মুক্তমঞ্চ ডেস্ক, আজনিউজ২৪: কখনো সুখের, কখনো দু:খের কথা মনের মধ্যে জমে থাকে। আর এই জমে থাকা কথাগুলোকে প্রকাশ করতে হয় কখনো আপনজনের কাছে, কখনো আবার প্রিয় বন্ধুদের মাঝে। অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ পায় মনের কথাগুলো। তাই আজ এমনই এক বন্ধুর কথাগুলো আমারও হৃদয়েও আঘাত এনেছে। আমি ১৯৯৪ সালে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শব্দ ‘মা’ ‘আম্মা’ ‘আম্মু’ জননীকে হারিয়েছি। সেইদিনটিও আমার জন্য ছিলো আরেকটি অন্ধকারাচ্ছন্ন রজনী। তাই আমার ৯৬৯৮’র আশরাফুল আলীম বন্ধুর টাইমলাইন থেকে নেয়া একটি ছোট্ট গল্প তুলে ধরেছি আমার অনলাইন ওয়েবপোর্টালে।
মা প্রিয় মাকে ক্যান্সার গ্রাস করেছিলো। দিনটি ছিলো ১৯৯৪ সালের ১৩ জুলাই।
সূর্যের আলোতে তখনও আলোকিত হয় নি দুনিয়া। শেষ রাতে (৩ঃ৪৫) মা আমাকে অন্ধকারে রেখে চলে যায়। সেই অন্ধকার রাত আমাকে এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়।
আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। আমরা ৬ ভাই-বোন
(৩ ভাই আর ৩ বোন), আমি সবার ছোট। তাই মায়ের মায়ের খুব আদরের ছিলাম।
জেলা শহরের চিকিৎসা ব্যাবস্থা এখনো ভালো না। আর ১৯৯৪ সালের অবস্থা কেমন হতে পারে বুঝতেই পারছো। আমরা সিরাজগঞ্জ শহরে তখন। পেটে ব্যাথা, মাকে নিয়ে বড় ভাই বোনরা আর বাবা এ ডাক্তার ও ডাক্তার, এ রিপোর্ট ও রিপোর্ট করিও বিভিন্ন ওষুধ খেয়েও কোন লাভ হচ্ছে না।
আমাদের পরিচিত এক ডাক্তার বললেন গল্ড ব্লাডারে পাথর হয়েছে অপারেশন করে বের করে দিলেই ভালো হয়ে যাবে। আমরা সবাই হাফ ছেড়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অপারেশন করার জন্য মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। সকাল ৮ টায় অপারেশন শুরু কিন্তু অপারেশন শেষ হয় না।
ডাক্তারা কিছু বলছে। অপারেশন করে ডাক্তারা চিন্তিত, ওটি থেকে মাকে বের করে না। দুপুরে ডাক্তারদের বোর্ড বসে আমাদের কে জানিয়ে দিলো, ক্যান্সার হয়েছে। যে অবস্থায় আছে তাতে খুব বেশি ৩/৪ মাস বাঁচবে।
মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। অপারেশন করলে মা ভালো হয়ে যাবে, সেখানে মা মারা যাবে এটা কল্পনাতেও আসে নি। কি আর করা, ওটি থেকে মাকে বেডে দিয়ে দিলো। এর কয়েক দিন পর বাসায় নিয়ে এলাম।
অপারেশন করার পর ক্যান্সার আরো ছড়িয়ে পরে। এতো তীব্র ব্যাথা হতো যে মা সবসময় চিৎকার করে কাঁদত। প্রথমে মা কে বলা হয় নি কিন্তু মা বুঝতে পারলো। এ ব্যাথা আর কমবে না। মায়ের অসহ্য ব্যাথা আর চিৎকার আমি সইতে পারতাম না। মা আমাকে প্রায় জড়িয়ে ধরে কাঁদত। আর আমার কথা ভাবতো।
এভাবে অপারেশনের ৩ মাস ১৮ দিন পর মা চলে গেলেন। মারা যাবার সময় মায়ের পাশেই ছিলাম। মাঝ রাতে ডাক পেয়ে বুঝতে বাকি রইলা না। তাড়াতাড়ি উঠে মায়ের পাশে বসে ছিলাম।
ক্যান্সার হওয়ার পর থেকেই কিছুই খেতে পারতো না, বমি করে ফেলত। ব্যাথা এতো তীব্র ছিলো যে ইনজেকশন দিলে এক ঘন্টা ভালো থাকতো এরপর আস্তে আস্তে ব্যাথা বাড়তো, দিনে তিনটা করে ইনজেকশন দিতে হতো।
ব্যাথা আর না খেতে খেতে মা শুকিয়ে মারা আগে শুধু হাড় গুলো দেখা যেত। চলে যাওয়ার আগে তেমন কিছু বলতে পারে নি। শুধু তাকিয়ে ছিলো আর হয়তো মনে মনে দোয়া করেছিলো। সেই দোয়া নিয়েই এখনো বেঁচে আছি। এগিয়ে চলছি।
কারো মায়ের অসুস্থতার কথা শুনলে আমার সেই অন্ধকার রাতের কথা মনে পরে, মায়ের কথা অনেক বেশি মনে পরে, মায়ের চলে যাওয়ার দৃশ্যগুলো চোখে পরে।
মা চলে যাওয়ার পর আমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। তখন নাইনে পড়ি, আমাকে শাসন করার কেউ ছিলো। অন্ধকার পথে এগুতে থাকি। সেই অন্ধকার পথে অনেক হেঁটেছি। মায়ের দোয়া ছিলো বলেই জীবনে আলো খুঁজে পেয়েছি। নইলে অন্ধকারের গলিতে হারিয়ে যেতাম।
আজ মাকে অনেক বেশি মনে পরছে তাই নিজেকে হাল্কা করতে লিখলাম।
সবার মায়ের জন্য দোয়া ও ভালোবাসা রইলো। আল্লাহ তাআলা সবার মাকে সুস্থ ও নেক হায়াত দান করুন। আর মায়ের পাশে থাকতে পারো সেই দোয়া করি। আমীন।
আর আমার মায়ের মতো যাদের মা পরপারে চলে গেছে, সেই মাদেরকে আল্লাহ তাআলা যেন জান্নাত দান করেন। আমীন।
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানী সাগিরা
সবার জীবন আলোকিত হোক, এই কামনায় করি।
[ বি:দ্র: – ৯৬৯৮’র বন্ধুদের মনের কথা প্রকাশ করতে চাই আমার অনলাইন ওয়েব পোর্টালে। আপনার মতামত ব্যক্ত করতে ই-মেইল করুন ]
ক্যান্সারের সাথে আমার পরিচয় ১৯৯৪ সালে….: আশরাফুল আলীম
মুক্তমঞ্চ
0 Views