ন্যাশনাল ডেস্ক, এইউজেডনিউজ২৪, ২০ নভেম্বর, ২০১৯ইং : সড়ক পরিবহনের নতুন আইন কার্যকরের প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘট পালন করছেন মালিক-শ্রমিকরা। দেশের বিভিন্নস্থানে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
কুমিল্লা: ইউএনবির কুমিলা প্রতিনিধি জানান, কোনরকম ঘোষণা ছাড়াই কুমিল্লায় চলছে পরিবহন ধর্মঘট। ফলে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যানচলাচল।
কুমিল্লা থেকে অভ্যন্তরীণ সব সড়কপথে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, কভার্ডভ্যানসহ পণ্যবাহী সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সকাল থেকেই জেলার শাসনগাছা জাঙ্গালিয়া, আলেখারচর ও পদুয়ার বাজারে যান চলাচলে বাধার সৃষ্টি করছে শ্রমিকরা। বাসস্ট্যান্ড এলাকাগুলোতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তাদের দাবি নতুন সড়ক আইন সংস্কার করতে হবে।
দিনাজপুর: একই দাবিতে দিনাজপুরে সকাল থেকে পণ্যবাহী ট্রাক, কভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে চালকরা। ফলে সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে জেলার সবকটি রুটের পণ্যবাহী যান চলাচল।
ট্রাক চালকরা জানান, সড়কে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে অটোরিক্সা, ভটভটি, নসিমনের জন্য। কিন্তু আইন না মেনে এসব যান চালালেও তদের কোন লাইসেন্স নেই।
তারা আরও জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইনে ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। রাস্তায় ট্রাক চালাতে গিয়ে কোন কারনে দুর্ঘটনা ঘটলে এ টাকা দেয়ার সামর্থ তাদের নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালক ইউএনবিকে বলেন, ‘আইনটি বহাল থাকলে প্রয়োজনে তারা অন্য কাজ করে সংসার চালাবেন। কিন্তু গাড়ী চালিয়ে বিপদ ডেকে আনবেন না।’
কুড়িগ্রাম: দেশের উত্তরাঞ্চলের এ জেলাতেও অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সকল রুটে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকে ট্রাক, ট্যাংকলড়ী, কভার্ডভ্যান শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করলেও পরে তাদের সাথে যোগ দিয়েছে বাস শ্রমিকরা।
এ অবস্থায় বিশেষ করে দুরপাল্লার যাত্রীরা অপেক্ষা করেও কোনো যানবাহন না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করতে যাওয়া দিনমজুর শ্রেণির মানুষেরা কাজে যেতে না পারায় বেশি বিপাকে পড়েছেন।
জেলা মটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘শ্রমিকরা মালিকদের না জানিয়ে আজ সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। এতে আমরা মালিক পক্ষ বিব্রত। তবে তাদের যৌক্তিক দাবি আমরা সমর্থন করি।’
মেহেরপুর: টানা তিন দিন ধরে বাস ধর্মঘটের পর আজ সকাল থেকে জেলায় শুরু হয়েছে ট্রাক, ট্রাংকলরী ও কভার্ডভ্যান ধর্মঘট। ফলে সকাল থেকে কোন পণ্যবাহী পরিবহন জেলা থেকে ছেড়ে যায়নি। পাশপাশি বন্ধ রয়েছে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এ জেলাটি কৃষি প্রধান হওয়ায় চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন কৃষক ও কৃষির সাথে সংশ্লিষ্টরা। কারণ এখন শীতকালীন সবজির ভরা মৌসূম।
জমি থেকে শীতকালীন সবজি- ফুলকপি, বাঁধাকপি, শষা, কাঁচা মরিচ না তুলতে পারলে মাঠেই নষ্ট হবে কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল। এখানকার উৎপাদিত সবজি চলে যায় যায় রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট বরিশলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। ধর্মঘট অব্যহত থাকলে চরম আর্থিক ক্ষতির শিকার হবেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
বগুড়া: জেলায় সকাল থেকে কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল, আন্তঃথানা টার্মিনাল, কোচ টার্মিনাল থেকে কোন যানবাহন বের হয়নি। যানবাহন না পেয়ে বিকল্প পথে অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত ভ্যান রিক্সায় করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্য যাওয়ার চেষ্টা করছেন যাত্রীরা।
বুধবার মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালে কিছু গাড়ী টার্মিনাল থেকে বের হলেও সেগুলো শেরপুর উপজেলার সীমানা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে শ্রমিকরা।
বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে ‘রয়েল ডাচ’ নামে টাঙ্গাইলগামী একটি গাড়ী রংপুর থেকে আসার পথে বগুড়ার তিনমাথায় থামে। এসময় শেরপুর ও চান্দাইকোনার কোন যাত্রী নেয়া যাবেনা বলে তারা জানান। তবে গাড়ীতে পা দিলেই ১শ টাকা দিতে হবে এমনটি হাঁকছেন বাস সুপারভাইজার।
যাত্রীরা অভিযোগ করেন, সিরাজগঞ্জ রোডে যেতে আগের দিন ৫০ টাকা নিলেও বুধবার ১শ থেকে দেড়শ টাকা নেয়া হচ্ছে। উপায় না পেয়ে যেতে হচ্ছে।
এদিকে গাড়ী চলাচল না করায় অনেকেই রেল ষ্টেশনে ভিড় করছেন। দূরের যাত্রীরা যানবাহন না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বাড়ী। অনেকেই সিএনজি চালিত অটো রিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সা ভ্যানে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
তিনমাথায় অবস্থান নেয়া বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল গফুর জানান, নতুন আইন কার্যকর হওয়ায় চালকরা গাড়ী চালাচ্ছেন না। ঢাকায় কেন্দ্রিয় কমিটির মিটিং আছে সেখানে সিদ্বান্ত হবে। সূত্র : ইউএনবি