হেল্থ ডেস্ক: ক্যানসার রোগীর অত্যন্ত জরুরি চিকিৎসা রেডিও থেরাপি। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে বছরের পর বছর ধরে এই রেডিয়েশন মেশিন নষ্ট। এতে এই সেবা ভেঙে পড়েছে। ফলে বিনা চিকিৎসায় হাজারও ক্যানসার রোগী প্রাণ হারানোর শঙ্কায়।
লক্ষ্মীপুরের মাহবুব হোসেন। গলার ক্যানসারের চিকিৎসা নিতে জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালে এসেছেন। রেডিও থেরাপির সিরিয়াল পেতে বেশ কয়েকদিন ধরনা দিয়ে অবশেষে জুলাই মাসে তারিখ পেয়েছেন তিনি।
মাহবুব বলেন, তারা বলছেন পাঁচটি মেশিন নষ্ট আর একটি মেশিন ভালো আছে। আমরা রোববার আসছি, আমাদের বুধবার সকালে আসার জন্য বলা হয়েছে। জুলাইয়ের ২০ তারিখে রেডিও থেরাপির সিরিয়াল দিয়েছে।
এ হাসপাতালে রেডিও থেরাপি নিতে প্রতিদিন শত-শত রোগী আসছেন। কিন্তু সিরিয়াল না পেয়ে বেশিরভাগই হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কেননা, এখানকার ৬টি রেডিও থেরাপি মেশিনের ৪টিই কয়েক বছর ধরে বিকল।
চিকিৎসা নিতে আসা একজন বলেন, সবাই সংগ্রাম করছে। কেন, কী কারণে সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। মেশিনে সমস্যা, না স্টাফে সমস্যা সেটা তারাই ভালো জানবেন।
জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালে প্রথম রেডিও থেরাপি মেশিন আনা হয় ১৯৯৫ সালে। পরেরগুলো আনা হয় ২০০১, ২০০৮, ২০১২, ২০১৩ সালে। এই বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রথম ২টি ১০-১৫ বছর আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। আর নিয়মিত মেরামতের অভাবে দুটি মেশিন অকেজো।
যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যারিয়েন মেডিকেল সিস্টেম ও সুইডিশ কোম্পানি ইলেকটা মেডিকেল সিস্টেম-এর তৈরি থেরাপিগুলো মেশিন ক্যানসার হাসপাতালে সরবরাহ করেছিল ট্রেড ভিশন নামে একটি এজেন্সি।
জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বন্ধ্যোপাধ্যায় বলেন, যেখানে গ্যাপঅ্যাগেইন অনুভব করি এগুলো হচ্ছে সর্বোচ্চ সফটওয়ারভিত্তিক মেশিনারীজ। প্রকিউরমেন্টে যাওয়ার পর টেন্ডার আসলো, আইনি মোতাবেক কেনা হলো, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি।
একেকটি রেডিও থেরাপি মেশিনের দাম ১৫-২০ কোটি টাকা। হাসপাতালটির পরিচালক জানান, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও ক্রয় প্রক্রিয়ার দীর্ঘ সূত্রতার কারণে সময়মত নতুন মেশিন কেনা হয়নি।
এ বিষয়ে হাসপাতালটির পরিচালক আরও বলেন, আমাদের এই মুহূর্তে রেডিওয়েশনের তিনটি মেশিন কেনার পরিকল্পনা। সেটা ২০২৩ সালের জানুয়ারির দিকে।
ঢাকা মেডিকেলেও রেডিও থেরাপি মেশিন দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। আর রংপুর মেডিকেলে ২০১২ সালে বন্ধের পর এই সেবা আর চালু হয়নি। একই অবস্থা ময়মনসিংহ ও বরিশাল মেডিকেলে। ফলে লাখ টাকায় বেসরকারি হাসপাতালে থেরাপি নেয়ার সামর্থ্য না থাকায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন অনেক রোগী।