ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের অন্যতম হোতা সহজ ডটকমের পিয়ন মো. মিজান ঢালী ও সার্ভার অপারেটর নিউটন বিশ্বাসসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রাজধানীর কমলাপুর ও সবুজবাগ এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে যৌথভাবে তাদের গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই)।
গত বৃহস্পতিবার রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর কমলাপুর ও সবুজবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- মো. মিজান ঢালী (৪৮), নিউটন বিশ্বাস (৪০), মো. সোহেল ঢালী (৩০), মো. সুমন (৩৯), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৯), মো. শাহজালাল হোসেন (৪২), মো. রাসেল (২৪), মো. জয়নাল আবেদীন (৪৬) ও মো. সবুর হাওলাদার (৪০)।
শুক্রবার (২২ মার্চ) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানায়, তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে কালোবাজারির আলামত এবং অবৈধভাবে সংগ্রহ ও মজুত করা বিপুলসংখ্যক ট্রেনের টিকিট। ২০০৩ সালে কমলাপুর রেলস্টেশন শাখায় পিয়ন হিসেবে যোগ দেন মিজান ঢালী। পরে রেলওয়ে সিএনএস বিডির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে, অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে তাকে চাকরিতে বহাল রাখা হয়। সবশেষ ২০২০ সালে রেলওয়ে টিকিটের চুক্তি সহজকে দেওয়া হলে সেখানেও মিজানের চাকরি বহাল থাকে। অন্যদিকে নিউটন বিশ্বাস ২০১২ থেকে স্টেশন সাপোর্ট কর্মী হিসেবে কাজ করতেন, ২০১৬ সালে সিএনএস বিডিতে যোগদান করে সার্ভার অপারেটরের দায়িত্ব পান। ২০২০ সালে সহজের সঙ্গে চুক্তি হলে তার চাকরি বহাল থাকে এবং পুনরায় সার্ভার অপারেটরের দায়িত্ব পান নিউটন। মিজান ও নিউটন দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত।
কমান্ডার মঈন বলেন, ‘দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেটের মূল হোতা মিজানের নেতৃত্বে এই চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় সব ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিল। মিজান দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকায় দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের অফিসে এবং বড় স্টেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তার পরিচিতি বাড়ে। সেই সূত্র ধরেই সে বিভিন্ন স্টেশনে থাকা সহজ ডটকমের সদস্য, টিকিট কাউন্টার ও অন্য কালোবাজারি চক্রের সদস্যদের সমন্বয়ে বিপুল পরিমাণ টিকিট বিক্রি করত।’
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘সহজ ডটকমের কমলাপুর রেলস্টেশনের সার্ভার অপারেটর গ্রেপ্তার নিউটন বিশ্বাস, স্টেশন রিপ্রেজেন্টেটিভ গ্রেপ্তার সবুর হাওলাদারসহ এবং পলাতক আব্দুল মোত্তালিব, আশিকুর রহমানসহ আরও কয়েকজন টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তার মিজান ও সোহেল প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের কর্মচারী ও টিকিট কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে প্রায় ২-৩ হাজার টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে বিক্রি করত। তারা আসন্ন ঈদুল ফিতরে আগের চাইতেও বেশিসংখ্যক টিকিট সংগ্রহের পরিকল্পনা করছিল।
তিনি বলেন, আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্বীকারোক্তিসহ বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে। কালোবাজারে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুই ভাগে বিভক্ত করে ৫০ ভাগ সহজ ডটকম ও রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারম্যানরা পেত এবং বাকি অংশ সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভাগাভাগি করে নিত। এভাবে টিকিট বিক্রি করে প্রত্যেকে মাসে প্রায় ২৫ হাজার টাকা আয় করত তারা। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকতা।