রাজশাহী প্রতিনিধি: বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম জানিয়েছেন, সাংবাদিকেরা অন্যায় করলে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে আইন হচ্ছে। মঙ্গলবার (১৪ জুন) রাজশাহীতে আয়োজিত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিয়ে এই তথ্য জানান তিনি।
রাজশাহী সার্কিট হাউসে ‘প্রেস কাউন্সিল আইন ও আচরণবিধি এবং তথ্য অধিকার আইন অবহিতকরণ’ বিষয়ে এই কর্মশালার আয়োজন ছিল। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় এই আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল। দিনব্যাপী এই কর্মশালায় ৪৪ জন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী অংশ নেন।
নতুন আইন সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান বলেন, নতুন এই আইনে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এক দিনের জেলের পক্ষপাতী। জেলে গেলে তার মনে হবে যে আমার কাজটা অন্যায় হয়েছিল। আর করা যাবে না। এই আইনটা কেবিনেটে আছে। আশা করছি, আগামী সংসদেই পাস হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, প্রেস কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু। তিনি সাংবাদিকদের সম্মান দিয়েছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন, সাংবাদিকেরা এমন শ্রেণির লোক যাদের জন্য তিরস্কারই বড় শাস্তি। প্রেস কাউন্সিল আইনে কোনো অন্যায় করলে বেশির ভাগ সাংবাদিককেই তিরস্কার করা হয়ে থাকে। মানি লোকের জন্য তিরস্কারই বড় শাস্তি। এটা তাদের আত্মসম্মানে বাধবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন আইন প্রয়োজন হচ্ছে।
বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম বলেন, এখন যে কেউ সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছেন। তারা মানুষকে ব্ল্যাকমেল করছেন। সাংবাদিকতার নামে ‘সাংঘাতিকতা’ চলছে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য অপমানজনক। এ কারণে সাংবাদিক কারা, তা নির্ধারণ করা যেমন জরুরি হয়ে পড়েছে, তেমনি নতুন আইনেরও দরকার হচ্ছে। আদার ব্যাপারীদের জন্য তো সাংবাদিকতা নয়। প্রকৃত সাংবাদিকদের জন্যই সাংবাদিকতা। এটাই এখন নিশ্চিত করার লক্ষ্য।
তিনি বলেন, নামীদামি অনেক পত্রিকার সম্পাদকের আত্মীয়রা সাংবাদিক পরিচয় দেন। তারা তো আসলে সাংবাদিক নন, অন্য কাজ করে বেড়ান। এ রকম কেউ সাংবাদিক হিসেবে প্রেস কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন না। আর সাংবাদিকদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে গ্র্যাজুয়েশন। তবে কারও যদি নিয়োগপত্রসহ পাঁচ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে তিনি তালিকাভুক্ত হবেন। তালিকাভুক্ত হয়েই যে যা খুশি করবেন তা হবে না। প্রত্যেকের ছয় মাস পরপর কাজকর্ম ভেরিফিকেশন করা হবে।
সাংবাদিকদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান বলেন, এই কাজটা প্রেস কাউন্সিল ও পিআইবি যৌথভাবে করছে। পিআইবি ইলেকট্রনিক এবং অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদের তালিকা করছে। আর প্রেস কাউন্সিল করবে প্রিন্ট মিডিয়ার। এ জন্য প্রতিটি প্রিন্ট পত্রিকা থেকে সাংবাদিকদের তালিকা নেওয়া হবে। তবে তালিকায় নাম থাকলেই সাংবাদিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। এটা যাচাই-বাছাই করা হবে।
কর্মশালা পরিচালনা করেন প্রেস কাউন্সিলের সচিব মো. শাহ আলম। রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবিহা সুলতানার সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আশরাফুল ইসলাম।