মিরসরাই উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের এক সাহসী তরুণ মুসলিম উদ্দিন। ছাত্রজীবন থেকেই সহপাঠীদের নিকট নীতিনৈতিকতা, সাহসিকতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাবের কারণে তিনি ছিলেন সবার প্রিয়।
২০২৪ সালের ছাত্র অভ্যুত্থানের সময় যখন মিরসরাইয়ে অনেকেই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন, তখন মুসলিম উদ্দিন ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেবেন। নিউ মার্কেট, কদমতলী, আগ্রাবাদ ও জিইসি মোড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তাঁরা রাজপথে সক্রিয় থাকেন ৩ ও ৪ আগস্ট।
মুসলিমের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার জে এ চৌধুরী তপু, যিনি বর্তমানে মঘাদিয়া ইউনিয়ন জাসাসের সিনিয়র সহ-সভাপতি। তাঁরা বলেন, “তখন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলো। আমাদের অবস্থান ছিল নিউ মার্কেট চত্বরে। ৫ আগস্ট লালদীঘি মাঠে যখন ছাত্রসমাজ বুক টান করে দাঁড়ায়, তখন মনে হয়েছিলো – এই জনতার শক্তিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।”
তবে আন্দোলনের রক্তাক্ত পরিণতি খুব কাছ থেকে দেখেছেন মুসলিম। তিনি বলেন, “যদি সেদিন অভ্যুত্থান ব্যর্থ হতো, তাহলে হয় আমরা সবাই রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে জেলে যেতাম, না হয় প্রাণ হারাতাম। তবুও ভয় পাইনি, কারণ আমরা একটি বৈষম্যহীন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ চেয়েছিলাম।”
এই তরুণরা শুধু স্লোগানেই থেমে থাকেননি। আন্দোলনে আসা ক্ষুধার্ত ছেলেমেয়েদের জন্য নিজেরা টাকা তুলে কিনেছেন খেজুর, কলা ও পানি। অসহায়ত্বে নয়, বরং মানবতার জায়গা থেকে এই কাজ করেছেন তারা।
তপু বলেন, “মুসলিম ছিলো আন্দোলনের প্রাণ। ওর মতো কিছু তরুণ আজও নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য লড়ছে, যদিও মূলধারার রাজনীতি তাদের গুরুত্ব দিতে চায় না।”
মুসলিম উদ্দিন বলেন, “আমি প্রথম দিন থেকে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রামের রাজপথে ছিলাম, বিশেষ করে নিউ মার্কেট এলাকাজুড়ে। রাজপথে আমার অস্তিত্ব ছিলো সক্রিয়, সাহসী।”
আজ হয়তো ইতিহাস তাদের প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছে না, কিন্তু সময়ই বলে দেবে—এই তরুণ যোদ্ধারাই একদিন ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিলো।
—