ভারতের বৃহত্তম আইটি সেবা প্রতিষ্ঠান টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস) চলতি অর্থবছরে বিশ্বজুড়ে তাদের মোট কর্মীর ২ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১২,২৬১ জনকে ছাঁটাই করতে যাচ্ছে। এই ছাঁটাই মূলত মধ্য ও ঊর্ধ্বমধ্যম স্তরের কর্মীদের ওপর প্রভাব ফেলবে।
টিসিএস-এর সিইও কে কৃষ্ণীবাসন একে একটি “কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত” বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি অস্বীকার করেছেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এর পেছনে মূল কারণ।
“এআই-এর কারণে নয়”
মানিকন্ট্রোলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কৃষ্ণীবাসন বলেন, “এটি এমন নয় যে এআই হঠাৎ ২০ শতাংশ উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছে বলেই আমরা ছাঁটাই করছি।” তিনি জানান, যেসব ক্ষেত্রে কর্মীদের দক্ষতা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনের সঙ্গে মেলে না কিংবা যাদের পুনর্বিন্যাস করা যাচ্ছে না—তাদেরকেই ছাঁটাই করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ছাঁটাই ধাপে ধাপে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে এবং তা নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চল বা খাতভিত্তিক হবে না। “আমরা খুব সহানুভূতির সঙ্গে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করব,” বলে আশ্বস্ত করেন কৃষ্ণীবাসন।
তবু এআই-র প্রভাব অস্বীকার নয়
যদিও সিইও ছাঁটাইয়ের পেছনে সরাসরি এআইকে দায়ী করেননি, তবে প্রতিষ্ঠানটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি টিসিএস-এর ‘ফিউচার-রেডি’ বা ভবিষ্যত-প্রস্তুত রূপান্তরের অংশ।
বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ, নতুন বাজারে প্রবেশ, নিজেদের ও ক্লায়েন্টদের জন্য এআইকে বৃহৎ পরিসরে বাস্তবায়ন, অংশীদারিত্ব গভীরতর করা, পরবর্তী প্রজন্মের অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং আমাদের কর্মী কাঠামো পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে একটি ভবিষ্যত-প্রস্তুত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে কাজ করছি।”
এই রূপান্তরের অংশ হিসেবে অনেক পুনঃদক্ষতা ও পুনঃবিন্যাস উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। “এরই অংশ হিসেবে, যেসব কর্মীর পুনঃনিয়োগ সম্ভব নয়, তাদের প্রতিষ্ঠানের বাইরে যেতে হবে,” বলেছে টিসিএস।
চ্যাটজিপিটির আবির্ভাবের ৩০ মাস পর এই ঘোষণা
এই সিদ্ধান্ত আসে ঠিক ৩০ মাস পর যখন চ্যাটজিপিটির আত্মপ্রকাশ ভারতের আইটি শিল্পের প্রচলিত কর্মী-নির্ভর মডেলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।
সম্প্রতি ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম আইটি ফার্ম এইচসিএল টেকনোলজিস জানিয়েছে, স্বয়ংক্রিয়তার ফলে নতুন স্নাতকদের অনেক কাজ এখন এআই দ্বারা বদলে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ছাঁটাইয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
“পরিবর্তনশীল সময়”
এই প্রসঙ্গে এইচএফএস রিসার্চের সিইও ফিল ফার্স্ট বলেন, “এআই-র প্রভাব কর্মী-নির্ভর আইটি পরিষেবা মডেলকে খেয়ে ফেলছে। ফলে টিসিএস-এর মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীবাহিনী পুনর্গঠন করতে বাধ্য হচ্ছে যাতে তারা লাভ ধরে রাখতে ও প্রতিযোগিতামূলক দাম বজায় রাখতে পারে।”
তিনি বলেন, এই প্রবণতা অন্তত আরও এক বছর চলবে, যতদিন না প্রতিষ্ঠানগুলো জুনিয়র কর্মীদের এআই প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারে এবং যারা এই নতুন ‘সার্ভিস-এজ-সফটওয়্যার’ মডেলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না, তাদের সরে যেতে বাধ্য করতে পারে।