি। তারা একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দখলে নেন। অবিলম্বে রনিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগ দাবি করছেন তারা।
নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে আশ্রয় নিয়েছিলেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। নিরাপত্তার জন্য দেশ ছাড়লেও সেটির নিশ্চয়তা যেন মালদ্বীপেও মিলছে না।
রাজাপাকসে মালদ্বীপ সরকারকে একটি বেসরকারি বিমানের ব্যবস্থা করে দিতে অনুরোধ করেছেন। সেই বিমানে করে তিনি সিঙ্গাপুরে যেতে চান। মালদ্বীপ সরকারের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
শ্রীলংকায় তুমুল বিক্ষোভের মুখে গোতাবায়া রাজাপাকসে বুধবার দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে আশ্রয় নিয়েছেন। তার চাওয়া ছিল প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নিয়ে বিক্ষোভ সামাল দেবেন।
পার্লামেন্ট স্পিকারকে ফোন করে কালই পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন গোতাবায়া। তবে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত পদত্যাগপত্র জমা দেননি।
এদিকে বুধবার শ্রীলংকায় সর্বদলীয় নেতাদের বৈঠকে স্পিকারকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট করার প্রস্তাব পাশ হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, তার দল ও বিরোধী দল মিলে সর্বদলীয় সরকার গঠন করবে।
রনিল বিক্রমাসিংহে স্পিকার মাহিন্দ ইয়াপে নতুন প্রধানমন্ত্রী বাছাই করতে বলেছেন, যিনি সরকারি দল ও বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে ডেইলি মিরর জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে, তার স্ত্রী ইওমা রাজাপাকসে এবং দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তার বুধবার রাতে মালে থেকে এসকিউ৪৩৭ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হবেন বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে তারা ফ্লাইটে আরোহণ করেননি।
অন্যদিকে মালদ্বীপের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় মালে থেকে সিঙ্গাপুরে পৌঁছাতে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের জন্য একটি প্রাইভেট বিমানের ব্যবস্থা করার বিষয়টি এখন আলোচনায় রয়েছে।
এদিকে সামরিক বিমানে করে মালদ্বীপের ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পৌঁছানোর এবং সেখান থেকে বের হওয়ার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
ভিডিওতে দেখা যায়, ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রাজাপাকসেকে অপমান করার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা চিৎকার করছে অবশ্য এই ভিডিওটি যাচাই করা হয়নি বলে জানিয়েছে এএফপি।