সাহিত্য ও সংস্কৃতি ডেস্ক, এইউজেডনিউজ২৪: শহরগুলো কি অপ্রয়োজনীয় ব্যয়কারীদের জন্য হয়ে যাচ্ছিল! ৫০ বা ৬০ এর দশকে যার জন্ম, তাদের অধিকাংশই প্রাচুর্য কি জিনিস জানতোনা। ছেলেরা গোটা চারেক মার্বেল, একটা লাটিম, একটা টেনিস বল, বড়দের বাতিল করে দেওয়া ফুটবল যোগাড় করতে পারলেই খুশী। কয়েকটা ঘুরি – কমপক্ষে ১০ জন বন্ধু জোগাড় করতে হতো বাড়ী ঘুরে ঘুরে! খেলা শেষে কাউকে ধরিয়ে দেয়া হতো ফুটবল বা ব্যাট বল, সে কারণে কেউ জানতাম না এগুলোর মালিক কে! সম্ভবত মূল মালিকও ভুলে যেতো নিজের মালিকানার কথা!লুকিয়ে লুকিয়ে বরষি দিয়ে মাছ ধরা যে কতো আনন্দের তা এখন কল্পনা করা যায় না।
মেয়েদের বেলায় সরঞ্জাম সহজ, ঘরের বাতিল কাপড়ের নিজ হাতে বানানো পুতুল, ফেলে দেওয়া পাত্রের রান্নাবান্নার ক্রোকারিজ কিংবা খেলার জন্য সুন্দর মাটির পাত্রের কানা বা ইটের চারা যা দিয়ে কুতকুত খেলা যায়।
এদের হাতে টাকা পয়সা থাকতনা। এরা মায়ের বানানো খাবার খেতো। এর মধ্যে থাকতো সকালের বানানো রুটি- হয়তো চিনি আর পাউডার দুধ মিশিয়ে রুটিতে দিয়ে রোল করে দেওয়া হতো- তাই সোনামুখ করে খেতো। মাঝেমধ্যে পয়সা পেলে দোকানে গিয়ে বাবুল বিস্কুট, ললিপপ লজেন্স বা হজমী কিনে খেতো। স্কুলে যেতো পায়ে হেঁটে। রিক্সার বিলাসিতা কেউ করেছে মনে পড়েনা।
এদের পোশাক ছিলো হাতে গোণা। এমনকি ঈদেও অনেকের পড়ার সুযোগ বা সামর্থ্য থাকতো নািআমার তো মাঝে মধ্যেই হতো না। ছেঁড়া জামা পড়ে খেলতে চলে আসলে কোন কোশ্চেন নেই। কেউ মাথা ঘামাতো না।
এরা বন্ধুরা পড়তো একসাথে। একজন আরেকজনকে সাহায্য করতো। একটু সামর্থ্য যাদের ছিলো, তাদের গৃহশিক্ষক ছিলো। অন্যরা বন্ধুদের সাহায্য নিয়েই পড়া তৈরি করতো।
কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়ার সময় দুচার কিলোমিটার পথে তারা যাতায়াত করতো অধিকাংশ ক্ষেত্রে পায়ে হেঁটে।কেউ কেউ সাইকেলে চড়তো।বিখ্যাত ছিল ফনিক্স।আমার ছিল হাম্বার । সমস্যা হয়নি।
এরা দূরে কোথাও বেড়াতে যেতোনা, খুব বেশী হলে পিকনিক এ যেতো ট্রাকে চড়ে।
এই জেনারেশন ধীরে ধীরে আয়ের পথে গেছে। আমার বিশ্বাস এরা যেহেতু কষ্ট দেখেছে, তাই সাশ্রয়ী থাকার চেষ্টা করেছে। ছোট বাড়ী ভাড়া নিয়ে সংসার শুরু করেছে। আয় থেকে বাঁচিয়ে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করেছে। অনেকে এখন হয়তো বাড়ী বা ফ্ল্যাটের মালিক।
এরা রাতারাতি বড়লোক হতে চায়নি। অপেক্ষা করেছে বড়লোক হবার জন্য।
এখন দেখতে পাই, এখনকার তরুন প্রজন্ম অস্থিরতায় দিন কাটায়। বন্ধু বান্ধব কম, খেলাধুলা কম, সহযোগিতা কম।
ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইল ফোন টিপে এদের সময় কাটে।ভদ্রতা করে কারো সাথে দেখা করা বা কথা বলা এরা জানে না।
এদের হাতে কিভাবে যেনো টাকা পয়সা চলে এসেছে। সবারই আছে ব্যক্তিগত খেলনা। বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করার দরকার নেই।
এরা খেলে কম। এরা বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে পড়ে না-সবারই মনে হয় সামর্থ্য আছে কোচিং-এ যাবার। বিষয়টা গৌরবেরও।
এরা কোথাও হেঁটে যায়না। রিক্সায়তো বটেই, ৫০০ মিটার যেতেও সামর্থ্যবানের সন্তানরা নিজেদের গাড়ীতেই যায়।
এরা মায়ের হাতের খাবার খায়না। বাইরে গিয়ে ফাস্ট ফুড খায়।
এরা যখন আয় করা শুরু করে, তখন দ্রুতই বড়লোক হতে চায়। দুই জনের সংসারে প্রয়োজন হয় দুই হাজার স্কোয়ার ফিটের মডার্ণ ফিটিংস সহ বাড়ী।
এদের যতোনা নিজের টাকা আছে, তার চেয়ে আছে ব্যংকের লোনের টাকা- মানে ক্রেডিট কার্ড। এই টাকায় যতো অপ্রয়োজনীয় খরচ করা সম্ভব করতে থাকে। শোধ করে কিভাবে সেই জানে।
এরা এখন কিছু রোজগার হলেই বিদেশেও যেতে থাকে। ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড তাদের সহায়।
করোনায় সবকিছু সীমিত আকারে চলছে। অনেকে সাশ্রয়ী হয়ে দিন কাটাচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধ হয়েছে।
এরা প্রয়োজনীয় খরচ করতে পারছেতো!