আল্লাহ তাআলা নারী ও পুরুষকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে সৃষ্টি করছেন। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বিষয়টাকে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে, ‘তোমরা একে অপরের অংশ।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৯৫)
হাদিসে অবিবাহিত নারী ও পুরুষকে কর্পদকশূন্য মিসকিনের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যদিও তাদের অঢেল ধন-সম্পদ থাকে। (বাইহাকি ফি শুআবিল ইমান: ৫০৯৭)।
নারী পুরুষের মধ্যে পরিপূর্ণতা তখনই আসে—যখন তারা আল্লাহর নামে একে অপরকে গ্রহণ করে। আর এই গ্রহণের ধর্মসম্মত ও সামাজিক পদ্ধতিকেই বলা হয় বিবাহ।
বিবাহের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো, বংশরক্ষা এবং শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্য থেকে এটি একটি যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গীদের, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি লাভ করতে পার এবং তিনি তোমাদের (স্বামী-স্ত্রীর) পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। (সুরা রূম: ২১)
তবে বিয়ে করার জন্য নারী ও পুরুষ উভয়কেই বিয়ের যোগ্য হতে হয়। এখানে আমরা হাদিসের আলোকে পুরুষের বিয়ের যোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করব।
হাদিস থেকে বোঝা যায়—একজন পুরুষ তখনই বিয়ের যোগ্য হয়, যখন সে একজন নারীর দায়িত্বগ্রহণের যোগ্য হয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) যুবকদের বলেন, তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের (অর্থনৈতিক ও শারীরিক) সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে এবং যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা রাখে। কেননা, রোজা যৌনচাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করে। (সহিহ বুখারি: ৫০৬৫)
আরেকটি হাদিসে বিয়েকে ‘সম্পদশালী’ হওয়ার সাথে শর্তযুক্ত করা হয়েছে। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন :
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ‘যু-তওল’ (অর্থাৎ স্ত্রীর ভরণপোষণ দেওয়ার মতো সম্পদশালী), সে যেন বিয়ে করে, কারণ তা দৃষ্টিকে অবনতকারী এবং লজ্জাস্থানের অধিক হেফাজতকারী। আর যে ব্যক্তি সম্পদশালী নয়, সে যেন রোজা রাখে; কারণ রোজা তার জন্য ঢালস্বরূপ। (সহিহুল জামে: ৬৪৯৮)
দুটো হাদিসেই বিয়ের জন্য সামর্থ্যবান বা সম্পদশালী হওয়ার কথা বলা হয়েছে, সামর্থ্য না থাকলে যৌন উত্তেজনা প্রশমনের জন্য রোজা রাখতে বলা হয়েছে। কারণ সম্পদ না থাকলে কেউ যথাযথভাবে দায়িত্বগ্রহণ করতে পারবে না। বিয়ের উদ্দেশ্য স্রেফ যৌনতা নয়, বরং এর সঙ্গে স্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ, সন্তানের জন্ম ও তার প্রতিপালনসহ অনেকগুলো বিষয় জড়িয়ে আছে।
প্রাপ্তবয়স্ক হলে পুরুষ খুব স্বাভাবিকভাবেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণবোধ করে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হলেও দায়িত্ব গ্রহণের উপযুক্ত না হলে পুরুষ বিয়ের যোগ্য হয় না। তাই এই অবস্থায় তার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। দায়িত্ব গ্রহণের জন্য নিজেকে তৈরি করা উচিত।
বিয়ে করে ফেলার পর দায়িত্বে অবহেলা বা ব্যর্থতা ইসলামে অত্যন্ত নিন্দনীয়। রাসুল (সা.) বলেন, আমি দুই শ্রেণির দুর্বলের অধিকারের বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করছি: এতিম ও নারী। (সহিহুল জামে: ২৪৪৭)
আরেকটি হাদিসে এসেছে, প্রত্যেকেই একেকজন দায়িত্বশীল, আর প্রত্যেককেই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।… একজন পুরুষ—সে তার পরিবারের দায়িত্বশীল, আর তার পরিবারের ব্যাপারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। (মুসনাদে আহমদ: ৫১৬৭)
এ ছাড়া বিদায় হজের ভাষণেও রাসুল (সা.) নারীর প্রতি দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে সর্বাধিক সচেতনতা অবলম্বন করার নসিহত করেছেন। (সুনানে তিরমিজি: ১১৬৩)