বিনোদন ডেস্ক, আজনিউজ২৪: অনেক দিন পর দেশের ছোটপর্দার জগতে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে ধারাবাহিক নাটক ব্যাচেলর পয়েন্ট। এটি ধারাবাহিক টেলিভিশনে যেমন জনপ্রিয়, তেমনই জনপ্রিয় সোশ্যাল প্ল্যাটফরমেও। টেলিভিশনে প্রচারের পরেও সোশ্যাল প্ল্যাটফরমে লাখ পেরিয়ে কোটি মানুষ এই নাটক দেখছে। নানা কারণেই এটি জনপ্রিয়। এর প্রতিটি চরিত্রও আলাদাভাবে জনপ্রিয়। কাবিলা, পাশা ভাই, হাবু, শিমুল, রোকেয়া, অন্তরা, নেহাল প্রভৃতি চরিত্রে প্রত্যেকে আলাদাভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন শুধু এই ধারাবাহিকের কারণে।
যখন ব্যাচেলর পয়েন্ট জনপ্রিয়তার তুঙ্গে তখনই শেষ। সিজন-৩-এর ৭৯ পর্ব প্রচারের মাধ্যমে শেষ হয়ে যায় ধারাবাহিকটি। নির্মাতার দিক থেকে শেষ হলেও দর্শকরা এই শেষ মেনে নিতে পারছেন না। একই সঙ্গে শেষ দৃশ্যে কাবিলার জেলে যাওয়াও মানতে পারছেন না। নাটকের নতুন সিজন, নতুন পর্ব দর্শকরা দেখবেন এমন প্রত্যাশায় সোশ্যাল প্ল্যাটফরমগুলোতে তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঠিক এই অবস্থায় কথা হলো ব্যাচেলর পয়েন্টের নির্মাতা কাজল আরেফিন অমির সঙ্গে। তিনই অনেক কিছুই স্পষ্ট করলেন ব্যাচেলর পয়েন্টের ভূত-ভবিষ্যৎ সম্পর্কে।
তুমুল জনপ্রিয়তার মাঝে হুট করে ব্যাচেলর পয়েন্ট শেষ করে দিলেন, কেন?
প্রথম কথা হচ্ছে, আমি দ্য এন্ড বলছি, সেটা সিজন থ্রির দ্য এন্ড। পরবর্তীতে কী হবে না হবে তা নিয়ে কিন্তু আমি কোনো কথা বলিনি বা অ্যানাউন্সমেন্ট দিইনি। সেটি আসলে কেউ জানে না যে এর পরে আমার ভাবনাটা কী, এখনো ভাবনার মধ্যে আছি।
সদ্যঃসমাপ্ত দীর্ঘ জার্নির কোন বিষয়টা পীড়া দেয়?
পীড়া দেওয়ার বিষয়টা হলো, আমাকে দুইটা জিনিস পীড়া দেয়। দিনের পর দিন ব্যাচেলর পয়েন্টের দর্শক বেড়েছে। শুধুই বেড়েছে। কিন্তু কখনো যদি এই দর্শকরা বলে ব্যাচেলর পয়েন্ট নিয়ে আমরা হতাশ- এই ভাবনাটা আমাকে পীড়া দেয়। মানে ব্যাচেলর পয়েন্ট নিয়ে কেউ হতাশ হোক এটা আমি হয়তো নিতে পারব না। সে জন্যই আমার লক্ষ্য থাকে দর্শককে সব সময় হ্যাপি করতে হবে। ব্যাচেলর পয়েন্ট আমি তখন শেষ করব ভেবেছি, যখন ব্যাচেলর পয়েন্টের একটা শক্ত জায়গা তৈরি হয়েছে এখন আমি ইতি টানতে পারি।
সেটা আপনার মনে হলো; কিন্তু দর্শকদের, ভক্তদের দিকটা বিবেচনায় আনা দরকার ছিল না?
ইন ফিউচারে কী হবে আমি তো বলি নাই। আমি নিশ্চিত করে বলছি ব্যাচেলর পয়েন্ট মরে যায়নি, এটা মরে যাবে না। আমার এই চরিত্রগুলো মরতে দেব না। এরা জীবিত থাকবে। আমার কাছে জীবিত থাকবে, আমার দর্শকদের কাছে জীবিত থাকবে। এটা নিয়ে ভাবছি কী করা যায়।
তার মানে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে ব্যাচেলর পয়েন্টের নতুন সিজন আসবে?
