ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, এইউজেডনিউজ২৪: সৌদি আরবের বহুল আলোচিত সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যা মামলার রায় দিয়েছে দেশটির বিজ্ঞ আদালত। এতে ৮ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
সোমবার এই রায় দেয় আদালত। যেখানে পাঁচ জনের ফাসির আদেশ ছিল তা পরিবর্তন করে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সাথে বাকি তিন জনকেও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরে তাকে কনস্যুলেটের ভিতরেই হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করার প্রমাণ মেলে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক ছিলেন এই সাংবাদিক খাসগি। তবে এ রায়কে প্রহসনের রায় বলেছেন তার স্ত্রী।
২০১৮ সালের ২ অক্টোবরে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে নিখোঁজ হন খাশোগি। পরে তুর্কি কর্তৃপক্ষ তথ্য প্রমাণসহ জানায়, কনস্যুলেটে সৌদি আরবের ভাড়া করা একদল খুনির হাতে নির্মম হত্যার শিকার হন তিনি।
হত্যার পর তার মরদেহ টুকরো টুকরো করা হয়। ঝলসিয়ে দেয়া হয় এসিড দিয়ে। ২ বছর হতে চললেও এখনো তার মরদেহের হদিস মেলেনি।
ওয়াশিংটন ডিসির আরব সেন্টার থেকে খালিল জাহশান জানান, এটিই চূড়ান্ত রায়। হত্যা মামলার রায় পূনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।
আল জাজিরাকে খাশোগির পারিবারিক বন্ধু জাহশান বলেন, এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো জামাল খাশোগির মরদেহ কোথায়? আমি চাই তার মরদেহের সঙ্গে কী হয়েছে তাও উদঘাটন করা হোক।
পুরো রায় আমার কাছে কারচুপি মনে হচ্ছে। সৌদি আরবের বিচার কার্যক্রম অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার চাইলে সাজা কমানো বা অর্থের বিনিময়ে সাজা মওকুফ করতে পারে। খাশোগির পরিবার এমন একটি ঘোষণাও দিয়েছিল। পুরো বিষয়টি তাদের উপর চাপ দিয়ে করা হয়েছে- এতো সন্দেহের অবকাশ নেই। খাশোগির পরিবার স্বেচ্ছায়, জ্ঞাতসারে ওই ঘোষণা দেয়নি বলে আমার মনে হয়। বলেন খাশোগির পারিবারিক বন্ধু।
৫৯ বছর বয়সী ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট খাশোগি সৌদি সরকারের কট্টর সমালোচক ছিলেন।
বেশ কয়েকটি পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে দাবি করে হত্যার মিশন সম্পর্কে আগে থেকে জানতেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। তার নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে বলেও খবর প্রকাশ হয়। চূড়ান্ত রায়ের পরও খাশোগি হত্যায় ক্রাউন প্রিন্সের জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়টি মীমাংসা না হওয়ায় রায় নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
খাশোগি হত্যার শুরু থেকে এতে জড়িত থাকার কথা অব্যাহতভাবে অস্বীকার করে সৌদি আরব। কয়েক সপ্তাহ পর আন্তর্জাতিক চাপে যখন স্বীকারে বাধ্য হয় তখন হত্যাকাণ্ডকে দুর্বৃত্তের কর্মকাণ্ড বলে অভিহিত করে।
২০১৯ সালের জুনে জাতিসংঘের বিশেষদূত অ্যাগনেস ক্যালামার্ড তার প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানসহ দেশটির কর্মকর্তারা জড়িত থাকার অকাট্য প্রমাণ পেয়েছেন বলে দাবি করেন। খাশোগি হত্যার জন্য সৌদি কর্মকর্তাদের দায়ী করেন ইস্তাম্বুল প্রসিকিউটরও।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী খাশোগি হত্যাকাণ্ড বিশ্বব্যাপী সৌদিবিরোধী ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হুমকিতে পড়ে ক্রাউন প্রিন্সের ভাবমূর্তি।
জামাল খাশোগি ছিলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ানের পরিচিত। হত্যাকাণ্ড ঘটে তুরস্কে। সবমিলিয়ে তখন তুর্কি-সৌদি সম্পর্ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মার্চে তুর্কি প্রসিকিউটর জানান, মোহাম্মদ বিন সালমানের সাবেক দুই জ্যেষ্ঠ সহকারীসহ সৌদি আরবের ২০ নাগরিক খাশোগি হত্যায় জড়িত।
রায়ে, সৌদির সাবেক গোয়েন্দা উপপ্রধান আহমেদ আল আসরিকে হত্যার পরিকল্পনা এবং ভাড়াটে খুনির দল জোগাড়ের জন্য অভিযুক্ত করা হয়।
খুনির দলকে নেতৃত্ব দেয়া, হত্যার জন্য প্ররোচিত করা এবং নির্দেশ দেয়ার জন্য সৌদি আরবের রয়েল কোর্ট এবং মিডিয়া অ্যাডভাইজার সৌদ আল খাহতানিকে দায়ী করা হয়। সৌদি মিলিটারি এবং গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তাকে হামলায় অংশ নেয়ার জন্য দায়ী করে তুর্কি প্রসিকিউশন।