আপনার মর্নিং শিফট। সকালবেলা অফিসের সময় হয়ে যাচ্ছে, আপনি তখনো ঘুমে বিছানায়। অ্যালার্ম বাজল পরপর দুবার। টের পেলেন, তবুও গা করলেন না। তৃতীয়বার বাজতেই হুঁশ ফিরল—আরে, আজ তো লেট হয়ে যাবে! ধড়মড় করে উঠে বসলেন। নাকে–মুখে সামান্য পানির ছিটা দিয়ে ছুটলেন বাইরে। তাড়াহুড়ার কারণে গোসলের সময় পেলেন না।
ভাদ্র মাসের তালপাকা গরম। সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামতেই ঘামতে শুরু করলেন। রাস্তায় বেরিয়ে একটি মুড়ির টিন বাস পেয়ে বাদুড়ঝোলা হয়ে উঠে পড়লেন। গাদাগাদি আর ভ্যাপসা গরমে পুরো শরীর ঘেমেনেয়ে একাকার। জামাকাপড় চুপচুপে, নাক–মুখ তেলতেলে। এ অবস্থায় অফিসে ঢুকে সোজা ডেস্কে—হাতমুখ না ধুয়েই পিসি অন করে বসে পড়লেন।
আপনার বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে সহকর্মীরা চোখ কপালে তুললেন না; তাঁরা বরং নাক চেপে ধরলেন। কারণ, আপনার গা থেকে বেরিয়ে আসছে ঘামের উৎকট গন্ধ।
আপনার এই বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে সহকর্মীরা চোখ কপালে তুললেন না; তাঁরা বরং নাক চেপে ধরলেন। কারণ, আপনার গা থেকে বেরিয়ে আসছে ঘামের উৎকট গন্ধ। কেউ কিছু বলছেন না; কিন্তু সবার মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। এ কারণে কেউই আপনার কাছে ঘেঁষতে চাইছেন না। মনে মনে বলছেন, লোকটা দেখি খুবই নোংরা! এত বিশ্রী গন্ধ নিয়ে থাকেন কীভাবে?
এ পরিস্থিতি এড়ানো যেত খুব সহজেই। যদি অফিসে ঢুকেই আগে ফ্রেশ হয়ে নিতেন, গায়ে মেখে নিতেন হালকা সুগন্ধি, তাহলে দৃশ্যটা হতো একেবারে উল্টো। তখন কেউ হয়তো আপনার পাশে এসে বলতেন, ‘ভাই, আপনার পারফিউমটা দারুণ! এটা কোন ব্র্যান্ডের?’ আপনি হাসিমুখে উত্তর দিলে, তিনি বলতেন, ‘বাহ, আপনার রুচি তো চমৎকার!’
সুগন্ধি ব্যবহারের সুফল এখানেই। এটি শুধু সামাজিক সৌজন্য নয়; বরং একধরনের আধ্যাত্মিক অনুশীলনও। নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা, অন্যের জন্য আরামদায়ক করে তোলা। এটিই তো প্রকৃত রুচি।
দুনিয়ার দুটি জিনিস আমার প্রিয় করে দেওয়া হয়েছে: স্ত্রী ও সুগন্ধি। আর আমার আত্মার প্রশান্তি নিহিত রয়েছে নামাজে।
সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ৩,৯৩৯
নবীজি (সা.) সুগন্ধি খুবই ভালোবাসতেন। এটি ছিল তাঁর প্রিয় অভ্যাসগুলোর একটি। নবীজি বলেন, ‘দুনিয়ার দুটি জিনিস আমার প্রিয় করে দেওয়া হয়েছে: স্ত্রী ও সুগন্ধি। আর আমার আত্মার প্রশান্তি নিহিত রয়েছে নামাজে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ৩,৯৩৯)
নবীজি (সা.) নিয়মিত সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। এটি তাঁর বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য ছিল। তা ছাড়া ফেরেশতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, সাধারণ মুসলিম এবং দূত ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত মতবিনিময় হতো। সে জন্যও তিনি সুগন্ধি ব্যবহার করতে ভালোবাসতেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুলের একটি আতরদানি ছিল, যা থেকে তিনি সুগন্ধি ব্যবহার করতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,১৬২)
সুমামা ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, কেউ সুগন্ধি দিলে আনাস (রা.) তা ফিরিয়ে দিতেন না। তিনি বলতেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) কখনো সুগন্ধি ফিরিয়ে দিতেন না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৫৮২)
আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কারও সামনে সুগন্ধি পেশ করা হলে সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়। কেননা, তা সুঘ্রাণ ও সহজে বহনযোগ্য।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,১৭২)