১২ বছর বয়সটা ঠিক কৈশোরও নয়। কৈশোর আসি আসি করার বয়স। এ বয়সে খুদেরা চারপাশটা দেখে স্বপ্ন দেখতে শেখে। বড় হয়ে এটা হবে, সেটা হবে কিংবা অমুকের মতো হবে…। ১২ বছর বয়সী ইউ জিদিকে ঠিক এই কাতারে রাখা যাচ্ছে না। চীনের এই খুদে সাঁতারু এই বয়সেই স্বপ্নপূরণে নেমে পড়েছেন। আরেকটু খোলাসা করে বলতে গেলে বলতে হয়, মাত্র ০.০৬ সেকেন্ডের জন্য স্বপ্নটা আপাতত পূরণ হয়নি!
প্রতিভা যেহেতু অমিত, তাই স্বপ্নপূরণ হয়তো সামনেই। আপাতত সিঙ্গাপুরে সাঁতারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সবাইকে হতবাক করে দিয়েছেন এই স্কুলপড়ুয়া। তিনি এরই মধ্যে যে বিশ্বের দ্রুততম সাঁতারুদের একজন!
অথচ সাঁতারের এই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে বয়স ন্যূনতম ১৪ বছর হতে হয়। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অন্যান্য যেসব যোগ্যতা, সেসব পূরণ করতে পারলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হয়। সিডনি মর্নিং হেরাল্ড জানিয়েছে, বাছাইপর্বে টাইমিংয়ের জোরে মূল প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ পেয়েছেন জিদি।
জিদি সব শর্তপূরণ করে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্যতা অর্জনের পর থেকেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ভবিষ্যদ্বাণী করে, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় গত ৮৯ বছরের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সাঁতারু হিসেবে পদক জয়ের বেশ ভালো সম্ভাবনা আছে তার। আপাতত এই কীর্তি ১৯৩৬ বার্লিন অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী সাঁতারু ইনগে সোরেনসেনের। ১২ বছর পার করার কিছুদিনের মধ্যে পদকটি জেতেন সোরেনসেন।
সাঁতারের এই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জিদির চেয়েও কম বয়সে পুলে নামার রেকর্ড আছে। ২০১৫ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ‘লুজার কোয়ালিফাইং স্ট্যান্ডার্ডস’ নিয়মের অধীনে ১০ বছর বয়সে পুলে নেমেছিলেন বাহরাইনের সাঁতারু আলজাইন তারেক। কিন্তু হিটের বাধাই তিনি পার হতে পারেননি। প্রতিভার বলে জিদি ঠিক এ জায়গাটাতেই আলাদা। গতকাল মেয়েদের ২০০ মিটার মেডলি ছিল জিদির ক্যারিয়ারে প্রথম কোনো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জয়ের লড়াই। সেখানে জিদির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল কানাডার তিনবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন সামার ম্যাকিন্টোশকে। জিদির সামান্য ১২ বছর বয়সী শরীরের ওজনটা নিশ্চয়ই এবার বোঝা গেল!
ম্যাকিন্টোশকে হারাতে পারেননি এবং পদকও জিতেননি—তবু জিদি কিন্তু একেবারে হতাশ করেননি। ম্যাকিন্টোশ ২ মিনিট ৬.৬৯ সেকেন্ডে সোনা জিতলেও জিদি ২ মিনিট ০৯.২১ সেকেন্ড সময় নিয়ে হন চতুর্থ। ব্রোঞ্জজয়ী কানাডার মেরি-সোফি হার্ভের (২ মিনিট ০৯.১৫ সেকেন্ড) সঙ্গে মাত্র ০.০৬ সেকেন্ডে পিছিয়ে থেকে সাঁতার শেষ করেন। অর্থাৎ সেকেন্ডের এ ভগ্নাংশ সময়ের ব্যবধানে ব্রোঞ্জ হাতছাড়া হয় জিদির। তবে আশার জায়গা তো আছেই। ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিকসের মতে, সাঁতারের বিশ্ব মঞ্চে কোনো ছেলেও এই বয়সে জিদির মতো টাইমিং করতে পারেনি।