ন্যাশনাল ডেস্ক, এইউজেডনিউজ২৪: সৌদি আরবে বিভিন্ন প্রদেশে আর কতো বাংলাদেশী নারী শ্রমিকের পাশবিক নির্যাতনে লাশ দেখতে হবে! এই কোন আরবীয় মধ্যযুগীয় বর্বরতা! নবী-রাসূলের দেশ সৌদি আরবে গিয়ে বাংলার জমিন থেকে এক বেলা ভাত, মা-বাবার মুখে হাসি ফোটানো, ভাই-বোনকে নতুন জামা কিনে দেবে গায়ের শ্রম দিয়ে ছোট বোন উম্মে কুলসুমা। অথচ ১৪-১৫ বছরের মেয়েটি ১১ সেপ্টেম্বর মরদেহ নিয়ে ঢাকার বিমানবন্দরে। এভাবে কুলসুমের বড়বোন উম্মে হাবিবা আক্ষেপ করে বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমার বোন সৌদি আরব গিয়েছিল। সেখানে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আমার বোন লাশ হয়ে দেশের মাটিতে ফিরল। আমরা জানি এর বিচার পাব না।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গত ৯ আগস্ট আমার বোন সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে মারা যায়। শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে আমার ছোট বোনের লাশ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে। শনিবার দুপুরে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। বাদ মাগরিব তার লাশ দাফন করা হয়।
পরিবারের সচ্ছলতা আনতে কিশোরী বয়সে সৌদি আরবে গিয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোর্কণ ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে উম্মে কুলসুম (১৪)। সেখানে গিয়ে চাকরি আর বেতনের পরিবর্তে নির্যাতনের শিকার হয়ে সৌদি আরবের একটি হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিশোরী কুলসুম। স্বপ্নযাত্রা ধূলিসাৎ হয়ে অবশেষে লাশ দেশের মাটিতে ফিরল কিশোরী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমরা এ ঘটনার জন্য বিচার চাই। কেন এভাবে বিদেশের মাটিতে গিয়ে অকালে মরতে হবে? নিহতের পিতা শহিদুল ইসলাম জানান, গত মাসের ১৭ আগস্ট জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে তিনি তার মেয়ের লাশ ও আট মাসের বকেয়া বেতন ফেরত পেতে একটি লিখিত আবেদন করেন।
লিখিত অভিযোগ তিনি বলেন, স্থানীয় দালাল রাজ্জাক মিয়ার মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ১৭ মাস আগে মেসার্স এম এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের (আর এল নং-১১৬৬) মাধ্যমে কুলসুমকে গৃহকর্মীর কাজে সৌদি আরব পাঠানো হয়। সেখানে গৃহকর্মী হিসেবে যোগদানের পর থেকেই আমার মেয়ে কুলসুমের উপর শারীরিক ও যৌন নির্যাতন শুরু করে মালিকপক্ষ। নির্যাতনের কারণে মেয়েকে ফিরিয়ে আনার জন্যে রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার পরও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। গত চার মাস পূর্বে সৌদি আরবে গৃহকর্তা ও তার ছেলে মিলে কুলসুমের দুই হাঁটু, কোমর ও পা ভেঙে দেয়। এর কিছুদিন পর একটি চোখ নষ্ট করে রাস্তায় ফেলে দেয়। পরে সৌদি আরবের পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সেখানকার কিং ফয়সাল হাসপাতালে ভর্তি করে। গত ৯ আগস্ট সেখানকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় কুলসুম।
নিহতের মা নাসিমা বেগম বলেন, মেয়ে মারা যাওয়ার পর একাধিকবার প্রতিকার চেয়ে নাসিরনগর থানা পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কোনো পাত্তা দেননি। তিনি তার কন্যা কুলসুম হত্যার বিচার দাবি করেন। পাশাপাশি বিদেশের মাটিতে গিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনি ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
এ ব্যাপারে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আরিচুল হক জানান, দুই দেশের বিষয় হওয়ায় নাসিরনগর থানা পুলিশের পক্ষে কোনো ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা কোনো ধরনের নির্দেশনা পাইনি। তাই আপাতত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। সূত্র : ইউএনবি ও সময় টিভি