মাটির নিচে পুঁতে রাখা একের পর এক মাইন খুঁজে বের করে অসংখ্য মানুষের প্রাণ রক্ষা করা কম্বোডিয়ার স্বর্ণপদক জয়ী ইঁদুর মাগাওয়া মারা গেছে।
সেটির বসয় হয়েছিল আট বছর।
বিবিসি জানায়, মাগাওয়া তার পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে ১০০টির বেশি ল্যান্ডমাইন এবং অন্যান্য বিস্ফোরক খুঁজে বের করেছে।
মানুষের পুঁতে রাখা মাইন খুঁজে বের করতে বেলজিয়ামের দাতব্য প্রতিষ্ঠান অ্যাপোপো ইঁদুরকে প্রশিক্ষণ দেয়। ১৯৯০ সাল থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ওইসব ইঁদুরগুলোকে বলা হয় ‘হিরো র্যাটস’।
সেগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত সব থেকে সফল মাগাওয়া। কম্বোডিয়া জুড়ে প্রায় ৬০ লাখ মাইন পুঁতে রাখা আছে বলে ধারণা করা হয়।
অ্যাপোপো জানায়, সপ্তাহান্তে ‘শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে’ মাগাওয়া।
‘‘মাগাওয়ার স্বাস্থ্য ভালো ছিল। জীবনের শেষ কয়েক সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় সে খেলে কাটিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে সে নড়াচড়া কমিয়ে দেয়, বেশিরভাগ সময় ঘুমাতে শুরু করে। শেষ কয়েক দিন খাবারের প্রতিও তার কোনো আগ্রহ ছিল না।”
‘আফ্রিকান জায়ান্ট পাউচ র্যাট’ মাগাওয়ার জন্ম তাঞ্জানিয়ায়। কম্বোডিয়ায় মাইন শনাক্তের কাজ শুরু করার আগে মাগাওয়াকে তাঞ্জানিয়ায় একবছর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
মাগাওয়াকে ছেড়ে দিলে সে তার আশেপাশের এক লাখ ৪১ হাজার স্কায়ার মিটারের মধ্যে কোনো মাইন থাকলে সেটি খুঁজে বের করতে পারতো। যা প্রায় ২০টি ফুটবল মাঠের সমান।
এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের মাগাওয়া ছিল ৭০ সেন্টিমিটার লম্বা। সে তার প্রজাতির অন্যান্য ইঁদুরের চেয়ে মোটা ছিল।
অ্যাপোপো কর্তৃপক্ষ বলেছেন, টেনিস খেলার একটি মাঠের সমান কোনো জায়গায় মাইন আছে কি না তা মাত্র ২০ মিনিটের ভেতর বের করে ফেলতে পারতো মাগাওয়া। যে কাজটি একটি মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে কোনো মানুষকে করতে এক থেকে চার দিন লাগবে।
মানুষের প্রাণ বাঁচানোর দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০২০ সালে মাগাওয়াকে পিডিএসএ স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। প্রাণীদের সাহসী কর্মকাণ্ডের জন্য এ পদক দেয়া হয়ে থাকে। এ সম্মাননাকে বলা হয় প্রাণীদের জন্য জর্জ ক্রস পদক । সাহসিকতার জন্য ব্রিটিশ সরকারের সর্বোচ্চ পদক জর্জ ক্রস।
অ্যাপোপোর ৭৭ বছরের ইতিহাসে মাগাওয়াই প্রথম প্রাণী, যে পিডিএসএ পদক অর্জন করেছে।
গত বছর জুনে কাজ থেকে অবসরে যায় মাগাওয়া।
অ্যাপোপোর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘আমরা অ্যাপোপোর সবাই মাগাওয়াকে হারানোর বেদনা অনুভব করছি। সে যে অসাধারণ কাজ করছে তার জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ।
‘‘তার তীব্র ঘ্রাণশক্তির কারণে কম্বোডিয়ার লোকজন জীবন হারানো বা অঙ্গহানির ভয় ছাড়াই বাঁচতে, কাজ করতে এবং খেলাধূলা করতে পেরেছে।”