ইকোনোমিক ডেস্ক, আজনিউজ২৪: করোনা মহামারিতে দীর্ঘ এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে প্রদর্শনী, বিয়ে, সভা-সেমিনারসহ সব ধরনের বড় অনুষ্ঠন। আগে থেকে বুকিং দেওয়া বিভিন্ন প্রদর্শনী ও সম্মেলনের আয়োজনগুলোও বাতিল করা হয়েছে। ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে দেশের কনভেনশন সেন্টার এবং এ সংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। জীবিকার অনিশ্চয়তায় আছে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনুষ্ঠাননির্ভর কয়েক লাখ কর্মী।
দেশের দুই বৃহৎ প্রদর্শনী সেন্টার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি) ও বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে (বিআইসিসি) গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। নানা ধরনের অনুষ্ঠনে সারা বছর জমজমাট থাকা দেশের সবচেয়ে বড় এই দুটি কনভেনশন সেন্টার এখন অলস পড়ে আছে। এখানকার যেসব কর্মী দম ফেলার ফুরসত পেতেন না তাঁরা এখন কর্মহীন, অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তাঁদের।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, করোনায় ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখে তাঁরা। বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী, কম্পানিগুলোর করপোরেট ইভেন্ট, বিয়ে, গায়ে হলুদ, জন্মদিন, কনসার্ট, ফ্যাশন শো, পণ্যের প্রচার, পুনর্মিলনী ইত্যাদি আয়োজন হয়ে থাকে কনভেনশন সেন্টারগুলোতে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত মার্চের শেষ দিকে এসে সব ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে বুকিং দেওয়া প্রদর্শনী, সম্মেলনসহ সব ধরনের আয়োজনগুলো বাতিল করা হয়। কনভেনশন সেন্টারে এক্সিবিশন ও সেমিনার করার অনুমতি না থাকায় সেগুলো এখন হচ্ছে ভার্চুয়ালি। ফলে আর্থিক সংকটের পাশাপাশি টিকে থাকার সংকটেও পড়ছে দেশের কনভেনশন সেন্টারগুলো।
বিআইসিসির ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সাল আমাদের জন্য খুব খারাপ সময় গেছে। আমাদের অনেক প্রগ্রামের বুকিং বাতিল করতে হয়েছে। নতুন কোনো বুকিং হচ্ছে না। অনুষ্ঠান আয়োজন না থাকায় কেউ সম্পূর্ণ বেতনও পাচ্ছে না। আমাদের সার্ভিস চার্জ ছিল সেটাও বন্ধ। সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক। তবে এখন সীমিত পরিসরে বিয়েসহ কয়েকটি অনুষ্ঠান আয়োজন হচ্ছে।’
দেশের সবচেয়ে বড় কনভেনশন সেন্টার আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ মাস থেকে এই বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ সময়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারিনি। আগে থেকেই বুকিং দেওয়া বিভিন্ন প্রদর্শনী ও সম্মেলনের আয়োজনগুলোও বাতিল করতে হয়েছে। ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে গেছি আমরা। আইসিসিবিতে সাড়ে ৩০০ লোক স্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত। এমন করে এই খাতের প্রতিটি কনভেনশন সেন্টারে কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁদের পেছনে প্রতি মাসে বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই খাতের লাখ লাখ কর্মীর জীবিকা টিকিয়ে রাখতে সরকার যদি উৎসাহমূলক কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থা করে তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সুবিধা হবে।’
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সব মিলিয়ে এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২০ লাখের মতো মানুষ জড়িত রয়েছে। এক বছর ধরে অনুষ্ঠানের আয়োজন না থাকায় জীবিকার অনিশ্চয়তায় আছে তারা। তাদের মধ্যে যারা ফটোগ্রাফি, সাজসজ্জা, লজিস্টিক সেবা দেয়, ফুল সরবরাহ করে, বোর্ড মিস্ত্রি, ডেকোরেশন ও ক্লিনিং কাজসহ বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাঁরা সবাই এখন বেকার হয়ে পড়েছেন। তাঁদের অন্য কোনো কাজে দক্ষতাও নেই।’
আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘অন্য খাতগুলোতে সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হলেও আমাদের এই খাত কিভাবে চলবে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। গত নভেম্বর থেকে ভারতে বিভিন্ন কনভেনশন সেন্টারগুলোতে প্রদর্শনী ও অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু হয়েছে। আমাদেরও বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করার সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। যেসব প্রতিষ্ঠান অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চায় তাদের সুযোগ করে দেওয়া। অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রশাসন যাতে কোনো ধরনের বাধা না দেয় এই বিষয়টিও নিশ্চিত করা দরকার।’
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও স্কাই ট্র্যাকারের প্রধান নির্বাহী দোজা এলান বলেন, ‘ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে জড়িত আছে দেশের পাঁচ লাখের বেশি মানুষ। কাজ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে মানুষগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকে পেশা বদল করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আবার অনেকে কাজের সুযোগ না পেয়ে গ্রামে চলে গেছেন। আমার প্রতিষ্ঠানেই ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন, বেতন দিতে না পেরে তাঁদের মধ্যে অর্ধেককেই ছাঁটাই করে দিতে হয়েছে। সরকারের কোনো ধরনের সহায়তা আমরা পাইনি। সরকার যদি সুনজর দেয় তাহলে এই খাতের মানুষগুলো স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরত পারবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের উচিত এখনি সব ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের সুযোগ করে দেওয়া। ভারতে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে লকডাউন তুলে না নেওয়ায় আমরা বড় কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারছি না।’
শীর্ষস্থানীয় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা সাভোর ইন্টারন্যাশনালের এমডি মো. ফয়জুল আলম বলেন, ‘প্রদর্শনী বন্ধ থাকলে বাণিজ্যের প্রসার ঘটে না, নতুন পণ্যের প্রচার হয় না। এ কারণে বৈশ্বিক ক্রেতারা অর্ডারও করতে পারেন না।’
সূত্র: কালের কণ্ঠ