ইকোনোমিক ডেস্ক, আজনিউজ২৪: নতুন বিনিয়োগ ও আমানত সংগ্রহ ছাড়া অটোমেশন নিয়ে নানা কাজ করেছেন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শামস উল ইসলাম। সেই সাথে উদ্যোক্তাদের সচেতনতার কারণে অগ্রণী ব্যাংক প্রচলিত ব্যাংকিং ধারা থেকে পুরো খাত বের হয়ে আসছে বলেও জানান তিনি। এসময় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস সংকটের প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে শিগগিরই রপ্তানি-বাণিজ্য স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে ডলার সংকট নেই, তারল্য সংকট নেই। নতুন এফডিআই আসছে। করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব কাটিয়ে আমাদের সামনে নতুন সুযোগ তৈরি হবে।’ বিশিষ্ট ব্যাংকার রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকে কয়েক বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন শামস উল ইসলাম। এই ব্যাংকে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি। পুরনো ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে সফলতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনী, তার লেখা বইপত্র নিয়ে ব্যাংকে গড়েছেন বঙ্গবন্ধু গ্যালারি। তার এই গ্যালারির ধারণা এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে করোনা সংকটকালীন দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকিং খাতের চাপ ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন এ প্রথিতযশা ব্যাংক কর্মকর্তা।
‘সংকট যেমন আছে, তেমনি সম্ভাবনাও আছে আমাদের সামনে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি শক্তিশালী হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ব্যাংকিং খাতেও নতুন অনেক কিছু সংযোজিত হচ্ছে। শামস উল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে আর্থিক লেনদেন বিবেচনায় দেশের সংকট নেই। কারণ ডলারের সংকট নেই। বাজারে পর্যাপ্ত নগদ টাকার সরবরাহ আছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দরও নিয়ন্ত্রণে। ফলে মানুষের ওপর সে অর্থে চাপ খুব কম। তবে এখন চাপ কিছুটা কম থাকলেও এটা দীর্ঘস্থায়ী হবে। বড় একটি ঝুঁকি আমাদের সামনে আছে। জুন পর্যন্ত কোনো পেমেন্ট নেই। ব্যাংকগুলোতে তাই তারল্যের সংকট নেই। তবে জুলাই মাসের পর বড় পেমেন্টগুলো দিতে হবে। তখন একটি বড় চাপ তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া এখন আমদানির পরিমাণ কম থাকায় ডলারের চাহিদা তুলনামূলক কম। সে কারণে ডলারের বাজারে সংকট দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া শুরু করলে বড় ধরনের চাপ তৈরি হবে। যেহেতু আমাদের রপ্তানি-বাণিজ্য প্রায় বন্ধই রয়েছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ এখন স্বাভাবিক থাকলেও দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকি আছে, সেজন্য ব্যাংক খাতে খুব সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘চাপ থাকলেও ব্যাংক খাতের সামনে সম্ভাবনাও আছে। চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ পরিস্থিতি বা বাণিজ্যযুদ্ধের একটি ইতিবাচক ফল বাংলাদেশের সামনে রয়েছে। এতে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হবে। চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও ভালো হবে, যা অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। বিপুল পরিমাণ এফডিআই আমাদের দেশে আসবে। বাণিজ্যিক সুযোগ তৈরি হবে।’ অগ্রণী ব্যাংকের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘ব্যাংক খাত থেকে সরকার যে ঋণ নেবে, তাতে সংকট বাড়বে বলে আমি মনে করি না। সরকার এ বছর বাজেটে অন্যান্য খাতের সঙ্গে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে নিয়ে আসার সুযোগ দিয়েছে। সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়ায় অনেক টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে আসবে। কিছু হয়তো শেয়ারবাজারেও যাবে। তারল্য সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। এটা দিয়ে চাপ সামাল দেওয়া যাবে।’ শামস উল ইসলাম বলেন, ‘করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি অ্যাপস করেছি। এর মাধ্যমে প্রবাসী শ্রমিকরা নিজের বাসায় বসেই দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন। মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের সঙ্গে আমরা একটি লেনদেন চালু করছি। এর মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংকের গ্রাহক দুই অ্যাকাউন্টে লেনদেন করতে পারবেন। মানুষ এখন নগদ ক্যাশ হাতে নিতে চান না। তারা মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই লেনদেন করতে চান। করোনা-পরবর্তী আমাদের এই অটোমেশন ব্যাংকিং ম্যাসিভ আকারে বাড়বে। এটি একটি বড় ইতিবাচক পরিবর্তন হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ৩০ জনের বেশি কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর পরও আমরা সব ধরনের কার্যক্রম চালু রেখেছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোস্টারিং করে কর্মকর্তারা অফিস করছেন। গ্রাহকদের সব ধরনের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)-এর পরিচিতি
মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। ১৯৮৪ সালে ব্যাংকটির সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৮ সালে পদোন্নতি পান মহাব্যবস্থাপক হিসেবে। পরে ডিএমডি হন। এরপর আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পান শামস-উল ইসলাম। ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট তিনি যোগ দেন অগ্রণী ব্যাংকের এমডি ও সিইও হিসেবে।
জেনে নেই অগ্রণী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালের ইতিহাস :
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভের পর বাংলাদেশ ভূখন্ডে অবস্থিত সকল ব্যাংককে জাতীয়করণের আওতায় আনা হয়। এই প্রেক্ষাপটে ব্যাংকটি ১৯৭২ সালের ২৬শে মার্চ (বাংলাদেশ ব্যাংকস জাতীয়করণ আদেশ ১৯৭২ পিও নং ২৬) অধ্যাদেশের মধ্য দিয়ে সাবেক হাবিব ব্যাংক লিমিটেড ও সাবেক কমার্স ব্যাংক লিমিটেড এর বাংলাদেশ ভূখন্ডে অবস্থিত শাখা এবং সমুদয় দায় ও সম্পদ সমন্বয়ে অগ্রণী ব্যাংক একটি রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। অগ্রণী ব্যাংক শুরুতে ৫ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধন ও ১ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ১৭ই মে তা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়।অগ্রণী ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা পর্ষদ যার প্রধান একজন চেয়ারম্যান। বর্তমানে (প্রেক্ষিত ২০১৪) অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ডঃ জায়েদ বখত এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জনাব মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এই ব্যাংকের ১১টি পরিষদ অফিস, ৩৬ টি বিভাগের হেড অফিস, ৩৪টি কর্পোরেট সহ ৫৩টি আঞ্চলিক অফিস এবং ৪২টি অনুমোদিত পরিবেশক শাখা সহ ৯৫৩টি শাখা রয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকে অনলাইন ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হয়। অগ্রণী ব্যাংকে বর্তমানে অনলাইন শাখার সংখ্যা ৯৩৫টি। ২৮, ফেব্রুয়ারি ২০১০ সালে অগ্রণী ব্যাংক বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম ইসলামী ব্যাংকিং ইউনিট চালু করে। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন, জাগো নিউজ ও উইকিপিডিয়া, ২৫ জুন ও ৪ জুলাই, ২০২০