চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে দ্বিতীয় দিনের মত উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল হামিদ মিয়া রোববার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত রাত ১১টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলেছে। আজ আবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়েছে।”
শিল্পে ব্যবহারের জন্য অক্সিজেন উৎপাদনকারী ‘সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে’র অবস্থান সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে। শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সেখানে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে।
ওই ঘটনায় রাত পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন অন্তত ২০ জন।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা হামিদ মিয়া জানান, রাতে বা সকালে ভেতর থেকে নতুন কোনো মৃতদেহ কিংবা আহত কাউকে উদ্ধার করা হয়নি। কেউ নিখোঁজ থাকার তথ্যও তাদের হাতে নেই।
ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যেখানে ‘সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট’গড়ে তোলা হয়েছিল, সেখানে সরু সড়কের দুই পাশে ৮-১০টি স্টিল রি-রোলিং মিল, তেলের রিফাইনারিসহ বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানার পাশাপাশি বসতবাড়িও ছিল।
ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর এলাকাটি রূপ নিয়েছে ধ্বংসস্তূপে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশপাশের কারখানা, বসতবাড়ি। সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। লোহার বেড়া আটকে রাখার অ্যাঙ্গেলগুলো পর্যন্ত বেঁকে গেছে।
প্ল্যান্ট প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সিলিন্ডার, লোহার টুকরো, ভেঙেচুরে একাকার হয়ে যাওয়া তিনটি ট্রাক। কারখানা থেকে ৫০-৬০ গজ দূরে গিয়ে পড়ে রয়েছে লোহার টুকরো। শুধু তাই নয়, প্রায় ৫০০ গজ দূরে ছিটকে পড়া লোহার টুকরোর আঘাতে একজনের প্রাণহানিও হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের ডিএডি হামিদ মিয়া বলেন, “গত বছর বিএম ডিপোতে আগুন লেগে বিস্ফোরণ হয়েছিল। এখানে বিস্ফোরণের কারণে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে।”
তবে সেখানে বিস্ফোরণ কেন ঘটল, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিস্ফোরক অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন।
রোববার সকালে ওই ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠক হবে, সেখানে জানানো হবে বিস্তারিত।”
দুর্ঘটনাকবলিত প্ল্যান্টটিতে উৎপাদন করা হত অক্সি-এসিটিলিন গ্যাস। এটি মূলত শিল্পে ব্যবহার করা অক্সিজেনের প্ল্যান্ট। অক্সি-এসিটিলিন গ্যাসের শিখা দিয়ে লোহার পাত কাটা হয়। একই সঙ্গে রি রোলিং মিলে লোহা গলাতে ব্যবহার করা হয়।
আশপাশের জাহাজভাঙা শিল্প ও স্টিল রি-রোলিং মিলে ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা হয় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে।
এ কোম্পানির মালিকানাধীন শিল্পগ্রুপের জাহাজ ভাঙা শিল্প ও রি রোলিং মিলও রয়েছে। জাহাজভাঙা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শফি কারখানাটি গড়ে তোলেন বলে জানালেন স্থানীয়রা। তার মৃত্যুর পর তার তিন ছেলে মামুন উদ্দীন, আশরাফ উদ্দীন ও পারভেজ উদ্দীন কোম্পানিটি চালাচ্ছেন।
মামুন উদ্দীন এটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সীতাকুণ্ডের জাহানাবাদে এস ট্রেডিং নামে তাদের শিপইয়ার্ড রয়েছে। বানু বাজার এলাকায় সীমা স্টিল রি-রোলিং মিল নামে তাদের মালিকানাধীন আরেকটি কারখানা রয়েছে।
ঘটনার পর মোবাইল ফোনে মামুন উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানও শনিবার বলছেন, তারাও ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিকপক্ষের কাউকে দেখতে পাননি।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে সিলিন্ডার রিফিল করা হত। ঘটনা কী কারণে, সেটা এখনই বলা যাবে না। তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কারণ নির্ণয় করা যাবে।”