ইকোনোমিক ডেস্ক, আজনিউজ২৪: আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় সমাজের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে নামমাত্র জমার বিনিময়ে হিসাব খোলার সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। মাত্র ১০ টাকা, ৫০ টাকা এবং ১০০ টাকা জমা দিয়ে এসব হিসাব খুলতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১০ বছরে বিভিন্ন ব্যাংকে এ ধরনের হিসাব খোলা হয়েছে প্রায় সোয়া দুই কোটি, যেগুলোতে জমা আছে প্রায় দুই হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত বছর ২০ লাখের মতো হিসাব খোলা বেড়েছে। তবে এ সময়ে কৃষকের ১০ টাকার হিসাব বৃদ্ধির পরিবর্তে উল্টো কমে গেছে। এর পরিমাণ সাড়ে চার লাখেরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল ইনক্লুশন বিভাগের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার হিসাব পরিচালনায় কোনো ধরনের চার্জ কাটতে পারবে না ব্যাংকগুলো। নেই ন্যূনতম জমার কোনো বাধ্যবাধকতাও। এ ছাড়া এসব হিসাবে জমা অর্থের ওপর মুনাফার হার অন্য হিসাবের চেয়ে বেশি দিতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, মহামারি করোনার মধ্যেও ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার হিসাব খোলায় ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে কৃষকের হিসাব কমে যাওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ তাঁরা বলতে পারছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, দুটি সরকারি ব্যাংকে কৃষকের হিসাব সঠিকভাবে হালনাগাদ না করায় এগুলো বাদ পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, কী কারণে কৃষকের ব্যাংক হিসাব কমে গেল সেটি আমার জানা নেই। তবে আমাকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, সার্বিকভাবে ১০ টাকার হিসাব বেড়েছে।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের আওতায় কৃষকের নামে ১০ টাকায় হিসাব খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করা হয় ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকে কৃষকের নামে খোলা হিসাবের সংখ্যা দাঁড়ায় এক কোটি এক লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫টি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এসে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৯৭ লাখ ২৮ হাজার ৫১৮টি। তবে কৃষকের হিসাব কমলেও জমার পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৯ সালে কৃষকের হিসাবগুলোতে জমার পরিমাণ ছিল ৩৫১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। গত বছর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৪০৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সব মিলে গত বছর শেষে ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার মোট হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ২৫ লাখ আট হাজার ২২টি। এসব হিসাবে মোট জমার পরিমাণ দুই হাজার ৩৪৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১০ টাকার কৃষকের হিসাব ছাড়া অন্যান্য ১০ টাকা, ৫০ টাকা ও ১০০ টাকার হিসাব বেড়েছে। সরকারি নানা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ভাতা ও বেতন প্রদান ছাড়াও আর্থিক সেবার আওতা বৃদ্ধির জন্য এসব হিসাব খোলা হয়েছে। এর মধ্যে গত বছর শেষে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৭৯টি হিসাব খোলা হয়েছে। এসব হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ ২০২ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের হিসাব খোলা হয়েছে চার লাখ ৪৫ হাজার ৭২১টি, জমার পরিমাণ ১৫৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় খোলা হয়েছে ৭৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫৮৪টি, জমার পরিমাণ ৭৫১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। মুক্তিযোদ্ধারা হিসাব খুলেছেন তিন লাখ ৩১ হাজার ৭৮০টি, জমা আছে ৫২৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র জীবন বীমা পলিসি গ্রহীতা, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির সুবিধাভোগী, ফুড ও লাইভলিহুড সিকিউরিটি প্রকল্প, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন শ্রমিক, দুস্থ পুনর্বাসনের অনুদানভোগী, এলএসবিপিসি প্রকল্পভুক্ত কারিগর, দুস্থ পুনর্বাসনের অনুদানভোগীসহ অন্যান্য খাতে ১২ লাখ ৬১ হাজার ৬৭৩২টি হিসাব খোলা হয়েছে, যেগুলোতে জমা আছে ২৯৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
সূত্র: কালের কণ্ঠ