জানা-অজানা ডেস্ক,এইউজেডনিউজ২৪: ৪২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের খেলনা প্লেন আকাশে উড়িয়ে মাগুরার মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টারের কর্মচারী হিরণ এলাকার সবাইকে তাক লাগিয়েছেন। মাগুরার বিনোদপুর বাজারের মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টারের কর্মচারী হিরণের তৈরি ফাইটার প্লেন আকাশে ওড়ে। হিরণ মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর মোল্যাপাড়ার মৃত আবুল খায়েরের ছেলে।
ইতোমধ্যে খেলনা প্লেন তৈরি করে আকাশে উড়িয়ে এলাকাবাসীর নজর কেড়েছে লেখাপড়া না জানা প্রত্যন্ত অঞ্চলের যুবক মো. হিরণ। তিনি খেলনা হিসেবে জেট ফাইটার বিমান ও প্লেন তৈরি করে আকাশে উড়িয়েছেন এবং স্পিডবোট তৈরি করে পানিতে চালাতে সক্ষম হয়েছেন। যা রিমোট দিয়ে কন্ট্রোল করা যায়। হিরণ উপজেলার বিনোদপুরের মোল্যাপাড়া এলাকার এক অসহায় দিনমুজুর পরিবারের ছেলে।
হিরণ অভাব অনটনের সংসারে থেকেও লেখাপড়ার পাশাপাশি অনেক স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠা সদা হাস্যোজ্জ্বল যুবক। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন ২০১৩ সালে দিনমুজুর বাবা আবুল খায়ের মারা যান। মা তাসলিমা বেগম ও দুই ভাইয়ের অভাবের সংসারের হাল ধরতে আর লেখাপড়া করতে পারেননি তিনি। দুই ভাইয়ের মধ্যে হিরণ ছোট।
অভাবের সংসারে চাহিদা মেটাতে এবং তিন বেলা খাবারের জন্য শিশুকাল থেকেই ভ্যান চালানো, গ্যাস লাইট মেরামত ও গ্যাস ভরাসহ নানা ধরনের কাজ করতে হয়েছে তাকে। তার আয়ে বড় ভাই এসএসসি পাস করে ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে তিনি বেকার হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন।
হিরণের আয়ে এখন চলছে চার সদস্যের পরিবার। তবে তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে পিছিয়ে নেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের লেখাপড়া না জানা হিরণ।
১৮ বছর বয়সী হিরণ বিনোদপুর বাজারে এনামুলের মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টারে বেতনভুক্ত সামান্য একজন কর্মচারী। মাসিক বেতন চার হাজার টাকা। কিন্তু হিরণের তুখোড় মস্তিষ্ক থেমে থাকেনি কখনও। মেধাবী হিরণ মনের আনন্দেই খেলনা হিসেবেই তৈরি করেছে ৪২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ২৯ ইঞ্চি প্রস্থের দুটি প্লেন, দুটি জেট ফাইটার বিমান ও দুটি স্পিডবোট।
খেলনা হলেও প্লেন আকাশে উড়তে সক্ষম। অনেক গতিতে চারদিকে দুই কিলোমিটার ঘুরে আসতে পারে এই প্লেন। স্পিডবোটও পানিতে চলতে পারে। ব্যাটারির চার্জ কমে গেলে একটা সংকেত দেয়। যার ফলে এটাকে হিরণ নামিয়ে আনতে পারে। খেলনা হিসেবে এলাকায় বিক্রয়ের জন্য তৈরি করলেও ব্যয় বেশি হওয়ায় এটা তিনি বিক্রি করতে পারেননি।
প্লেন-বিমান বা স্পিডবোটের কোনো একটি তৈরি করতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। যদি ভালো কোনো পৃষ্টপোষক পান তাহলে হিরণ এটিকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করবেন বলে জানান।
বিনোদপুর চৌরাস্তা বাজার বণিক সমিতির সভাপতি হরসিত ঘোষ বলেন, হিরণের বাবা হাট-বাজারে গান গাওয়াসহ বিভিন্ন সময় নানা ধরনের কাজ করে সংসার চালাতেন। হিরণ ও রনি লেখাপড়া করতো। ওদের মেধা ভালো ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে গিয়ে লেখাপড়া শিখতে পারেনি হিরণ। সহযোগিতা পেলে হিরণের মতো মেধাবীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।সূত্র : জাগো নিউজ২৪