গুজরাটের ভদোদরা জেলার বোজপুর অঞ্চলে মাহি নদীর ওপর নির্মিত গম্ভীরা-মজপুর সেতুর একটি বড় অংশ হঠাৎ করেই ধসে পড়েছে নদীতে। ৯ জুলাই ব্যস্ত সময়ে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুর্ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে চলন্ত গাড়ি নদীতে পড়ে যাচ্ছে।
ধসে পড়া অংশের কারণে দুটি ট্রাক, একটি পিকআপ ভ্যান এবং একটি এসইউভি গাড়ি সরাসরি নদীতে পড়ে যায়। স্থানীয় প্রশাসন, দমকল বাহিনী ও দুর্যোগ মোকাবেলা দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। নদীতে তল্লাশি অভিযান এখনো চলছে, এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-এর তথ্য অনুযায়ী, সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা বহুবার মেরামতের দাবি জানালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যদিও গুজরাটের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঋষিকেশ পাটেল দাবি করেছেন, সেতুটি পূর্বে মেরামত করা হয়েছিল।
এ ঘটনার পর গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ২১২ কোটি রুপি ব্যয়ে একটি নতুন সেতু নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছেন। পাশাপাশি রাজ্য সরকার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। আনন্দ ও স্বরাষ্ট্র থেকে বদোদরা অভিমুখে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারকে ২ লাখ রুপি করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।এই ঘটনার জেরে রাজ্য সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছে বিরোধী দলগুলো। কংগ্রেস নেতা অমিত চাদভা একে প্রশাসনের ‘চরম অবহেলা’ আখ্যা দিয়ে বলেন, বিপদজনক সেতু আগেই বন্ধ করা উচিত ছিল। আম আদমী পার্টির নেতা ইসুদান গাধী বলেন, বেহাল সেতু চালু রাখা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।
উল্লেখ্য, ভারতে সেতু ও সড়ক অবকাঠামোর দুর্বলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনা চলছে। ২০২২ সালে গুজরাটেই একটি শতবর্ষী ঝুলন্ত সেতু ধসে ১৩২ জন নিহত হয়েছিলেন। গত মাসেও পুণের একটি পর্যটন এলাকায় সেতু ধসে ৪ জনের মৃত্যু হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক ঘনবর্ষণে বিভিন্ন সড়ক ও সেতুর ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে, যার ফলে এ ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।