ক্রিকেটে ‘ভুল সময়ে জন্মানো’র আক্ষেপ নতুন নয়। শেন ওয়ার্নের সময়ে স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলকে ঘিরে এমন কথা শোনা গেছে। ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিসের সময়ে আকিব জাভেদকে ঘিরেও এমন কথা বলেছেন কেউ কেউ। বাংলাদেশ সময় কাল রাতে কিংস্টন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ১৭৬ রানে জয়ের পর স্কট বোল্যান্ডকে নিয়েও একই কথা একটু ঘুরিয়ে বললেন মিচেল স্টার্ক। কিংস্টনে কী মহানাটক ঘটেছে, সেটা এতক্ষণে সবার জানা। জয়ের জন্য ২০৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে মাত্র ২৭ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ—যেটা টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানের ইনিংস। এই ধ্বংসযজ্ঞে মিচেল স্টার্কের অবদানই বেশি—৭.৩ ওভারে ৯ রানে নিয়েছেন ৬ উইকেট। তবে মাত্র দুই ওভার মানে ১২টি বল করার সুযোগ পেলেও ইতিহাসে নাম লেখানো থেকে বোল্যান্ডকেও থামাতে পারেননি ক্যারিবিয়ানরা। তাঁর বোলিং বিশ্লেষণ ২ ওভার, ১ মেডেন, ২ রান, ৩ উইকেট। এই ৩ উইকেট আবার হ্যাটট্রিক!
জয়ের পর পুরস্কার বিতরণীতে বোল্যান্ডকে নিয়ে স্টার্ক বলেছেন, ‘সে অসাধারণ। অন্য দলে সে অনেক টেস্ট খেলার সুযোগ পেত।’ অর্থাৎ বর্তমান দলে অস্ট্রেলিয়া দলে প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউড এবং স্টার্কের মতো পেসাররা আছেন বলেই বোল্যান্ড নিয়মিত সুযোগ পান না। কিন্তু সুযোগ পেলে কী করতে পারেন, তা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। এ পর্যন্ত ১৪ টেস্টে ১৬.৫৩ গড়ে তাঁর শিকার ৬২ উইকেট। টেস্টে অন্তত ২০০০ বল করেছেন, এমন বোলারদের মধ্যে গত ১০০ বছরে এই ভিক্টোরিয়ান পেসারের বোলিং গড় সেরা। এই উচ্চতায় অবশ্য তিনি উঠেছেন কাল রাতে হ্যাটট্রিকের আগেই। হ্যাটট্রিকে বোলিং গড়টা আরও উন্নত হলো আর কী! স্টার্ক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর বোলিংয়ে আসেন বোল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ তখন ৬ উইকেটে ২৩। ১২তম ওভারে বোলিংয়ে এসে উইকেট পাননি। নিজের দ্বিতীয় ওভারে (ইনিংসের ১৪তম ওভার) এসে প্রথম তিন বলেই ফিরিয়ে দেন জাস্টিন গ্রিভস, শামার জোসেফ ও জোমেল ওয়ারিক্যানকে।
ছেলে ও মেয়েদের টেস্ট মিলিয়ে ২০১১ সালের পর এই প্রথম হ্যাটট্রিকের দেখা পেলেন অস্ট্রেলিয়ার কোনো বোলার। ১৪ বছর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন অস্ট্রেলিয়া নারী দলের পেসার রেনে ফেরেল। তবে শুধু ছেলেদের টেস্ট বিচারে বোল্যান্ডের আগে অস্ট্রেলিয়ার কোনো বোলারের সর্বশেষ হ্যাটট্রিক ২০১০ সালে গ্যাবা টেস্টে—নিজের জন্মদিনে হ্যাটট্রিক করেছিলেন পেসার পিটার সিডল। সব মিলিয়ে ছেলেদের টেস্টে এটি অস্ট্রেলিয়ান কোনো বোলারের ১০ম হ্যাটট্রিক।
জয়ের পর পুরস্কার বিতরণীতে ৩৬ বছর বয়সী এই পেসার জানিয়েছেন, হ্যাটট্রিকের শেষ বলটি করার সময় তিনি স্নায়ুচাপে ভুগেছেন, ‘শেষ বলে একটু নার্ভাস ছিলাম। অসাধারণ অনুভূতি। শুধু ভালো জায়গায় বল ফেলতে মনোযোগী ছিলাম। ভালো লাগছে যে শুরুটা ভালো হয়েছে।’
তবে বোল্যান্ডকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন স্টার্ক, ‘সে অসাধারণ, তাই না? অন্য দলে সে অনেক টেস্ট খেলার সুযোগ পেত। কিন্তু যতবারই সে (অস্ট্রেলিয়া দলে) আসে, ততবারই ভালো করে। এই সপ্তাহে যেমন হ্যাটট্রিক করল। নিখুঁত লেংথ বোলিং থেকে সে কখনো দূরে থাকে না। সব সময় খেলার জন্য প্রস্তুত থাকে এবং এবার সুযোগ পেয়েই দেখিয়ে দিল টেস্টে সে কী দারুণ বোলার!’
গত ৬০ বছরের মধ্যে গ্লেন ম্যাকগ্রার পর দ্বিতীয় পেসার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্ট খেললেন বোল্যান্ড। ২০২১ সালে তাঁর টেস্ট অভিষেকের পর এ পর্যন্ত ৩৯টি টেস্ট খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। বোল্যান্ড এর মধ্যে মাত্র ১৪টি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে মেলবোর্নে ২০২১ সালে অভিষেক টেস্টে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ৭ রানে ৬ উইকেট। গত জানুয়ারিতে সিডনিতে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে নেন ১০ উইকেট, যেটা কিংস্টনের আগে বোল্যান্ডের খেলা সর্বশেষ টেস্ট।