ইসলাম ও ধর্ম ডেস্ক: মানুষের ভালো ও মন্দ কাজের ভিত্তিতেই তাঁর ব্যক্তিত্বের মূল্যায়ন করা হয়। তাই ইসলাম মানুষকে উত্তম ও কল্যাণকর কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব কাজকে ‘খায়ের’ তথা কল্যাণকর বা উত্তম বলেছেন তার মধ্যে ১০টি বিশেষ আমল নিম্নে বর্ণনা করা হলো—
১. ফজরের দুই রাকাত সুন্নত : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার থেকে উত্তম।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭২৫)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘নবী (সা.) কোনো নফল (ফরজ/ওয়াজিব নয়—এমন) নামাজকে ফজরের দুই রাকাত সুন্নতের চেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করতেন না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৬৯)
২. প্রথম কাতারে নামাজ আদায় : প্রথম কাতারে নামাজ পড়া অন্যতম উত্তম আমল। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পুরুষের কাতারের মধ্যে উত্তম হলো প্রথমটি এবং নিকৃষ্ট হলো শেষটি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৪০)
বারা ইবনু আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই প্রথম কাতারগুলোর প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৬৬৪)
৩. নামাজে বিনম্র হওয়া : নামাজে শরীর টানটান করে রাখার পরিবর্তে নরম তথা স্বাভাবিকভাবে ছেড়ে দেওয়া উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম তারা, যারা নামাজের মধ্যে নিজের কাঁধ বেশি নরম করে দেয়।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৬৭২)
৪. তিন তাসবিহ পাঠ : প্রত্যেক নামাজের পর তিন তাসবিহ পাঠের বিশেষ গুরুত্ব আছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে, যারা নেক কাজে তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে, তাদের পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে। তবে যারা পুনরায় এ ধরনের কাজ করবে তাদের কথা স্বতন্ত্র। তোমরা প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩ বার করে তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ), তাহমিদ (আলহামদু লিল্লাহ) এবং তাকবির (আল্লাহ আকবার) পাঠ করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৪৩)
অন্য বর্ণনায় ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠের কথা এসেছে।
৫. কোরআন পাঠ ও পাঠদান : উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০২৭)
৬. অসহায় মানুষের জন্য ব্যয় : আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ওপরের হাত উত্তম নিচের হাত থেকে। ওপরের হাত হলো খরচকারী হাত, নিচের হাত হলো গ্রহণকারী হাত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪২৯)
৭. আহার করানো : আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, ইসলামের কোন আমলটি উত্তম? তিনি বলেন, আহার করানো এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম প্রদান করা।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮)
৮. চরিত্র সুন্দর করা : সুন্দর চরিত্রের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) অশ্লীলভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, নিশ্চয়ই তোমাদের সর্বোত্তম ব্যক্তি সে যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৯)
৯. মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া : আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলিমের পক্ষে তার কোনো ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি এমনভাবে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা বৈধ নয় যে তাদের দুজনের দেখা-সাক্ষাৎ হলেও একজন এদিকে আরেকজন অন্যদিকে চেহারা ঘুরিয়ে নেয়। তাদের মধ্যে উত্তম ওই ব্যক্তি, যে প্রথম সালাম করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৩৭)
১০. পরিবারের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সে, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি তোমাদের মধ্যে আমার পরিবারের কাছে উত্তম।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৯৫)
এ ছাড়া হাদিসে আরো বহুসংখ্যক আমলের ব্যাপারে খায়ের তথা কল্যাণকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) যেসব আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তা আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।