কাজী আনিসুর রহমান তৈমুর: দিনে দিনে হাতিরঝিলের দুপাশ ভরে যাচ্ছে রেস্তোরাঁয়। খাবারের দোকান গুলো সৌন্দর্য্য নষ্ট করে দিচ্ছে। হাতিরঝিলের লেকের পাড়ে সমস্ত রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান গুলো অপসারণ করতে হবে।
হাতিরঝিলে ওয়াক ওয়েতে বসা নিষেধ করতে হবে। কিছু জায়গায় ওয়াকওয়ে ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো মেরামত করা দরকার। হাতিরঝিলের যে ওভারব্রিজগুলোর রয়েছে সেখানে বসা এবং মোটরসাইকেল গাড়ি রাখা সম্পূর্ন নিষেধ করা প্রয়োজন। বসার জন্য প্রয়োজনে সুন্দর সুন্দর জায়গা করে দিতে হবে। যেখানে চলাচলের কোন সমস্যা হবে না। সবথেকে বেশি প্রয়োজন যে সমস্ত হোন্ডা আরোহী সজোরে বেগে হোন্ডা চালিয়ে যায় তাদেরকে আগে গতিরোধ করতে হবে।
এবং হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে, সম্পূর্ণ হাতিরঝিল সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। এমন ভাবে যেন, কোন অপরাধ করলেই সাথে সাথে সে অপরাধীকে চিহ্নিত করা যায়। শহরের ঘিঞ্জি পরিবেশ থেকে একটু মন ভরে নিঃশ্বাস নিতে আসা দর্শনার্থীদের নির্মল বায়ুর পাশাপাশি একটি নির্মল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
আমি ১৯৯১ সাল থেকে হাতিরঝিলকে চিনি। ছোটবেলায় মধুবাগ মাঠে খেলার সময় দেখেছি। খেলার সময় বল উড়ে গিয়ে বিলে পড়তো। সে বল আমরা আবার পানি থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসতাম। আবার খেলা শুরু করতাম। বিলের মাঝে অনেক কচুরিপানা ও ঘাস হত। সে ঘাস কেটে অনেকে গরুর খাবার যোগাতো।
আমাদের দোকানের বাড়িয়ালার গরুর খামার ছিল। সে খামার দেখাশোনা করার জন্য যে লোকটি কাজ করতো, সে একবার বিলে কচুরিপানা কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিনি মারা যায়। লোকটি অনেক ভাল ছিল। আমাদের দোকান থেকে তিনি নিজের জন্য বিড়ি-সিগারেট কিনতেন। তিনি পান খেতেন ।আমরা একসময় দোকানে খিলি পান বিক্রি করতাম।এবং গরুর খাওয়ার জন্য কম দামি লবণ কিনতেন।
আমি যখন শুনতে পেলাম তিনি মারা গেছেন আমি বিশ্বাস করতে পারিনি । বিলে ঘাস কাটতে যাওয়ার সময় তিনি আমার কাছ থেকে এক প্যাকেট বিড়ি নিয়ে গিয়েছিল। একটি পান নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যার সময় তার লাশ আমি দেখতে পেলাম । ১৯৯৪ সাল আমি তখন ক্লাস সেভেন এ পড়ি। এটা একটা হৃদয়বিদারক ঘটনা ছিল আমার জন্য। আমি দোয়া করি তিনি যেন জান্নাত বাসি হোন।
দোকানের মালামাল আনতে যাওয়ার সময়; কাওরানবাজার যেতে মগবাজার রেলগেট থেকে মসজিদের পাশ ধরে কাওরানবাজার যেতে মাছের আড়ৎ ও এফডিসি রেলগেটেরগেটের যাওয়ার আগে রেললাইনের দুই পাশে প্রচুর বস্তি ঘর ছিল। বেগুনবাড়ি থেকে রামপুরা পর্যন্ত দু’ধারে অসংখ্য ছোট ছোট খুপরি ঘরে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ বস্তিবাসী বসবাস করত। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমি যখন দেখতে পাচ্ছি। হাতিরঝিলের লেকের দু’ধারে অসংখ্য রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান বেড়েই চলছে!
তখনই আমার মনে পড়ে যায় এখানে আগে অনেক বস্তি ঘর ছিল ! বস্তিঘর বা বস্তিবাসীরা কোনটাই খারাপ নয়। কিন্তু এই বস্তি বাসির সরলতা ও অভাবের সুযোগ নিয়ে বড় বড় সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে ওঠেছিল আর এই সন্ত্রাসী গ্রুপ এবং বস্তি উঠিয়ে দিয়ে এখানে হাতিরঝিলের মত একটি সুন্দর মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করে বাংলাদেশ সরকার। পরবর্তীতে বস্তিবাসীর জন্য ভাষানটেকে বড় বড় বিল্ডিং করে বসবাসের জায়গা করে দেয়।
যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি । হাতিরঝিলের প্রকৃত সৌন্দর্য ধরে রাখতে, আপনারা হাতিরঝিলে লেকের ধারে রেস্তোরাঁ অনুমোদন দিবেন না । মানুষ একটু স্বস্তিতে শ্বাস নিতে আসে। সেই প্রক্রিয়া টা বন্ধ করবেন না । হাতিরঝিলের আশেপাশে অনেক রাস্তা রয়েছে সেই সমস্ত রাস্তায় রেষ্টুরেন্টগুলো হলেই ভালো হয়।