লক্ষ্মীপুর থেকে সাজ্জাদুর রহমান ফরহাদ : আজ (৪ ডিসেম্বর) লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সর্বাত্মক আক্রমণ চালিয়ে জেলায় অবস্থানকারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন। আর এর মধ্য দিয়ে লক্ষ্মীপুরবাসী মুক্তি পায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আল বদরদের হত্যা, লুট, আর নির্যাতনের হাত থেকে। এর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো সময়জুড়ে লক্ষ্মীপুর জেলা ছিল পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষত-বিক্ষত।
লক্ষ্মীপুরকে হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘ ৯ মাস জেলার বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে ১৭ টি সম্মুখ যুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। এতে শহীদ হন ১১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েক হাজার মুক্তিকামী বাঙ্গালী। পাক-হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে সর্বপ্রথম মুক্তিযোদ্ধারা লক্ষ্মীপুর শহরের মাদাম ব্রীজটি বোমা বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়। আজও এর স্মৃতি হিসেবে ব্রীজের লোহার পিলার দাঁড়িয়ে আছে।
মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ধরে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে নারকীয় তাণ্ডলক্ষ্মীপুরবলীলা চালায়। হানাদার বাহিনী শহরের বাগবাড়ীতে ক্যাম্প স্থাপন করে বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিকামী হাজার হাজার নর-নারীকে ধরে এনে টর্চার সেলে নির্যাতন চালাত এবং নারীদের পাশবিক নির্যাতন শেষে হত্যা করে বাগবাড়ীর গণকবর, মাদাম ব্রিজ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গর্তে পুঁতে ফেলত। আবার অনেককেই ফেলে দিত খরস্রোতা রহমতখালী নদীতে। নারকীয় এসব হত্যাযজ্ঞের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে শহরের বাগবাড়ীর গণকবর, মাদাম ব্রিজ, পিয়ারাপুর ব্রিজ ও মজুপুরের কয়েকটি হিন্দু ও মুসলমান বাড়ি।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী এবং সুবেদার আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সাঁড়াশি আক্রমণ চালান হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে। অবশেষে ৪ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় হানাদার বাহিনী ও এর দোসররা।