চট্টগ্রাম মেডিকেলে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতরা। গুলিতে কারও পেট এফোঁড়-ওফোঁড় হয়েছে, কারও বা গুঁড়িয়ে গেছে পায়ের হাড়। চিকিৎসাধীন বেশিরভাগই খেটে খাওয়া মানুষ। জীবন শঙ্কা ছাপিয়ে যাদের বড় দুশ্চিন্তা এখন সংসারের বোঝা। গুরুতর আহত গুলিবিদ্ধ দুই শিক্ষার্থী। চিকিৎসা নিচ্ছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্যও।
গুলিতে পায়ের হার ভেঙে চট্টগ্রাম মেডিকেলের বিছানায় কাতরাচ্ছেন হকার আবুল বাশার। ছোট দুই সন্তান, স্ত্রী, মাসহ সাতজনের সংসারের একমাত্র ভরসা। এখন নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কার পাশাপাশি ভর করেছে পরিবারের ভরণ পোষণের দুশ্চিন্তা। আবুল বাশার বলেন, আমার মেয়েটা অসুস্থ আছে দুই দিন ধরে। মেয়েকে ওষুধ কিনে দেয়ার ক্ষমতাও এখন আমার নেই।
আহত রাজমিস্ত্রি রুবেলের জীবনেও যেন কষ্টের গল্পগাথা। শরীরজুড়ে ছররা গুলির ক্ষত। কাজ শেষে ফেরার পথে বহদ্দারহাটে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন, খোয়া যায় সঙ্গে থাকা সহকর্মীদের পারিশ্রমিকের ৩৬ হাজার টাকাও। চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন তিনিও। রুবেল বলেন, মেডিকেলে এতদিনে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা গেছে আমার, কেউ এক টাকাও দেয়নি। আহত হওয়ার ফলে ভালো কোনো কাজও করতে পারবো না।
অভাবের সংসারে হাল ধরতে ছোট্ট বয়সেই কাজে যোগ দিতে হয় শিশু সুজন আর আলাউদ্দিনকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আলাউদ্দিন পেটে আর সুজন পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শয্যাশায়ী। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী জিয়াউল হক এবং ইসলামিয়া কলেজের ইয়াশও।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে চট্টগ্রামে সংঘর্ষে আহত হয়ে শুধু চট্টগ্রাম মেডিকেলেই ভর্তি হন ২০৩ জন। যাদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ। এখন ভর্তি আছেন ৮ জন। আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী ছাড়াও বড় অংশ পথচারী। যাদের অনেকেই খেটে খাওয়া মানুষ।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, আমাদের চিকিৎসক নার্স সবই পর্যাপ্ত পরিমাণ ছিল। ওষুধ নিয়েও কোনো সমস্যা হয়নি।
আহতদের মধ্যে আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও। এই সংখ্যা ৬৪। যার মধ্যে ৫ জন চিকিৎসাধীন বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে। তাদের অবস্থা এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আহমেদ রসুল বলেন, বিভিন্ন ইনজুরি নিয়ে রোগীরা এখানে এসেছিলেন। এর মধ্যে ১৬ জনকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিতে হয়েছে।
তবে আহত সাধারণ মানুষ বা শিক্ষার্থীদের অনেককে দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।