লিওনেল মেসি, জাভি হার্নান্দেজ, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, সের্হিও বুসকেটস, কার্লোস পুয়োল, পেপ গার্দিওলা… নামের তালিকাটা অনেক লম্বা। আপনি চাইলে আরও কিছু নাম যোগ করতে পারেন—ভিক্টর ভালদেস, সেস্ক ফ্যাব্রেগাস, জর্দি আলবা, থিয়াগো আলকানতারা, গাভি, আনসু ফাতি, লামিনে ইয়ামাল।
তাঁরা সবাই একসময় বার্সেলোনার জার্সি পরেছেন। তবে এর বাইরে তাঁদের আরেকটি বড় মিল আছে। তাঁরা সবাই উঠে এসেছেন বার্সেলোনার বিশ্বখ্যাত ফুটবল একাডেমি ‘লা মাসিয়া’ থেকে! এই একাডেমি যেন প্রতিভাবান ফুটবলার বানানোর এক অফুরন্ত কারখানা, যেখানে একের পর এক নতুন প্রজন্ম বেরিয়ে আসছে। ১২ বছর বয়সী ডেসটিনি কোসিসো এজিফোর লা মাসিয়ার তেমনই এক ঝলমলে প্রতিভা।
নামটা বেশ লম্বা লাগলে তাকে ডেসটিনি কোসিসো বলেও ডাকা যায়। এই মুহূর্তে সে বার্সার বয়সভিত্তিক দলে খেলছে। ভবিষ্যতে সে কত দূর যাবে, তা কেবল সময়ই বলতে পারে। তবে এখনই তার নাম জড়িয়েছে কিলিয়ান এমবাপ্পে ও লা মাসিয়ার আরেক বিস্ময় লামিনে ইয়ামালের সঙ্গে! অসম বয়সী এই তিনজনের মধ্যে তুলনা উঠছে কেবল একটি কারণে—গোল করার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম লা নাসিওন জানিয়েছে, বার্সার অনূর্ধ্ব–১২ দলে ডেসটিনি যখন প্রথম মৌসুম কাটায়, তখন তাকে তার বয়সের চেয়ে কিছুটা বড়দের দলে খেলানো হয়েছিল। ১১ জনের দলে খেলে সেই প্রথম মৌসুমেই সে ৯ ম্যাচে ১৬ গোল করে।
কিন্তু সত্যিকারের বিস্ময় জাগায় তার গত মৌসুমের পারফরম্যান্স। সাতজনের দলে খেলে ৫২ ম্যাচে সে গোল করেছে ১৪৫টি! এই পারফরম্যান্সের পরই আলোচনায় উঠে আসে তার নাম। আরেকটা কারণও আছে—এতটুকু বয়সেই ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাইকির সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করেছে সে। এই চুক্তি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্কও।
চুক্তির গল্পে যাওয়ার আগে ডেসটিনির পরিচয়টা জানা দরকার। ডেসটিনি কোসিসো নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভূত স্প্যানিশ। তার বাবা নাইজেরিয়ার ফুটবলার এজিকে পাসচ্যাল। এজিকে একসময় স্পেনের তৃতীয় বিভাগ ফুটবলে খেলেছেন। তাঁর তিন ছেলেই আছে বার্সেলোনার লা মাসিয়াতে!
