
মুক্তমঞ্চ ডেস্ক: বৈধ প্রত্যেকটি কর্মের সম্মান আমাদের দেওয়া উচিত। আপনি নিজে আপনার জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে আপনার শ্রম এবং মেধা অনুযায়ী আপনি সমাজের কাজের মাধ্যমে রোজগার করেন।
কিন্তু আমরা সমাজের দেখতে পাই এই সেবা দিতে গিয়ে মাঝে মাঝে আমরা আমাদের চরিত্রের পরিবর্তন ঘটায়। এটা সমাজের জন্য মোটেই কাম্য নয়। যে দায়িত্ব আপনাকে দেয়া হয় সে দায়িত্বের বাইরে গিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে সমাজের মানুষকে কষ্ট দিয়ে ফেলেন।
নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে কর্তব্য পালন করতে হবে। কর্তব্যের জন্য কর্তব্য এই কথাটা ভুলে গেলে আমাদের চলে না। পৃথিবীতে আমি-আপনি এসেছি মানুষ রূপে। এ মানুষের আয়ুষ্কাল খুবই সংকীর্ণ। একটি চমৎকার বিষয় হয়তো আপনারা ভাবতে পারেন না। আপনি গরীব মধ্যবিত্ত বা ধনী যেই হোন না কেন তিন বেলা থেকে চার বেলার বেশি আপনি খেতে পারেন না। তবে অবৈধভাবে সমাজের লোকের ক্ষতি করে অঢেল সম্পত্তি গড়ার কোন মানে আছে কি?
হালাল রুজির কথা প্রত্যেক ধর্মেই বলা হয়েছে।
ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে হালাল রুজি ভক্ষণ না করলে কোনো ইবাদতই কবুল হবে না।
তাহলে আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন চাকুরীজীবী তার যে বেতন সরকার বা কোন কোম্পানি থেকে দিয়ে থাকে সেই বেতনের বাইরে গিয়ে সে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম সম্পদ গড়ে তোলেন এবং মসজিদ মাদ্রাসায় দান করে থাকেন।
অবৈধ পথ অবলম্বন করে দান করা এটা ঠিক কিনা। এবং অবৈধ পথে আয় রোজগার করে নিজে এবং নিজের পরিবারের পিছনে ব্যয় করা ঠিক কিনা।
মানুষ যেহেতু পৃথিবীতে অল্প দিনের জন্য আসে তাহলে আমরা সঠিক পন্থা অবলম্বন না করে অন্যায় পথ অবলম্বন করে কি লাভ?
আমি-আপনি জন্মগ্রহণ করার পরে দীর্ঘ ১২ থেকে ১৫ বছর পর আমরা নিজেরা সঠিক বুঝতে পারি নিজেকে চলার মত করে। তারপরও আমাদের অনেক কিছু শেখার থাকে। এই বয়স কালের মধ্যে আমরা নিজেরা সমাজে একা চলতে পারিনা। আমাদেরকে চলতে হয় অন্যের সহযোগিতায় আর্থিক বা সামাজিকভাবে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে মানুষ হিসাবে আমরা অনেকটাই পরনির্ভরশীল। তাই মানুষ সে আমরা মানুষের কেন ক্ষতি করতে যাব? আপনি যখন আপনার শিক্ষাজীবন শেষ করে অথবা কর্মজীবনে প্রবেশ করেন, সেই কর্ম জীবনে গিয়ে মানুষ হয়ে মানুষের জন্য সঠিক কাজ করাটাই শ্রেয়।
যেহেতু আপনি মানুষ আপনি জানেন না আপনার কখন মৃত্যু ঘটবে? কখন মহান আল্লাহতালা আপনাকে ডাক দিয়ে নিয়ে যাবেন? আপনি বেঁচে আছেন কিন্তু দেখুন আপনার আশেপাশে আপনার কম বয়সি অথবা আপনার বেশি বয়সী অনেক লোক পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছে। তারা আপনার সম্মুখে আরে পৃথিবীতে ফিরে আসছে না। অবধি তারা আর কখনো ফিরে আসবে না। আমার আপনার এই একই পরিণতি ঘটবে। আপনি যত সম্পদশালী হন না কেন! অথবা আপনি যত কম সম্পদশালী হন।
তাই আমরা মানুষ হয়ে মানুষকে কষ্ট দিয়ে কোন অবৈধ পথ অবলম্বন করে সম্পদ অর্জনের পিছনে হাঁটবো না। সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করবো না। আমরা সকলে মিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর সমাজ গঠন করতে প্রয়াস চালাবো।
প্রথমেই আমাদের যে কাজটি করতে হবে। আমরা সত্য কথা বলবো মিথ্যা কথা বলবো না। আমাদের চেষ্টা অনুযায়ী যেটা রোজগার হবে সেটা নিয়ে আমরা শুকরিয়া আদায় করব মহান আল্লাহতালার দরবারে। অন্যের সম্পদ দেখে লোভ করা যাবে না। কোন সম্পদই আমাদের মৃত্যুর সময় সাথে যায় না। একজন মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার কতটুকু সম্পদ রয়েছে সেটা আর হিসাব করা হয় না। জানাযার পূর্বে মানুষ শুধু এতোটুকুই ভাবে সে দুনিয়ায় কতটুকু ভালো কাজ করেছে? সে লোক হিসাবে কেমন ছিল?
