গত মাসে মুম্বাইয়ে নিজের বাড়িতেই হামলার শিকার হন বলিউড তারকা সাইফ আলী খান। তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। অস্ত্রোপচার শেষে অভিনেতা বাড়িতে ফিরেছেন, তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। হামলার ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলমান। জানেন কি, এর আগেও সাইফের নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। একটি ওয়েব সিরিজকে কেন্দ্র করে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সেই বিতর্ক এতটাই প্রবল ছিল যে সাইফের নিরাপত্তাও শঙ্কায় পড়ে।
২০২১ সালের ১৫ জানুয়ারি মুক্তি পায় ওয়েব সিরিজ ‘তাণ্ডব’। আলী আব্বাস জাফরের ৯ পর্বের এই রাজনৈতিক থ্রিলার নিয়ে মুক্তির আগেই বিতর্ক তৈরি হয়। সুনীল গ্রোভার, তিগমাংশু ধুলিয়া, ডিম্পল কাপাডিয়া, জিশান আইয়ুবের সঙ্গে সিরিজের মূল চরিত্রে ছিলেন সাইফ আলী খান।
হিন্দু দেব–দেবীদের বিকৃত রূপে তুলে ধরে ওই সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে, এই অভিযোগে ‘তাণ্ডব’ ওয়েব সিরিজের নির্মাতা ও অভিনেতাদের বিরুদ্ধে লক্ষ্ণৌয়ে এফআইআর হয়েছিল। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে মুম্বাইয়ে রওনা দেয় উত্তর প্রদেশ পুলিশ। মুম্বাইয়ে বিজেপি নেতা ও বিধায়ক রাম কদমের নেতৃত্বে বিক্ষোভ ও পোস্টার ছেঁড়াও চলে সমানতালে।
অ্যামাজন প্রাইমের দপ্তরে টানা ছয় ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন রাম কদম। বৈঠক শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের চাপ এতটাই প্রবল ছিল যে টিম “তাণ্ডব” অবশেষে দেশের কাছে মাথা নুইয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছে। তবে আমরা এতেও সন্তুষ্ট নই। যতক্ষণ না তাদের জেলে ভরা হচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের প্রতিবাদ থামবে না এবং রাস্তায় বিক্ষোভ চলতে থাকবে।’এরপরই ‘তাণ্ডব’–এর নির্মাতাদের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে কারও অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে। পরে ক্ষমা প্রার্থনার আরও একটি বিবৃতি দেয় অ্যামাজন প্রাইম। সিরিজের প্রথম পর্ব ‘তানাশাহ’ থেকে শিব ও নারদরূপী দুটি প্রধান চরিত্রের মধ্যে সংলাপের দৃশ্যও বাদ দেওয়া হয়।
মনে করা হয়, এ ঘটনার পর থেকেই ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের কনটেন্ট নির্বাচনে সতর্ক হয়ে গেছে। ‘তাণ্ডব’-এর দ্বিতীয় মৌসুম যে এ কারণেই আসেনি, সেটা সহজেই অনুমেয়।
এ ছাড়া দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিনেমা প্রযোজনা করার পরও মুক্তি দেয়নি আরেকটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স। সেই সিনেমায়ও আছে রাজনৈতিক বক্তব্য।
‘তাণ্ডব’ মুক্তির পরই এর অভিনয়শিল্পী সাইফ আলী খান ও নির্মাতা আলী জাফর আব্বাসের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল। কারণ, অনেক গোষ্ঠী প্রকাশ্যেই তাঁদের হুমকি দিয়ে আসছিল।
তবে এই সিরিজ নিয়ে অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতারা কার্যত দুই দলে ভাগ হয়ে যান। কঙ্গনা রনৌত সিরিজটির প্রবল সমালোচনা করেছিলেন। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান অভিনেতা কৌশিক সেন মনে করেন, সিরিজটিতে বিতর্কিত কিছু নেই। এটা নিয়ে যা হয়েছে, তার সবটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপের মুখে অ্যামাজনের পিছু হটাকেও দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছিলেন অভিনেতা।
জানা গেছে, তখনকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রচণ্ড চাপে ছিলেন সাইফ আলী খান। তাঁর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় কি না, সে শঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। এত দিন পরও ‘তাণ্ডব’ বিতর্ক নিয়ে মুখ খোলেননি অভিনেতা।