ন্যাশনাল ডেস্ক: উত্তাল বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ২০ ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচ জেলায় নিখোঁজ রয়েছেন ১৭৪ জেলে। এদের মধ্যে ৩ জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা হলেন কক্সবাজারের মোহাম্মদ আবু তৈয়ব ও সাইফুল ইসলাম এবং নোয়াখালীর হাতিয়ার বেলাল। ট্রলারডুবির মধ্যে নাজিরটেকে ১টি, হাতিয়ায় ১টি, পিরোজপুর সদর উপজেলায় ১টি ও ইন্দুরকানীতে ৪টি, কুয়াকাটায় ১০টি, লালমোহনে ১টি, ঢালচরে ১টি এবং চরফ্যাশনে ১টি। গত শুক্রবার দুপুর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে এ ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরÑ
কক্সবাজার: গতকাল বিকেল ৫টার দিকে মহেশখালী চ্যানেল থেকে আবু তৈয়ব ও সন্ধ্যার দিকে সোনাদিয়া চ্যানেল থেকে সাইফুলের মরদেহ ভাসতে দেখেন জেলেরা। পরে স্বজনরা কোস্টগার্ডের সহায়তায় মরদেহ দুটি উদ্ধার করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোস্টগার্ড পূর্বজোনের কক্সবাজার স্টেশনের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার এম হামিদুল ইসলাম। নিহতদের বাড়ি কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। এর আগে শুক্রবার বিকেলে নাজিরটেক চ্যানেলে ডুবে যায় এফবি মায়ের দোয়া নামে একটি ফিশিং ট্রলার। ট্রলারে থাকা ১৯ জেলের মধ্যে ৮ জনকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। অন্য ট্রলারে করে ফেরেন আরও ৩ জন। বাকি নিখোঁজ ৮ জনের মধ্যে তৈয়ব ও সাইফুলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে গতকাল।
হাতিয়া (নোয়াখালী): গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে নিঝুম দ্বীপের ধমারচরের দক্ষিণে ভাসমান অবস্থায় বেলালের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত বেলাল হোসেন আমতলী গ্রামের আবুল হাশেমের ছেলে। স্থানীয়রা জানায়, গত শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সাগর থেকে ঘাটে আসার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায় ট্রলারটি। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থল থেকে দুই জেলের মরদেহ ও ১২ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরে বিকালে আরও এক জেলেকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয়রা। সবশেষ গতকাল দুপুরে নিখোঁজ বেলালের মরদেহ উদ্ধার করে। এদিকে লঘুচাপ থাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার সকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হাতিয়ার সঙ্গে দেশের সব নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। নোয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পিরোজপুর ও ইন্দুরকানী : বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ৫ ট্রলারসহ নিখোঁজ রয়েছেন ৭৫ জেলে। এর মধ্যে সদর উপজেলার শঙ্করপাশা এলাকার একটি মাছ ধরার ট্রলার ও ইন্দুরকানী উপজেলার সাউদখালী গ্রামে ৪টিসহ মোট ৫ ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে। এতে ৭৫ জন জেলে নিখোঁজ বলে জানান জেলেদের স্বজনরা। এর মধ্যে ইন্দুরকানীতে ৫৬ জেলেসহ ৪ ফিশিংবোট ৩ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। ফিশিং বোটগুলো হলোÑ ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের হেলাল মাতব্বরের এফ বি মায়ের দোয়া- ১৬১, দুলাল মাতব্বরের এফবি আব্দুল্লাহ-১, সাইফুল মাতব্বরের এফবি ভাই ভাই এবং কালাইয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের এফবি জিদনী। এ ছাড়া নিখোঁজ এফ বি ভাই ভাই-২ ফিশিং বোটটির সন্ধান পাওয়া গেছে। সেটি বর্তমানে ভারতের ওড়িষ্যা উপকূল থেকে মান্দারবুনিয়া এলাকা অতিক্রম করে বাংলাদেশে আসছে। নিখোঁজ জেলেদের স্বজনদের