তাই যদি হয় আমরা মানুষ হয়ে মানুষকে কষ্ট দিয়ে কেন আমরা সম্পদ বৃদ্ধি করতে যাব? যখন আমরা অন্যের সম্পদ নিজের করে নেয়ই তখন থেকে আমাদের মাঝে অশান্তি সৃষ্টি হয়। নিজের মধ্যে শান্তি আনতে হলে অবশ্যই নিজেকে সঠিক পথ অবলম্বন করতে হবে। হালাল রুজি ভক্ষণ করতে হবে।
আমাদের সমাজের অস্থিরতার প্রধান কারন হচ্ছে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করি এবং মিথ্যা কথার আশ্রয় নেয়ই। তবে অনেকে চেষ্টা করে ভালো থাকার জন্য কিন্তু সে এই সমাজেই বাস করে সে অন্য মানুষের দ্বারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হলে আরেক ব্যক্তির সঙ্গেও তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়ে যায়। তাই ভালো মানুষগুলো কেউ মানুষ অবিশ্বাসের চোখে দেখা শুরু করে। কিন্তু আমাদের দেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমাদেরকে পরিশ্রম করে একটি উন্নত রাষ্ট্রে এবং নিজেদের উন্নতি করতে কাজ করতে হবে।
আর সেই উন্নতি হবে নিজের মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে অন্যের সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে নিজে বড় হয়ে এই সমাজকে সুন্দর ভাবে গঠন করা যাবে না। এই সমাজকে অবশ্যই আমাদেরকে সুন্দর রুপে গঠন করতে হবে । এই জন্য যে, এই সমাজই আপনার আমার সন্তান বসবাস করে। এই সমাজেই বেড়ে ওঠে তারা। এবং আমরা পৃথিবী থেকে বিদায় নেব। আমাদের সন্তানরা আবার এই পৃথিবীতেই থেকে যায়। এভাবে বংশপরম্পরায় মানুষ আসে মানুষ চলে যায়। কিন্তু মানুষ যতদিন পৃথিবীতে রয়েছে তাদের ধর্মীয় আদর্শ, নৈতিকতা এবং তাদের সৎ চলাফেরার জন্য তাদের মাঝে শান্তি বয়ে আনে।
যে জাতি যত সৎ সে জাতি তত সুন্দর। সামাজিক বন্ধন যত শক্তিশালী হবে মানুষের মনে ততই শান্তি বিরাজ করবে।
ধর্মীয় কুসংস্কার, মানুষের প্রতি ঘৃণা, না জেনে মানুষের প্রতি কোনো মন্তব্য করা, মিথ্যা কথা বলা, মানুষের প্রতি অশ্রদ্ধা, শিশুদের প্রতি মমত্ববোধ না থাকা, সংস্কৃতিকে দূরে ঠেলে দেয়া, ধর্মের প্রতি আনুগত্য না থাকা, শিক্ষার প্রতি অনীহা এই বিষয়গুলি আমাদেরকে পরিহার করতে হবে।
আপনার বিবেক যেগুলো বলবে এ কাজটা আমার করা ঠিক হচ্ছে না, আপনার ভিতর থেকে যখন নাড়া দেবে এই কাজটি দ্বারা সমাজের ক্ষতি হতে পারে তখনি আপনি সেই কাজ থেকে বিরত থাকবেন।
আপনি মানুষ আপনাকে হুশ হয়ে চলতে হবে।
বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাদের সামাজিকভাবে দায়বদ্ধতা রয়েছে। তারা চাইলে একটি সমাজকে সুন্দর হবে গঠন করতে পারে। রাজনীতি হবে দেশ মানুষ ও সমাজের জন্য। রাজনীতি যেন নিজের ফায়দা হাসিল করতে না হয়। রাজনীতি একটি পবিত্র বিষয়। আর এই রাজনীতি যারা করে তাদেরকে বলা হয় রাজনৈতিক নেতা। রাজনৈতিক নেতার হাত ধরেই সমাজ সুন্দর পথে চলতে পারে। কারণ সমাজে সত্যবতী নেতার কথা সবাই শুনে। সমাজে কিছু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী থাকতেই পারে। তাদেরকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে তাদেরকে বুঝিয়ে সমাজের আর দশ জন মানুষের জন্য শান্তি প্রক্রিয়ায় কাজ করে যেতে হবে।
রাজনীতি হোক শোষণমুক্ত। রাজনীতি ও সমাজের দর্পণ। যে দর্পণ এর মাধ্যমে সমাজের সুন্দর চিত্র ফুটে উঠবে।
সর্বোপরি, আপনার পেশার প্রতি আপনার শ্রদ্ধা থাকতে হবে আপনি যত ছোট পেশা বা বড় পেশাই যুক্ত থাকেন না কেন। আপনি যত বড় হবেন আপনি ততই জাতির কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেবেন। আপনি এই সমাজেই জন্ম লাভ করেছেন তাই এ সমাজের প্রতি আপনার দায় রয়েছে।
আপনার যখন কিছু পয়সা করি হয়ে যায় যখন একটা দামি গাড়ি একটি দামি বাড়ি হয়ে যায় তখন আপনি আর সমাজের অন্যান্য লোকদেরকে ভালরূপে নিতে পারেন না। তাদেরকে আপনি অনেকটাই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন তাদের সামন্য একটু ভুলের জন্য তাদেরকে আপনারা গালাগাল করেন।
কিন্তু আপনি কি ভেবেছেন সমাজের এই লোকগুলোর মধ্যেই আপনার পিতা-মাতার চেহারা দেখা যায়। আপনার পিতা মাতা কতটা কষ্ট করে আপনাদেরকে একটা ভালো অবস্থানে নিয়ে গিয়েছে! আপনি হয়তো আপনার মেধার দ্বারা ভালো জায়গায় কোন চাকরি বাকরি বা ভাল ব্যবসা করছেন কিন্তু আপনি যখন বেড়ে উঠেছেন আপনার পিছনে আপনার পরিবার কতটা শ্রম দিয়েছে? কতটা দুঃখ কষ্ট করে আপনাদেরকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলেছেন!
সবথেকে বড় বিষয় হচ্ছে সমাজের আশেপাশে
আপনারা চেয়ে দেখুন আজকে যে ছেলেটা অনেক গরীব সে কালকে হয়তোবা অনেক বড় ধনী হয়ে যাচ্ছে। অথবা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হয়ে যাচ্ছে। হচ্ছে কোনো বড় বিজ্ঞানী। আবার এও দেখুন যারা সম্পদশালী ছিল তাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তোবা রাস্তার ধারে সমাজের মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইছে। এটা একটা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। তাই এই বিষয়গুলা ধারণা রেখে আমরা মানুষকে মর্যাদা দেবো।মানুষ হয়ে আমরা মানুষের জন্য কাজ করে যাব।আমাদের আচরণের দারা কোন মানুষ যেন কষ্ট না পায়।
তাই আসুন আমরা নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, অসহায়, ধনী আমরা সকলে এই সমাজে মিলেমিশে বসবাস করি। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলি।
কাজী তৈমুর
নাগড়া, মহম্মদপুর, মাগুরা