প্রতি বছরের ন্যায় এবারো আজাদ প্রোডাক্টসের আয়োজনে ‘রত্নগর্ভা মা অ্যাওয়ার্ড-২০২২’ প্রদান করা হয়েছে। গতকাল এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে ৩৬ জন মায়ের হাতে এই অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, শাশ্বত কাল থেকেই সন্তানের সফল ও পরিপূর্ণ জীবন গঠনে মায়েদের প্রভাব অনস্বীকার্য। তাই আমরা আর কোনো মায়ের ওপর নির্যাতন ও অবহেলা দেখতে চাই না। মায়েদের কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে, ভালোবাসতে হবে।
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবও একজন রত্নগর্ভা মা, যিনি শত প্রতিকূলতার মাঝেও সন্তানদের যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। বঙ্গমাতার মতো চারিত্রিক গুণাবলী সকল রত্নগর্ভা মায়েদের মাঝেই রয়েছে। কারণ সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করতে তারা অসীম ত্যাগ স্বীকার করেন। তারপরও কোনো কোনো সময় মায়ের প্রতি নির্যাতন ও অবহেলার খবর আসে।
এটা বন্ধ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়েদের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সন্তানের পাসপোর্টে পিতার পাশাপাশি মায়ের নাম সংযুক্ত হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ছুটি সবেতনে ৬ মাস হয়েছে।
এ ছাড়া তিনি দরিদ্র মায়েদের জন্য গর্ভকালীন ভাতাও চালু করেছেন। সকল মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা নিশ্চিত করতে সন্তানদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, সন্তানের সফলতার পেছনে মা-বাবা দুজনেরই অবদান থাকলেও মা-ই কঠোর পরিশ্রম এবং নিজের স্বপ্নের মাঝেই সুশিক্ষা দিয়ে সন্তানকে গড়ে তোলেন। এতে সন্তানরা দেশে-বিদেশে আলোকিত হয়। সন্তানের সঙ্গে মায়েদের সার্বক্ষণিক অন্তরঙ্গ যোগাযোগ থাকে। মায়েদের প্রতি আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য সকল সন্তানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনা শেষে সাধারণ ক্যাটাগরিতে ২৫ জন এবং বিশেষ ক্যাটাগরিতে ১১ জন মায়ের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়। এ ছাড়া ‘মাই ড্যাড ওয়ান্ডারফুল’ সম্মাননা পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
সাধারণ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন মিসেস মাহমুদা নুরুন নাহার, মিসেস জায়েদা খাতুন, মিসেস হাসিনা আক্তার, মিসেস সুফিয়া বেগম, মিসেস রওশন আরা, সৈয়দা রোকসানা বেগম, মিসেস আয়শা আক্তার, মিসেস আরজিমা চৌধুরী, মিসেস দিলরুবা খানম, মিসেস মাহমুদা বেগম, মিসেস রোকেয়া বেগম, মোছা. মাসুদা খাতুন, মিসেস জাহানারা আক্তার, মিসেস রীনা খান, মিসেস রৌশন আখতার, মিসেস হালিমা খাতুন, মিসেস আহসান সাবেরা কামাল, আলহাজ আনিস ফাতেমা জেসমিন, মিসেস ফাতেমা মুনসেফ, মিসেস বাসন্তি রানী ধর, মিসেস ফরিদা খানম, মিসেস আয়েশা বেগম, মোসা. ফাতেহা হোসেন, মিসেস আঁখি রানী সূত্রধর ও মিসেস আঞ্জুমান আরা বেগম। বিশেষ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়া রত্নগর্ভা ১১ মা হলেন- মিসেস যমুনা বিশ্বাস, মিসেস রহিমা বেগম, আফরোজা বেগম (তামান্না), মোছা. মহিনূর বেগম, আলহাজ মনোয়ারা বেগম, মোছাম্মৎ মেহেরুন নেছা খানম, মিসেস শাম্মীয়ারা আক্তার, অধ্যাপক রহিমা খাতুন, মিসেস মিলন রহমান, মিসেস শামসুন্নাহার চৌধুরী ও মিসেস সামসুন নাহার।
এদিকে, ৩৬ জনের মধ্যে রত্নগর্ভা মা ২০২২ এর পুরস্কার পেয়েছেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা মিসেস রওশন আরা বেগম। তিনি বড়ালী গ্রামের বাসিন্দা ও বিডিয়ারের সাবেক সদস্য মরহুম মো: আবুল হোসেন’র সহধর্মিনী ও ৫সন্তানের গর্বিত জননী।
জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার কড়ৈতলী গ্রামের শরাফত আলী খান ও বদরুন্নেসা দম্পতির অষ্টম সন্তান হিসেবে ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন মিসেস রওশন আরা বেগম ।
ব্যক্তিজীবনে মিসেস রওশন আরা পাঁচ সন্তানের জননী। প্রত্যেকেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষা লাভ করেদেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্বশীল পদে আসীন হয়ে সফলতার স্বাক্ষর রেখে আসছেন।
রত্নগর্ভা মিসেস রওশন আরা বেগম’র গর্বিত সন্তানদের পরিচয়। প্রথম সন্তান : মো: রফিকুল ইসলাম, বিএসসি , এমএসসি সম্পন্ন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি পড়েছেন ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা নিয়ে। তিন একজন পরিবেশবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ।
বর্তমানে তিনি বিশ্বের অন্যতম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আমাজন লজিসটিকস, জার্মানীতে কর্মরত আছেন। দ্বিতীয় সন্তান. শামছুন্নাহার, তিনি বিএসসি, এমএসসি, এমপিএস (মাষ্টার্স অফ পুলিশ সায়েন্স) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ পুলিশ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
তিনি ৩৩ বিসিএস এর একজন কর্মকর্তা । সম্প্রতি তিনি জাতিসংঘ মিশনে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি বর্তমানে ৫ এপিবিএন, উত্তরা, ঢাকায় কর্মরত।
তৃতীয় সন্তান. মো. শফিকুল ইসলাম, কৃতিত্বের সঙ্গে বিএসসি,এমএসসি সম্পন্ন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর দ্বিতীয় এমএসসি এবং পিএইচডি করেছেন মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় জার্মানি থেকে। তার পিএইচডির গবেষণার বিষয় জিনোম সিকোয়েন্সিং।তার পিএইচডি গবেষণার -অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান অপেক্ষমান রয়েছে।
বর্তমানে বিশ্ববিখ্যাত নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান মাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউট, জার্মানিতে সিনিয়র বিজ্ঞানী হিসাবে কর্মরত।
পাশাপাশি সিইও হিসেবে আছেন ওয়াইল্ডমেন্টর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠানে। চতুর্থ সন্তান. নুরজাহান বেগম, বিএ, এমএ সম্পন্ন করার পর উদ্যোক্তা হয়েছেন। ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজ এর পরিচালক তিনি। এটি তার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বিভিন্ন নারী উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে জড়িত আছেন।
পঞ্চম সন্তান. মো. জহিরুল ইসলাম, এমবিবিএস সম্পন্ন করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে। তিনি ৩৯ তম বিসিএস স্বাস্ধসঢ়;হ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। বর্তমানে প্রেষণে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে এমডি( কার্ডিওলজি) কোর্সে আছেন।
এছাড়া তিনি এফসিপিএস (মেডিসিন)এর শেষপর্বে আছেন ও এমআরসিপি( লন্ডন)এর দুইটি পর্ব সম্পন্ন করেছেন।
স্বামী প্রয়াত মো. আবুল হোসেন বাংলাদেশ বাংলাদেশ বিডিয়ার বাহিনীর হিসাবরক্ষক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। কর্মজীবনে সৎ মানুষ হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। রওশন আরা – আবুল হোসেন দম্পতি সন্তানদের নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে আজীবন নিরলস পরিশ্রম করেছেন রত্নগর্ভা এই মা।