এইটা সিজনও আসতে পারে। অন্য কোনো কিছুও হতে পারে। আমি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। এই চরিত্রগুলো কে কোথায় আছে, আমি অবশ্যই দর্শকদের দেখাব। মাধ্যমটা পরিবর্তন হতে পারে, গল্প বলার ঢং পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু এই চরিত্রগুলো এখানে হারিয়ে যাবে না।
খ্যাতি পেলে আরো পেতে চায়, আপনিও পেতে পারতেন- সেখান থেকে পিছু হটার কারণ কী আসলে?
সত্যি কথা বলতে কি, ব্যাচেলর পয়েন্টকে নিয়ে আমি কখনো বিজনেস করতে চাইনি। আমি বিজনেস ওরিয়েন্টেড নই, ব্যাচেলর পয়েন্টকে ওভাবে চিন্তাও করতে পারিনি। সব সময় এটাকে এক্সক্লুসিভলি প্রেজেন্ট করতে চেয়েছি। ব্যাচেলর পয়েন্ট নিয়ে আমি অনেক ধরনের অফার পেয়েছি। প্রডাক্ট প্লেসমেন্ট থেকে শুরু করে টিভিসিসহ বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় অফার পেয়েছি। যদি ব্যাচেলর পয়েন্ট থেকে বিজনেস করতাম, তাহলে অনেক টাকা আর্ন করতে পারতাম বা আমার টিম অনেক টাকা আর্ন করতে পারত। কিন্তু জিনিসটা মানুষের কাছে এক্সক্লুসিভ থাকত না, রেগুলার হয়ে যেত। ব্যাচেলর পয়েন্ট এক্সক্লুসিভ থাকবে- এটাই আমার সবচেয়ে বড় চাওয়া।
ব্যাচেলর পয়েন্ট নিয়ে নেতিবাচক মনোভাবও রয়েছে মানুষের, কিছু সংলাপেও আপত্তি রয়েছে অনেকের- এটা মানেন?
আমি ধন্যবাদ দেব তাদের যে আমার কাজটা তারা কষ্ট করে দেখছে। আমি সফল এই জায়গায় যে, যে লোকটা আমাকে গালি দেয় তাকেও আমি বাধ্য করছি আমার কাজটা দেখার জন্য। দিস ইজ দ্য থিংক। সেকেন্ড থিংক হচ্ছে আপনি যে পাঞ্জাবি পরেছেন, পাঞ্জাবিটা আপনার পছন্দ হয়েছে, আপনি কিনেছেন- একই শোরুমে আমি যদি শপিংয়ে যাই তাহলে এই পাঞ্জাবিটা কিনব না। কারণ আমার ডার্ক কালারটা পছন্দ না, আমার পছন্দ লাইট কালার। সিম্পল, যে কোনো জিনিসের নেগেটিভ পজিটিভ দিক চলে আসে। তবে আমি সব সময় মেজোরিটি কাউন্ট করি।
কেন এত জনপ্রিয়তা ব্যাচেলর পয়েন্টের, ব্যাচেলর পয়েন্ট ইতিবাচক কোনো বার্তা দিয়েছে?
আমি সম্পর্কের গল্পটা বলতে চেয়েছি। বন্ধুত্বের গল্প বলতে চেয়েছি। আমার প্রবাসী বন্ধুরা হাউমাউ করে কেঁদে অডিও রেকর্ড পাঠিয়েছে। সিজন-১-এ হাবুর ফ্ল্যাটে আসে এই চরিত্রগুলো। সে সময় তাদের নিজের মধ্যে অনেক জটিলতা ছিল। কিন্তু সিজন-৩-এ দেখা গেল, এই হাবু যখন বিদেশ চলে যাচ্ছিল, তখন এই চরিত্রগুলো কাঁদতেছে। এই পাশা চরিত্রকে কেউ দেখতে পারত না। তাকে ফ্ল্যাট থেকে বের করার জন্য অনেক পরিকল্পনা করা হতো। কিন্তু এখন এই পাশা ওদেরকে বুকে আগলে রাখছে, ওদের ঝগড়া মিটিয়ে দিচ্ছে। এটা কী? এটা একটা রিলেশনশিপের গল্প। এটার তো সামাজিক ইতিবাচক প্রভাব আছেই।
ব্যাচেলর জীবনের সম্পর্কগুলো একটা সময় অনেক গভীরে চলে যায়, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর সেটা স্পষ্ট হয়। একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি পর্যায়ক্রমকে প্রায় বড় শ্রেণির জন্য এটা অনুভূতির বিষয়। আমি চেষ্টা করে সম্পর্কের গল্প বলতে। আমার সফলতা হলো, সিজন-৩-এর শেষ পর্যায়ে এসে এত রেসপন্স পেয়েছি, মানুষগুলো তাদের ব্যক্তিজীবনে ঐ সম্পর্কগুলো মিস করতে পেরেছে- দিস ইজ মাই সাকসেস।