বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার পাশাপাশি রুপার দাম পৌঁছেছে কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায়। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদে ঝুঁকছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রুপার দাম আউন্সপ্রতি ৫০ ডলার ছুঁয়েছে—যা ১৯৮০ সালের পর সর্বোচ্চ।
সুইস ব্যাংক সিতে জেসসিয়নের বিনিয়োগ কৌশলপ্রধান জন প্লাসার্ড বলেছেন, ‘এটি অনেকটা ‘ক্যাচ-আপ’ প্রভাবের মতো। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ, ফেডারেল রিজার্ভের সম্ভাব্য সুদহার কমানো এবং ফ্রান্সের ঋণ পরিস্থিতি—সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা রুপার দিকে ঝুঁকেছেন।’
তিনি আরও জানান, রুপার দাম বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হলো—বিশ্ববাজারে ধাতুটির ঘাটতির কথা শোনা যাচ্ছে। বিনিয়োগের পাশাপাশি সৌর প্যানেলসহ বিভিন্ন শিল্পেও রুপার ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিশ্চিত সময়ে স্বর্ণ ও রুপা—উভয়ই নিরাপদ বিনিয়োগের আশ্রয় হিসেবে কাজ করে।
এদিকে, মার্কিন ডলার প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে আবারও শক্তিশালী হচ্ছে। ২০২৫ সালের বেশিরভাগ সময় দুর্বল থাকার পর এখন ডলারের পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে। কনভেরা নামের এক বিশ্লেষণ সংস্থা জানিয়েছে, ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও জাপানের নরম আর্থিক নীতির কারণে বিদেশি মুদ্রাবাজারে ডলার পুনরায় গতি পাচ্ছে।
শেয়ারবাজারে বৃহস্পতিবার মিশ্র প্রবণতা দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কার্যক্রম বন্ধ (শাটডাউন) থাকায় নতুন অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ না হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ ছিল কোম্পানিগুলোর ত্রৈমাসিক ফলাফলের দিকে।
সফট ড্রিংকস ও স্ন্যাকস প্রস্তুতকারী জায়ান্ট পেপসিকোর শেয়ার ৪.২ শতাংশ বেড়েছে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো বিক্রির কারণে। একইভাবে, ডেলটা এয়ারলাইনসের শেয়ারও ৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে শক্তিশালী মুনাফা ও ভ্রমণচাহিদার আশাবাদী পূর্বাভাসে।
অন্যদিকে, বোয়িংয়ের শেয়ার ৪.১ শতাংশ কমেছে। ইউরোপে, ফ্রান্সের শেয়ারবাজার সামান্য নিম্নমুখী হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ নতুন প্রধানমন্ত্রী খুঁজতে ব্যস্ত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুর পদত্যাগ রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর করেছে। তবে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের ডিএএক্স সূচক নতুন রেকর্ড গড়েছে।
ইতালির ফেরারির শেয়ার ২০১৬ সালের পর সবচেয়ে বড় পতনের মুখে পড়েছে—একপর্যায়ে প্রায় ১৫ শতাংশ নিচে নামে। কোম্পানিটির ২০৩০ সালের আর্থিক পূর্বাভাস বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে।
এশিয়ায়, জাপানের টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ ১.৮ শতাংশ বেড়ে বন্ধ হয়। সম্প্রতি জাপানের শাসকদলের নতুন নেতা হিসেবে ব্যবসাবান্ধব সানায়ে তাকাইচি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশাবাদ তৈরি হয়েছে।