আহাজারিতে জেলে পল্লীর আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। গতকাল শনিবার উপজেলার ঢেপসাবুনিয়া গ্রামের জেলেপল্লীতে গিয়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার নিম্নচাপ এবং সাগর উত্তাল থাকায় ইন্দুরকানীর ৫টি ফিশিংবোট নিখোঁজ রয়েছে। এর মধ্যে গতকাল শনিবার বিকালে এ রিপোর্ট লেখার সময় নিখোঁজ এফবি ভাই ভাই-২ ফিশিং বোটটির সন্ধান পাওয়া গেছে। সেটি বর্তমানে ভারতের ওড়িষ্যা উপকূলের মান্দারবুনিয়া এলাকা অতিক্রম করে বাংলাদেশে আসছে। এ ৪টি ফিশিংবোটে থাকা ৫৪ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। তারা সবাই উপজেলার ঢেপসাবুনিয়া, সাঈদখালী এবং কালাইয়া গ্রামের বাসিন্দা। এদিকে এখনো নিখোঁজ জেলেদের খোঁজ পাওয়া না যাওয়ায় তাদের স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ ভারী হয়ে উঠছে।
পটুয়াখালী : কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে অন্তত ১৫০ জন জেলেসহ ১০টি মাছধরা ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৩৪ জেলে। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে এ ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আলীপুর-কুয়াকাটা মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা ও মহিপুর আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি রাজু আহমেদ রাজা। এদিকে প্রতিকূল আবহাওয়ার বিরাজ করায় সহস্রাধিক মাছধরা ট্রলার শিববাড়িয়া প্রতাশ্রয়ে অবস্থান করছে। সাগর থেকে ফিরে আাসা জেলেরা জানান, সাগরের অস্বাভাবিক ঢেউ এবং ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের ট্রলারগুলো ডুবে যায়। এ সময় পাশে থাকা অন্য ট্রলারের মাধ্যমে অন্তত ১১৬ জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সাগর উত্তাল থাকায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৩৪ জেলে। উদ্ধারকৃত জেলেরা কুয়াকাটা ২০ শয্যার হাসপাতাল ও মহিপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিজামপুর কোস্টগার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার সেলিম মণ্ডল জানান, সাগরে ট্রলারডুবির খবর পেয়েছি। আমাদের টহল টিম সাগরে রয়েছে এবং উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে।
চরফ্যাশন (ভোলা): বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ৩ দিন ধরে নিখোঁজ ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চরকুকরী মুকরী ইউনিয়নের ১২ জেলে। এ ছাড়া সন্ধান মিলছে না লালমোহন, ঢালচর, চরফ্যাশনের আরও ৩ ট্রলারের। তবে নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে কোস্টগার্ডের ৫ টিম সাগরে রয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানান নিখোঁজ জেলেদের পরিবার। এদিকে গভীর সমুদ্রে গিয়ে ভোলার লালমোহনের ৪টি মাছ ধরা ট্রলার ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে গেছে। এ সময় ট্রলারে থাকা প্রায় ৬০ জন মাঝিমাল্লা সমুদ্রে ডুবে যান। এদের মধ্যে ১৩ জনকে ভাসমান অবস্থায় পাশে থাকা অন্য তিনটি ট্রলার উদ্ধার করে। পরে এদের সুন্দরবন ও হাতিয়া এলাকায় নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে।
৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে গেলেও লঘুচাপের প্রভাবে দ্রুত ফিরে ১৫ দিন ধরে উপকূলের আশ্রয়ে ছিলেন জেলেরা। আবহাওয়ার উন্নতি হলে মাত্র তিন দিন আগে সাগরে যাওয়ার পর শুরু হয় বৈরী আবহাওয়া, লঘুচাপ, দেখানো হয় আবারও ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত। এতে আকস্মিক ঝড়ের কবলে পড়ে সাগরে অবস্থানরত বিপুলসংখ্যক জেলেসহ অসংখ্য মাছধরা ট্রলার।
২০ ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ ১৭৪ জেলে ৩ মরদেহ উদ্ধার
আজনিউজ২৪ :
0 Views