বিনোদন ডেস্ক:
৭২-এ পা দিলেন ‘আমার জন্মভূমি’ সিনেমার নায়ক আলমগীর। এই ছবিতে অভিনয় করে প্রথম চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন বাংলা সিনেমার খ্যাতিমান অভিনেতা আলমগীর। আলমগীর কুমকুম পরিচালিত যুদ্ধভিত্তিক আমার জন্মভূমি ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় প্রথম চলচ্চিত্রে সফল অভিনয় হিসেবে। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তিতুল্য চলচ্চিত্রকার আলমগীর একাধারে একজন অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, উপস্থাপক ও কণ্ঠশিল্পী। ১৯৫০ সালের আজকের এই দিনে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়া ছিলেন ঢালিউডের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর অন্যতম প্রযোজক। আশি ও নব্বইয়ের দশকে দাপটের সঙ্গে একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এ পর্যন্ত তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এ অভিনেতা।
সাফল্যের সূত্র প্রসঙ্গে আলমগীর বলেন, পৃথিবীতে কোনো জিনিসই সহজ এবং সস্তা নয়। যে কোনো ক্ষেত্রে সফলতা পেতে সাধনার বিকল্প নেই। কাজ করতে হবে সিনসিয়ারলি। ছোটবেলা থেকে একটি জিনিস জেনেছি, আর তা হলো- গাছ যত বড় হয় গাছের ডালপালা তত ঝুঁকে যায়। কিন্তু আমরা যত বড় হই ততই যদি বড়াই করতে থাকি তাহলে সফল হতে পারব না। সাধনা হলো সাফল্যের সবচেয়ে বড় সোপান। সাধনা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা, এসব কিছু মিলিয়ে হলো সাফল্য। এটি সবার এবং সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
তিনি বলেন, সবাই মনে করে আমি খুব রাশভারী লোক। আসলে আমি রাশভারী নই। সময় উপযোগী একজন মানুষ। যখন যেখানে যেমন পরিস্থিতি থাকে আমি সেই পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি। মানুষের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারি। আমার সম্মানবোধ অনেক বেশি। যেখানে আমার সম্মান থাকবে না মনে হয় সেখান থেকে সবসময় দূরে থাকি।
নির্মাণ এবং অভিনয় প্রসঙ্গে এই কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার বলেন, কোনোটিই আমার কাছে কষ্টের নয়। তবে অভিনয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এগুলো হলো ক্রিয়েটিভ বিজনেস। নিজেকে অভিনেতা দাবি করতে খুব কষ্ট হয়। আমি নিজেকে অভিনেতা হিসেবে মূল্যায়ন করতে গেলে কোনো রকমে টেনেটুনে পাস মার্ক পাব। অভিনেতা দাবি করার মতো অবস্থা আমাদের দেশের কোনো শিল্পীর আছে কিনা জানি না। আমার তো নেই। অভিনয়ের বিশালতা এবং এর ব্যাপ্তি এত বড় যে, তা একজনের পক্ষে একজনমে ধারণ করা সম্ভব নয়। এর জন্য হয়তো শত জনম লাগবে। তা পাব না। কারণ জন্ম তো মাত্র একবারই। নির্মাতা হিসেবে আমি কখনই হ্যাপি নই। হ্যাঁ, আমার নির্মিত ছবিগুলো হিট হয়েছে। আমি আরেকটি ছবি নির্মাণ করব। আসলে ছবি হিট হবে এমন আশা নিয়ে নির্মাণ করি না।
নতুন প্রজন্মের প্রতি বরেণ্য শিল্পী বলেন, নতুন প্রজন্মকে বলব তোমরা সাধনা কর। চলচ্চিত্রকে আগে ভালোবাসো আর নিজের মধ্যে ধারণ করো। চলচ্চিত্র এমন একটি জায়গা যেখানে অর্থের পেছনে ছুটলে নিজে এবং চলচ্চিত্র ধ্বংস হবে। আর চলচ্চিত্রকে সাধনা ও ভালোবাসা দিয়ে ধারণ করলে অর্থ তোমাদের পেছনে ছুটবে। এতে তোমাদের ও চলচ্চিত্রের উন্নয়ন হবে।
১৯৮৫ সালে ‘মা ও ছেলে’ সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ই অভিনেতা। মোট আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম ‘নিষ্পাপ’ নামের একটি সিনেমা নির্মাণের মধ্য দিয়ে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার নির্মিত সর্বশেষ সিনেমা হচ্ছে ‘একটি সিনেমার গল্প’।
ছোটবেলায় বেশ বড় পরিসরেই আলমগীরের জন্মদিন পালন করতেন তার বাবা-মা। এখন পরিবারের সঙ্গে ঘরোয়া আয়োজনে কাটান এই দিনটি। বছরের অন্যান্য দিনের মতোই আলমগীর তার জন্মদিনও স্বাভাবিকভাবেই কাটানোর চেষ্টা করেন।
সূত্র: বিভিন্ন গণমাধ্যম