ইকোনোমিক ডেস্ক: ডলার নিয়ে বহুমাত্রিক সমস্যায় আর্থিক ব্যবস্থাপনা। চড়া দর সরাসরি বাড়িয়ে দিচ্ছে মূল্যস্ফীতি। অন্যদিকে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় টান পড়তে যাচ্ছে রিজার্ভে। যা এরইমধ্যে নেমে এসেছে শঙ্কাজনক অবস্থায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই মুহূর্তে সতর্ক ব্যবহার ও দর সমন্বয়ে উপযোগী সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজনীয় রিজার্ভ দেশের শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তির বড় পরিচয়। যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গর্বও করে আসছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, ডলারের বৈশ্বিক চাহিদার উল্লম্ফন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় মাত্র ৬ মাসে রিজার্ভ কমেছে ৬ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে বছর ব্যবধানে টাকা মান হারিয়েছে পাঁচ শতাংশের বেশি।
ডলারের দাম বাড়লে বেড়ে যায় আমদানি ব্যয়। ফলে, সেই পণ্য দেশীয় বাজারে বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে। যা সরাসরি বাড়িয়ে দেয় মূল্যস্ফীতি। অন্যদিকে, ডলারের সরকারি দরের সঙ্গে খোলা বাজারের দামের পার্থক্যও উঠে গেছে ৮ টাকায়। ফলে এক রকম ত্রিমুখী সমস্যায় আর্থিক ব্যবস্থাপনা।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, যদি ডলারের দামটা ধরে রাখতে চাই বা এটা খুব বেশি ডিপ্রেশিয়েট করতে না দেই তাহলে রিজার্ভ আরও খরচ করতে হবে।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মার্কেটে এটা ৯৪-৯৫ টাকায় এখন লেনদেন হচ্ছে। তাই সেটাকে যে সামাল দেয়া দরকার এবং সেখানে যে আমাদের সাশ্রয়ী হবে এবং শৃঙ্খলার মধ্যদিয়ে আমাদের পদক্ষেপগুলো নিতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন আরও বলেন, মূল্যটাকে এডজাস্ট করতে দিতে হবে যাতে ঐ এডজাস্টমেন্টের ফলে ডলারের চাহিদা কিছু কমে।
বর্তমানে দেশের মাসিক গড় আমদানি ব্যয় ৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু রিজার্ভ ৪০.৮ বিলিয়ন। আইএমএফের হিসাবে, এর থেকে অন্তত ৭ বিলিয়ন ডলার রাখতে হবে হিসাবের বাইরে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে থাকায়। তার মানে ব্যয় মেটাতে হাতে আছে ৩৪ বিলিয়নের কম। যা দিয়ে করা যাবে না ৫ মাসেরও আমদানি। অথচ আইএমএফের মূল্যায়ন হলো উঠতি অর্থনীতির দেশের জন্য অস্বাভাবিক সময়ে রিজার্ভ থাকা উচিত ৮ থেকে ১২ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ। সেক্ষেত্রে ঘাটতি আছে অন্তত ২১ বিলিয়নের।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমানে অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে এটা নুন্যতম পর্যায়ে চলে এসেছে। এর নিচে নামাটা ভবিষ্যতের জন্য বিপদজনক হতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ডলার হাতে থাকতে আপনার মার্কেট ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ানো দরকার। যাতে যদি কোনরকম অস্থিরতা দেখা যায় তাহলে সেই অস্থিরতাটা মোকাবেলা করার মতো অস্ত্র আপনার হাতে থাকে।
ডলার নিয়ে একই সমস্যায় পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু সমাধানে হাত দেয়নি সময়মতো। তাই আগেভাগে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।