ইসলাম ও ধর্ম ডেস্ক : হযরত উসমান (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণের চমকপ্রদ চিত্র তুলে ধরেছেন আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) তাঁর আল-ইসাবাহ’ গ্রন্থে। এখানে তা খুব সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হলো—
উসমান (রা.) বলেন, একদা আমি পবিত্র কাবা-চত্বরে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বসে ছিলাম। এমন সময় কোনো এক ব্যক্তি এসে আমাকে খবর দিল যে রাসুল (সা.) তাঁর মেয়ে রোকাইয়াকে আবু লাহাবের ছেলে উতবার কাছে বিয়ে দিয়েছেন। যেহেতু রোকাইয়া রূপ-লাবণ্য ও ঈর্ষণীয় গুণ-গরিমায় স্বাতন্ত্র্যের অধিকারিণী ছিলেন, এ কারণে তাঁকে স্ত্রী হিসেবে পেতে আমার আগ্রহ ছিল প্রবল। কিন্তু বিয়ের সংবাদ শুনে কিছুটা অস্থির হয়ে পড়লাম। সোজা চলে গেলাম বাড়িতে। তখন আমাদের বাড়িতে থাকতেন আমার খালা সাআদা। তিনি ছিলেন একজন গণক। আমাকে দেখেই তিনি অকস্মাৎ কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন, যার কোনো ভাবার্থই আমি উপলব্ধি করতে পারলাম না। সর্বশেষ তিনি বলেন, ‘মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ, যিনি আল্লাহর রাসুল, কোরআন নিয়ে এসেছেন। আল্লাহর দিকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তাঁর প্রদীপই প্রকৃত প্রদীপ, তাঁর দ্বিনই সফলতার মাধ্যম। যখন মারামারি কাটাকাটি শুরু হবে এবং অসি উন্মুক্ত হবে এবং বর্শা নিক্ষেপ করা হবে, তখন শোরগোল হৈচৈ কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।’
তাঁর এ কথা আমাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করল। আমি ভবিষ্যতের করণীয় বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে লাগলাম। আমি প্রায়ই আবু বকর (রা.)-এর কাছে গিয়ে বসতাম। দুই দিন পর আমি তাঁর কাছে গিয়ে বসলাম। তখন সেখানে কেউ ছিল না। আমাকে চিন্তিত অবস্থায় দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আজ তোমাকে এত চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন? তিনি আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। তাই আমি তাঁর কাছে আমার খালার বক্তব্য তুলে ধরলাম।
আমার কথা শুনে তিনি বলেন, উসমান, তুমি একজন বুদ্ধিমান মানুষ। সত্য-মিথ্যার পার্থক্য যদি তুমি করতে না পারো তাহলে সেটা হবে একটা বিস্ময়ের ব্যাপার। তোমার স্বজাতির লোকেরা যে মূর্তিগুলোর উপাসনা করে, সেগুলো কি পাথরের তৈরি নয়? তারা কি কোনো কিছু শুনতে পায়, দেখতে পারে, কোনো উপকার-অপকারের ক্ষমতা রাখে?
আমি বললাম, আপনি যা বলছেন, সত্যই বলছেন। আবু বকর (রা.) বললেন, তোমার খালা যে কথা বলেছেন তা সত্য। মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ আল্লাহর রাসুল। আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্যই তাঁকে তিনি পাঠিয়েছেন। যদি তুমি তাঁর কাছে যাও এবং মনোযোগ সহকারে তাঁর কথা শুনো, তাতে ক্ষতির কী আছে?
এমন সময় রাসুল (সা.) আলী (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। আবু বকর (রা.) তাঁকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এগিয়ে গিয়ে তাঁর কানে কানে কথা বললেন। রাসুল (সা.) এসে বসলেন। অতঃপর আমাকে বলেন, ‘হে উসমান, আল্লাহ জান্নাতের দিকে ডাকছেন। তাঁর ডাকে সাড়া দাও। আমি তোমার এবং সমগ্র সৃষ্টিকূলের প্রতি রাসুল হয়ে প্রেরিত হয়েছি।’
জানি না, তাঁর এ কথার মধ্যে কী শক্তি ছিল। আমি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললাম। তাত্ক্ষণিক আমার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হলো কালিমায়ে শাহাদাত। সাক্ষ্য দিলাম আমি এক আল্লাহর একত্ববাদের এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল ও নবী হওয়ার। ইবনে সাআদ (রহ.) ‘তাবাকাত’ গ্রন্থে বলেন, ‘এটা রাসুল (সা.) দারুল আরকামে অবস্থানের আগের ঘটনা।’ উসমান (রা.) বলেন, এ ঘটনার পরই মক্কাতেই নবীর কন্যা রোকাইয়ার সঙ্গে আমার বিয়ে সম্পন্ন হয়। (আল-ইসাবাহ, ৮/১৭৬-১৭৮)