গত সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানকে এজিকে বলেছিলেন, ‘সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, আমার তিন ছেলেই বার্সেলোনায় আছে। সবাই ভালো করছে। কিন্তু ডেসটিনি আমার মতে তার বয়সের পর্যায়ে একটু বেশি ভালো করছে।’
ডেসটিনির বড় ভাই ১৭ বছর বয়সী ডেভিড ওবিন্না ও মেজ ভাই ১৬ বছর বয়সী ডিভাইন ইকেন্নাও লা মাসিয়া থেকে উঠে এসেছে। ২০১৭ সালে লা মাসিয়ায় যোগ দেওয়া ডেভিড এখন স্প্যানিশ ফুটবলে পঞ্চম স্তরের দল কর্নেলায় খেলছে। ডিভাইন লা মাসিয়ায় বার্সার অনূর্ধ্ব–১৫ দলে বেড়ে উঠছে। তিন ভাইয়ের মধ্যে ডেসটিনিকে নিয়েই সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ বেশি।
স্পেনের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট জ্যামন কাপ ও কোপা ইসকারে ডেসটিনি বেশ পরিচিত মুখ। কোপা ইসকারে ২০২৩–২৪ মৌসুমে ২০ গোল করে বার্সাকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে। লা নাসিওন জানিয়েছে, যাঁরা তার খেলা দেখেছেন, তাঁদের মতে ডেসটিনি বিস্ফোরক এক ফুটবলার। বয়সের তুলনায় পা দুটো শক্ত। দৌড়ের প্রথম কয়েক মিটারেই সে খুব দ্রুতগামী। দুই পায়েই সমান দক্ষ, হেডেও গোল করতে পারে। ২০২৩–২৪ মৌসুমে বার্সার অনূর্ধ্ব–১০ দলে ২৭ ম্যাচে করেছে ১০০ গোল।
‘লা মাসিয়া’ যেন প্রতিভাবান ফুটবলার বানানোর এক অফুরন্ত কারখানা, যেখানে একের পর এক নতুন প্রজন্ম বেরিয়ে আসছে। ১২ বছর বয়সী ডেসটিনি কোসিসো এজিফোর লা মাসিয়ার তেমনই এক ঝলমলে প্রতিভা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস জানিয়েছে, এ মাসেই ডেসটিনির সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করে নাইকি। অতীতেও তারা আট বছর বয়সী ব্রাজিলের ফুটবলার কাউয়ান বাসিলের সঙ্গে এমন চুক্তি করেছিল। ডেসটিনির সঙ্গে নাইকির এই চুক্তিতে সংশ্লিষ্টতা আছে বিখ্যাত এজেন্ট পিনি জাহাভির প্রতিষ্ঠান গোল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের। এই ইসরায়েলি ফুটবল এজেন্ট বার্সা কোচ হান্সি ফ্লিক ও স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কির ক্যারিয়ারও সামলান।
ফিফার বিধি অনুযায়ী, কোনো খেলোয়াড় ১৬ বছর বয়সে না পৌঁছানো পর্যন্ত এবং প্রথম পেশাদার চুক্তি না করা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে প্রতিনিধিত্বমূলক চুক্তি করা এজেন্টদের জন্য নিষেধ। কিন্তু দ্য টাইমস জানিয়েছে, এমন কোনো নিয়ম নেই, যা এজেন্টদের ওই বয়সের আগেই কোনো উঠতি খেলোয়াড় এবং তার পরিবারকে বাণিজ্যিক চুক্তি–সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে বাধা দেয়। জাহাভির প্রতিষ্ঠান ও ডেসটিনির ক্ষেত্রে ঠিক এ ব্যাপারটাই ঘটেছে। টাইমসকে জাহাভি বলেছেন, ‘ভবিষ্যতের সঙ্গে যোগাযোগের এটাই পথ।’
ডেসটিনির প্রশংসাও করেছেন জাহাভি, ‘ছেলেটা খুবই বিশেষ কিছু। বার্সেলোনার একাডেমিতে সবাই তাকে উঁচু মানের মনে করে। ভুল না হলে গত মৌসুমে সে ৫২ ম্যাচে ১৪৫ গোল করেছে। নাইকির সঙ্গে চুক্তিটা বুঝতে হবে। বড় মাপের ফুটবলার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যাদের মধ্যে, তাদেরই এমন চুক্তির জন্য বিবেচনা করা হয়। ভবিষ্যতের জন্য চুক্তি নিশ্চিত করতেই তারা যোগাযোগ করে। তবে ডেসটিনি তেমন কিছু হতে পারবে কি না, সেটা সময়ই বলবে।’
আসলেও তা-ই। ডেসটিনির ‘ডেসটিনি’ তাকে কোথায় নিয়ে যায়, সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।
