সেন্ট্রাল ডেস্ক: প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক বছরের মধ্যেই বিলাসবহুল বাড়ি, চলাফেরায় চাকচিক্য আর আদিখ্যেতা। প্রতারণার আশ্রয়ে, মিরপুরের হকার থেকে কয়েক বছরেই বনে গেছেন শতকোটি টাকার মালিক। শতাধিক প্রতারণার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে জানিয়ে ডিবি বলছে, বিদেশি বন্ধু সেজে গেল ১০ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছে বিপ্লব লস্কর।
শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া সেই বিপ্লবসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তারের পর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে রক্ষা পেতে বিগ বস খ্যাত বিপ্লব ব্যবহার করত রাউটার, কথা বলতেন শুধু বিদেশি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানী মিরপুর, ভাটারা থানা এলাকায় এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তারণার জন্য অভিনব সব কৌশলের সহায়তা নেয়ায় দীর্ঘদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকলেও অবশেষে বিপ্লব লস্কর আইনের জালে। উঠে আসে উপহারের নামে প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাইজেরিয়া, কম্বোডিয়া ও ক্যামেরুনসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশের প্রতারক, দামি উপহারের অজুহাতে হাতিয়ে নেয় বিপুল অর্থসম্পদ। কলিং ও ব্যাংকিং ম্যানেজমেন্ট নামে দুভাগে, কয়েক ধাপে প্রতারণা করছে চক্রটি। টার্গেট ঠিক করে শুরুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার চেষ্ট করে প্রতারক চক্রটি। পরবর্তীতে নিজের সীমাবন্ধতার কথা জানিয়ে, সাথে থাকা ডলার ও মূলবান উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। মুঠোফোনে কল দিয়ে কাস্টম অফিসার পরিচয়ে যোগাযোগ করে চক্রের অন্য সদস্য। মূলবান উপহার গ্রহণের জন্য কৌশলে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় লক্ষাধিক টাকা।
চক্রটিকে সহায়তা করা বাংলাদেশিদের অন্যতম হোতা বিপ্লব লস্করের নিয়ন্ত্রণে ছিলো ব্যাংক হিসাবগুলো। টাকা তুলে বিদেশি সদস্যদের পৌঁছে দিয়ে পেতেন মোটা অঙ্কের কমিশন। পরে প্রতারণা থেকে প্রাপ্ত অর্থ, বাংলাদেশে থাকা প্রতারকরা ব্যবসায়ের নামে পাঠিয়ে দেয় নিজ দেশে।
পুলিশ জানায়, বিপ্লব লস্করের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলাসহ অপহরণ, অস্ত্র ও প্রতারণার মামলাও রয়েছে। পাশাপাশি বিদেশি প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস মিলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে। জানা গেছে, এই প্রতারণার সাথে জড়িত অন্যান্যদের ধরতে চলমান রয়েছে অভিযান।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের থেকে উদ্ধার করা হয় বিদেশী পিস্তল, গুলি, ম্যাগজিন, ২৮ টি মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ৪৯১ টি এটিএম কার্ড, ২৬ টি চেক বই, চেকের পাতা-১৪১৫টি, ওয়্যারলেস পকেট রাউটার, প্রাইভেটকার। এছাড়াও সাড়ে তিন লাখ জাল টাকা, ১১ লাখ ৩৫ হাজার নগদ টাকা, প্রতারণা সম্পর্কিত কথোপকথনের অসংখ্য স্ক্রীনশট ও ২৬৩ টি সীম কার্ড উদ্ধার করা হয়। ডিজিটাল মাধ্যমে এমন প্রতারণা থেকে রেহাই পেতে ব্যক্তি সচেতনা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নেয়ার আহ্বান জানায় গোয়েন্দা পুলিশ।