সম্প্রতি স্বাক্ষরিত ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) অন্যতম বিশেষ দিক হলো নরেন্দ্র মোদি সরকারের ভারতের বিশাল সরকারি ক্রয়বাজার যুক্তরাজ্যের সরবরাহকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা।
এর ফলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ের প্রায় ৪০ হাজার উচ্চমূল্যের টেন্ডার—যার মূল্য প্রায় ৩৮ বিলিয়ন পাউন্ড—এখন থেকে পরিবহন, সবুজ জ্বালানি ও অবকাঠামোর মতো কৌশলগত খাতে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত হবে। এতদিন এসব খাত বিদেশি প্রতিযোগিতার জন্য প্রায় সুরক্ষিত ছিল।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) দিল্লিভিত্তিক বিশ্লেষক অজয় শ্রীবাস্তবের মতে, এই প্রবেশাধিকার ভারতের আগের কোনো বাণিজ্য চুক্তির তুলনায় অনেক বেশি এবং এটি নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে।
চুক্তির আওতায় নির্দিষ্ট খাতে ভারতীয় সরকারি প্রকল্পে দরপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ভারতীয় সরবরাহকারীদের সমান মর্যাদা পাবে। পাশাপাশি তারা আসন্ন সরকারি টেন্ডার ও ক্রয় সুযোগ সম্পর্কিত তথ্যও তাৎক্ষণিকভাবে পাবে।
আরও একটি বড় সুবিধা হলো—যুক্তরাজ্যে তৈরি পণ্যে মাত্র ২০% দেশীয় উপাদান থাকলেই তা ভারত সরকারের কাছে সরবরাহযোগ্য হবে। ফলে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের সর্বোচ্চ ৮০% উপাদান বা কাঁচামাল অন্য দেশ থেকেও আনতে পারবে এবং তবুও ভারতীয় সরকারি ক্রয়ে অংশ নিতে পারবে।
এছাড়া ন্যূনতম প্রকল্পমূল্যের সীমাও কমানো হয়েছে, যার ফলে তারা এখন ছোট আকারের প্রকল্প—যেমন গ্রামীণ সড়ক, বিদ্যালয়ের জন্য সৌর সরঞ্জাম বা সরকারি অফিসের আইটি সিস্টেম—এ দরপত্র দিতে পারবে, যা আগে তাদের নাগালের বাইরে ছিল।
তবে এই সুযোগ কাজে লাগানো সহজ হবে না। ভারতীয় কোম্পানিগুলো “ক্লাস-১” সরবরাহকারী হিসেবে অগ্রাধিকার পাবে, আর যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলো থাকবে “ক্লাস-২” সরবরাহকারীর মর্যাদায়। দাম প্রতিযোগিতাও বড় চ্যালেঞ্জ হবে, কারণ ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি।
এর পাশাপাশি, চুক্তি বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে বিলম্বিত অর্থপ্রদান ও চুক্তি বাস্তবায়নে জটিলতা—যা ভারতের সরকারি ক্রয়ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের সমস্যা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারি খাতে সরবরাহকারীদের কাছে বকেয়া অর্থ গড়ে বার্ষিক মোট ক্রয়মূল্যের চেয়েও বেশি ছিল।
যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ই-টেন্ডারিং পোর্টাল ও অনলাইন বিরোধ নিষ্পত্তি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে স্বচ্ছতা বেড়েছে, তবুও সময়মতো অর্থপ্রদানের সংস্কৃতি এখনও দুর্বল।
চুক্তিটি স্বচ্ছতা বাড়ালেও বকেয়া অর্থ, চুক্তি বাস্তবায়ন ও জরিমানা ইত্যাদি বিষয়ে স্পষ্ট বিধান রাখেনি। তাছাড়া, চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর প্রথম চার বছর দ্বিপক্ষীয় বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা (ডিসপিউট সেটেলমেন্ট) প্রযোজ্য হবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের সরকারি ক্রয়বাজারে বিদেশি অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া বড় নীতিগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এটি দেখায় যে ভারত সরকার এখন আত্মবিশ্বাসী—দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি প্রতিযোগীদের সঙ্গে সমানভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।
আশা করা হচ্ছে, বিদেশি কোম্পানির অংশগ্রহণ সরকারি ক্রয়ে আরও জবাবদিহিতা আনবে এবং ভারতের সরকারি ক্রয়প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সহায়তা করবে।