ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, এইউজেডনিউজ২৪: ইসরাইলকে বয়কট, সেখানে বিনিয়োগ বন্ধ এবং দেশটির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে চলমান আন্দোলন বিডিএস-এর জ্যেষ্ঠ নেতা মাহমুদ নাওয়াজাকে আটক করেছে ইসরাইলি বাহিনী। বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) ভোরে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় দখলদাররা। মাহমুদের স্বজনরা মিডিলইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, ফিলিস্তিনে ঈদ-উল- আযহা উদযাপনের মাত্র একদিন আগে মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ছাড়া, বৃহস্পতিবার ও বুধবার রাতে মোট ১৭ ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করে ইসরাইলি বাহিনী।
মাহমুদের স্ত্রী রুবা আলায়ান বলেন, ‘ ভোর ৩টায় ইসরাইলি বাহিনী তাকে গ্রেফতার। বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।’ পশ্চিম তীরের আবু কাশ গ্রামে তাদের বাড়ি। যা রামাল্লাহ পাশে অবস্থিত।
মাহমুদ প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল বিডিএস কমিটি-বিনএসি’র সাধারণ সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন। রুবা বলেন, ‘অন্তত ৫০ জন ইসরাইলি সেনা এসেছিল। তারা দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। মাহমুদের চোখ বন্ধ করে, হাতে হাতকড়া পরিয়ে তাকে নিয়ে যায়। এসময় মাহমুদের ব্যক্তিগত কম্পিউটারও নিয়ে যায় তারা।’
গ্রেফতারের সময় মাহমুদ তার স্ত্রী রুবা এবং তাদের তিন শিশু সন্তান ঘরে ছিল। ‘বাচ্ছারা ঘুম থেকে উঠে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ঘটনায় আমরাও বিস্মিত হয়ে যাই যে, কি হচ্ছে। এমন হওয়ার কোনো কারণ নেই। এমন ঘটনা আমরা কখনো প্রত্যাশা করিনি। বিএনসি’র জ্যেষ্ঠ কর্মী জামাল জুমা বলেন, এখনো পর্যন্ত আমরা জানি না, ইসরাইলি বাহিনী তাকে কোথায় নিয়ে গেছে। কী হয়েছে তার সঙ্গে। কোথায় তাকে আটকে রাখা হয়েছে। ফিলিস্তিনি সাধারণ নাগরিক, স্বাধীনতা আন্দোলনকারী সবাইকে নির্বিচারে ইসরাইল আটক করছে।’
২০০৫ সালে বিডিএস আন্দোলন শুরু হয়। যার লক্ষ্য ফিলিস্তিনিদের অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ইসরাইলের উপর আর্থিক চাপ প্রয়োগের চেষ্টা। ইসরাইল সরকার সক্রিয়ভাবে তাদের এ কৌশল বানচালের চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিডিএসকে মোকাবিলায় শক্তি বাড়িয়েছে ইসরাইল। ইসরাইল এবং ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানকে বয়কটের আহ্বানকে অপরাধ আখ্যা দিয়ে বেশকিছু আইন পাস করে দেশটির পার্লামেন্ট।
গেলো মাসে পশ্চিমতীরে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু। যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। যদিও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পূর্ণ পরিকল্পনা এখনো প্রকাশ করেনি দখলদারার। তার মধ্যে পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপন অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। বন্ধ হয়নি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চলমান বল প্রয়োগ।
বর্তমানে আদালতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিচার চলছে। ইসরাইলের ঘোর সমর্থক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নভেম্বরে দেশটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন নিয়ে চাপে রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, দখলকৃত ফিলিস্তিনিদের আরো ভূমিতে নিজেদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে ইসরাইলের।
‘সেই লক্ষ্যে সম্ভবত, ইসরাইল সম্প্রতি বহু মানুষকে গ্রেফতার করেছে। বহু মানুষের ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে। নতুন করে বসতি স্থাপন অব্যাহত রেখেছে।’ অন্যান্য সময়ের চেয়ে এসব কার্যক্রম অনেক বেশি হারে চলছে বলেও জানান জুমা। বিডিএস আন্দোলনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ওমর বারঘুতি বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে মাহমুদের মুক্তির দাবি জানান।
বলেন, মাহমুদ একজন ফিলিস্তিনি মানবাধিকারকর্মী। যিনি ফিলিস্তিনে এবং বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় অক্লান্ত পরিশ্রম ও অনুরাগের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত। সমাজে একজন যুবনেতা হিসেবে তিনি সববয়সী মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা এবং আদর্শ।’
‘শুধু মাহমুদের মতো ফিলিস্তিনি এবং অন্যান্য মানবাধিকারকর্মীদের রক্ষায় নয়, ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং ফিলিস্তিনিদের উপর চালানো অত্যাচারী শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনী এবং নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি।’ আহ্বান জানান বারঘুতি।