রাজধানী ডেস্ক : করোনা মহামারির সময়ে বাংলাদেশে বহু তরুণ-তরুণী কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। দেশে মহামারির আগে আয়মূলক কাজে নিযুক্ত তরুণীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (২৯ শতাংশ) চলতি বছর জানুয়ারির মধ্যেই চাকরি হারিয়েছেন। একই সময়ে কাজ হারিয়েছেন ১১ শতাংশ তরুণ। এরই মধ্য যে তরুণীরা পুনরায় উপার্জনের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন, তাদের আয় মহামারির আগের আয়ের থেকে ২১ শতাংশ কমে গেছে। অন্যদিকে, কাজ হারানো তরুণদের মধ্যে যারা নতুন করে কাজে যুক্ত হয়েছেন তাদের আয় আগের চেয়ে ১০ শতাংশ কমেছে।
রবিবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন ওয়েবিনারে একটি সমীক্ষার ফলাফল হিসেবে উপরের তথ্য উপস্থাপন করেছেন।
সমীক্ষায় উত্তরদাতারা উল্লেখ করেন, শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো, হস্তশিল্প, কারখানার চাকরি, দর্জির কাজ এবং হালকা প্রকৌশলের মতো ক্ষেত্রে সাধারণত তরুণীদের কর্মসংস্থান হতো। কিন্তু এই খাতগুলোই মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। এই খাতগুলোকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসা খুব কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ, তাই করোনাকাল শেষেও তরুণীদের জন্য চাকরিতে ফিরে আসতে অসুবিধা হবে।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি (এসডিপি) বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস (১৫ জুলাই) উদযাপনের অংশ হিসেবে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে। এর শিরোনাম ছিল, “বিল্ডিং অ্যা রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেম ফর উইমেন ইন দি স্কিলস সেক্টর:চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড প্রস্পেক্টস”।
ব্র্যাক এসডিপির অপারেশন প্রধান জয়দীপ সিনহা রায় অনুষ্ঠানে কয়েক বছরের এসডিপি-র কার্যক্রম বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেন।
জরিপের ফলাফল তুলে ধরে ড. মতিন বলেন, দীর্ঘ সময় বেতনহীন থেকে অনেক শ্রমজীবী নারী স্থায়ীভাবে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হতে পারেন, যা শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণের স্বল্প হারকে আরো কমাতে পারে। সংশোধনমূলক ব্যবস্থা না নিলে এই কভিড-১৯ এর আঘাত নারীর ক্ষমতায়নের অনেক অগ্রগতি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারে।
ওয়েবিনারে বক্তারা প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব এবং স্থানীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত দক্ষতার প্রশিক্ষণ এবং বিকাশে সচেতনতার ওপর জোর দেন।
এর আগেও ব্র্যাকের এসডিপির সহযোগিতায় বিআইজিডি নারীদের স্বাবলম্বী করতে দক্ষতা-প্রশিক্ষণের টেকসই প্রভাব চিহ্নিত করে বিভিন্ন গবেষণা চালিয়েছে। এই ওয়েবিনারে পেশাদারদের একটি প্যানেল তাদের ধারণা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
তাদের মতে, বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত প্রমাণভিত্তিক অনুসন্ধানগুলি বিবেচনায় নিয়ে নারীদের জন্য সহনশীল ইকোসিস্টেম তৈরি করা দরকার।
উপস্থাপনাটিতে আলোকপাত করা হয়, সংস্কৃতি, প্রচলিত জেন্ডার ধারণা, ক্যারিয়ারের দিকনির্দেশনা না থাকা, সুরক্ষা উদ্বেগ বিশেষত লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা এবং যৌন হয়রানির ভয়, পারিবারিক দায়বদ্ধতাই কিশোরী ও তরুণীদের দক্ষতা প্রশিক্ষণের বড় বাধা।
এই খাতে পরিবর্তন আনতে জয়দীপ পাঁচটি প্রকল্পের মডেল উপস্থাপন করেছিলেন – এন্টারপ্রাইজ বিকাশ, উদ্যোক্তা, কর্মসংস্থান, শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষানবীশ প্রশিক্ষণ।
উপস্থাপনাটিতে সুপারিশ করা হয়- ব্যক্তি ও গৃহস্থালী উভয় স্তরে দক্ষতা প্রশিক্ষণ, দক্ষতার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রম বাজারে প্রবেশাধিকার, নারীর প্রতি উপলব্ধি পরিবর্তন, শ্রম বাজারে নারী-বান্ধব পরিবেশ সক্রিয়করণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হবে।
পরে ব্র্যাক স্কিলস ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের বর্তমান ইনচার্জ তাসমিয়া তাবাসসুম রহমান একটি আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন। এতে অংশ নেন ব্র্যাকের জেন্ডার, বিচার ও ডাইভারসিটি প্রোগ্রামের পরিচালক নবনিতা চৌধুরী, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রোগ্রাম অফিসার তাহমিদ আরিফ, এবং নাটোরভিত্তিক নেদা সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক জাহানারা বিউটি।
ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস ও ডাইভারসিটি প্রোগ্রামের পরিচালক নবনিতা চৌধুরী ডিজাইনিং ইন্টারভেনশনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন “ইন্টারভেনশনগুলো আলাদাভাবে ডিজাইনের পরিবর্তে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের মূলধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা উচিত।”
আইএলও-র প্রোগ্রাম অফিসার (এমএন্ডই) তাহমিদ আরিফ বলেন, “মানসিকতার পরিবর্তন কেবল মহিলা যুবকদের দক্ষতা প্রশিক্ষণের জন্যই নয়, তাদের কর্মসংস্থানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। প্রশিক্ষণ পরিচালনা যথেষ্ট নয়, তারা যেন কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় এবং সেই সুযোগটি টেকসই হয় তাও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। “
নারী কর্মীদের মধ্যে কভিড -১৯ এর মারাত্মক প্রভাবের কথা তুলে ধরে নেদা সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক জাহানারা বিউটি বলেন, “কভিডের সময়কালে অনেক নিয়োগকর্তা অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে তরুণীদের পরিবর্তে পুরুষদের রাখতেন। যেহেতু অনেক নারীকে চাকরি ছাড়তে হয়েছিল। এটি কেবল তাদের উপার্জনেই নয়, তাদের সঞ্চয় একেবারেই কমে যাওয়া, নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি এবং বাল্য বিয়ের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ”